somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

.........কবিগুরু আর আমি........

১৭ ই মে, ২০১০ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







এক/

আমার জীবনের প্রথম আবৃত্তি করা কবিতাটি ছিলো কবি গুরুর। তখন আমি প্রথম শ্রেনীতে পরি। আমার জন্ম সালেই প্রতিষ্ঠিত পাওয়া স্কুলটি সবে সোজা হয়ে দাড়াতে শুরু করেছিলো মাত্র। আর সে স্কুলে ভর্তি হবার তিনমাস পরই একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই কবিতা আবৃত্তি দিয়ে কবিতার সাথে আমার প্রথম পরিচয়।
সারা দুপুর মুখস্থ করেছিলাম ছুটি কবিতাটি। মঞ্চে আবৃতির সময় শেষের দু-লাইন গুলিয়ে ফেলেছিলাম; মঞ্চ জুড়ে সে,কি হাসি সাবার; আমি লজ্জায় দে,ছুট অবস্থা। বাসায় ফিরে একলা একা আবার আবৃত্তি করেছিলাম; মেঘের কোলো রোদ হেসেছে / বাদল গেছে টুটি / আজ আমাদের ছুটিও ভাই / আজ আমাদের ছুটি।

রবীন্দ্রনাথের কবিতা মনে রাখতে না পারার জন্য ছোট বেলায় খুব বকতাম তাকে। অমন কাঠখোট্টা শব্দ কেউ লিখে; তারচেয়ে গল্প মনে রাখা সহজ লাগতো। সোনারতরী কবিতা পড়বার পর মনে হলো ঠাকুরসাহেব কার্পণ্য করেনি কোথাও। ঠাকুরের প্রিয় কবিতার মাঝে হঠাৎ দেখা কবিতাটি আমাদের দলের সবার প্রিয়। আমি তেমনি সেই থিম নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম তবে ঠাকুর সাহেবকে ছোবার আস্পর্ধা আমার নেই; তাই তারে প্রণাম করি।
ছোট বেলায় মুখে আটকে গেলেও যখন বাড়ন্ত হলাম একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করলো রবিবাবুর কবিতা।

আমার প্রথম গান শোনা নিত্যান্তই অনিচ্ছাকৃত ভাবে।
ছোটবেলায় আমরা যে বাসায় থাকতাম, সে বাসার পাশেই থাকতো এক বৃদ্ধা যার ছিলো গান শোনার শখ। প্রতিদিন বিকেলে সে গান শুনতো বারান্দায় টেপ রেকর্ডার রেখে। সে বারান্দার আমরা খেলতাম। মান্না দে, সতীনাথ, অনুপ ঘোষাল আর প্রতিমার গানগুলো শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। আর এভাবেই গানের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
খুব সম্ভবত আট বছর বয়সে রবীন্দ্র সঙ্গিতের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। আমার প্রথম শোনা রবীন্দ্র সঙ্গিত ছিলো “ আলো আমার আলো” গানটি। সেদিন স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে সবাই সমস্বরে গাইেেব তারই রিহার্সেল হচ্ছিল। আমি বললাম আমিও গাইবো। ব্যাস আর যাও কোথায় সবে মিলে গাইতে লেগে গেলাম।

বৃষ্টির দিনগুলিতে আমরা ছড়া আবৃত্তি করতাম আর ঝাপাতাম নদীতে। স্কুলে পড়ার বয়সেই আমি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অবসরে বই পড়া আর গান শোনা; সেখানে রবীবাবুর গান থাকতোই। বন্ধুরা ক্ষেপাতো সে, কি, রে তুই তো এখনো সেকেলেই রয়ে গেলি; তুই খালি ম্যাদা মার্কা ক্ষ্যাতাপুরা গান শুনিস। আমি জোড় গলায় প্রতিবাদ করতাম। রবি বাবুর গানের কথা গুলো আমি সবে অনুভব করতে শিখেছি।

যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে;
আমি বাইবা না, আমি বাইবা না; মোর খেয়া তরী এই ঘাটে গো।
চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা মিটিয়ে দেব গো , মিটিয়ে দেব গো লেনা -দেনা
বন্ধ হবে আনা গোনা এই হাটে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে।
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।




দুই/

গল্পের বই পড়ার হাতে খড়ি হয় আমার ছ’বছর বয়সে। চয়নিকা বইয়ের যতো গল্প ছিলো তা পড়তাম। রবীন্দ্র নাথের মাষ্টার মশাই ভালো লেগে গেলো সে বয়সেই। বিত্তবানদের দলে ছিলাম না তাই বই পড়া হতো ধার-কর্যে। আমি লাইব্রেরী ঘরে দেখতাম রবিবাবুর সেই অপলক চাউনি মার্কা ছবিগুলো। অমন একটা ছবি নিজের ভাঙ্গা কুঠিরে দেখতে মনটা চাইতো।

