somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিও লিবারাল বাস্তবতা ও বাংলাদেশ: পরিস্থিতি ও প্রতিরোধ/ বাধন অধিকারী

১৭ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাধন অধিকারী। তারণ্যের উন্মাদনায় বিদ্রোহ-স্বাধীনতা-সংহতির বোধ নিয়ে লিখে যাচ্ছেন রাষ্ট্র-রাজনীতি-ক্ষমতা-মিডিয়া নিয়ে। এডওয়ার্ড সাঈদ যে নিঃসঙ্গ বুদ্ধিজীবীর প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন বাধনের মাঝে আমরা তাঁর ছায়া দেখি। কর্পোরেট জাতীয় দৈনিক তাঁর লেখা ছাপলেও শেষাবধি কেউ তাঁকে হজম করতে পারেনি। বানিয়ে ফেলতে পারেনি পালিত বুদ্ধিজীবী। তাই নিয়মিত হওয়া হয়নি কোনে জাতীয় দৈনিকে।

২০০৭ সালে অগণতান্ত্রিক সেনা কর্পোরেট কর্তৃত্বের সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে যে বিদ্রোহ সংগঠিত হয