সেবার গড়ের মাঠের মেলা থেকে সবাই কিনলো বিখ্যাত তারকা কিংবা মডেলদের ছবি। আমি কিনলাম রবীন্দ্রনাথ। সবাই মিলে সে,কি হাসি !! এই বুড়ার প্রেমে পড়লি নাকি ? আমি কিছু বলিনা। ভেতর থেকে শক্তি পাই রবীন্দ্রচরনে।
ক্লাসে একদিন সবাইকে টিচার জিজ্ঞাসিল তোমরা কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো? সবাই তটস্থ হয়ে বাবা,মা’র কথা বললো। আমি হাদারাম সেই রবি বাবুর কথা বলে দিলাম অকপটে। ক্লাসে সবার মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু হলো। টিচার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো কেন তাকে ভালোবাসো ? আমার উল্টর; আমার শত কষ্টে তার লেখা শক্তি দেয়।

দূর্গাপূজোর সময় সবাই আমরা থানকাটা কাপরের দোকান গুলোতে জমিয়েছি ভীড়। কে কার চেয়ে ভালো দামি শার্ট কিনতে পারবো। আমি চুপিসারে একপাশে সরে গিয়ে মা’র দেয়া শার্ট কেনার টাকা থেকে কিনে নিয়েছি রবি ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ। ভালো শার্ট না পড়লে দিন কাটবে কিন্তু রবিঠাকুরের লেখা মিস করলে আমার দিন কাটবে না। মনখারাপের দিনে গীতবিতানের পাতা উল্টে চুপ করে চোখ বুলাই।

কলেজ দিনের প্রেম বয়সে, কাচা প্রেমের বিরহ ভুলতে অজানায় গেয়ে উঠা সেই গানের কলি ডান হাতে চোখ মুছতে গিয়ে বলি...........

তুমি সুখ যদি নাহি পাও গো,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও।
আমি তোমারে পেয়েছি, হৃদয়ও মাঝে
আর কিছু নাহি চাই গো।

রবিঠাকুর তার নিজের মনের আল্পনার তুলি দিয়ে লিখে দিয়েছেন লক্ষ প্রেমিক-প্রেমিকার মনের মাঝে জমে থাকা কথামালা দিয়ে এই গান।
আমি সবসময় চুপসে যাওয়া ফুলের মতো নুয়ে থাকি কিন্তু মনের মঞ্চে আমি সদাই গাই .....যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।


তিন/

আমার প্রিয় প্রায় সবক’টি লেখকই রবীন্দ্রভক্ত। শরৎ,সমরেশ,সুনীল এরা সবাই রবীন্দ্র ভক্ত। আমি রবিঠাকুরের লেখা পড়লেও আমার কোন লেখায় সেরকম ছায়া আসেনা। পনের বছর বয়সে আমি নিজ থেকে নিজের জন্যই কবিতা লিখতে শুরু করি। আশ-পাশের ক’টা লিটলম্যাগে কবিতা ছাপাবার পর, উৎসাহ আসে মনে; হয়তো চেষ্টা করলে আমি পারবো।
কিন্তু ক’বছর পর আমার নিজের সে লেখা দেখে; নিজেরই খারাপ লাগে। কবিতার ক’ও হয়নি সেগুলো। অভিমানে ছেড়ে দেই লেখালেখি।
রবিঠাকুর বেঁেচে থাকলে একটা কবিতা লিখে তাকে দেখাতাম। কিন্তু হায় !! আমি কবিতা দেখাবো বলেই তিনি অন্তর্ধান করলেন।
আমি ছোটবেলায় কোনরকম হলেও ছবি আকঁতে পারতাম; কিন্তু এখন পেন্সিল আর তুলি ধরতেই জানিনা। হয়তো সেই পুরোনো ইচ্ছাটা আর জাগেনা। রবি বাবুর ছবি আকাঁ দেখে ভাবতাম যদি আমার হাতেও আঁকা যায় কোন ছবি। পরে ভেবে দেখলাম আমার দ্বারা সে কম্মটি সম্ভব নয়। সে,তো টাকাওয়ালা লোকের সন্তান ছিলো আর আমি হাভাতে।
রবি বাবুর কাদম্বীনি, শুভা কিংবা লাবন্যকে দেখতে স্বাদ হয় খুব। অমিত বাবুর কার্যকলাপ আমাদের ভেতর প্রভাব ফেললেও শেষ পর্যন্ত আমার ঘরে থাকা শেষের কবিতার একটা বইয়ে মন্তব্যের ঝড় উঠেছিলো কেন শেষ পর্যন্ত এমন করলো চক্রবর্ত্তী। নৌকাডুবি সবাই পড়েছি বাদ যায়নি কেউ। এমনি আরো না বলা কতো কথা ছিলো কবিকে নিয়ে।

মাঝরাতে ভাঙ্গা ঘুমে হাত বোলাতে আকাশের গায়; নেমে আসেন কবি আমার। আমার সেই ভাঙ্গাকুঁড়ের পাশটায় এসে থমকে যান এক মুহুর্তের জন্য।
মনে হয় আমার লেখা ছেড়া পাতায় ভুল লাইনে ভরা কবিতাগুলো রবি বাবু চুপি চুপি এসে পড়ে যায়; আর মনে মনে বলে চেষ্টা করো হয়ে যাযে রায় বাবু। পারতে পারো তুমিও একদিন।


___________________শেষ____________________

**আমি যা লিখলাম এ আমার কবি কে নিয়ে একান্ত ভাবনা**

৩৮টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×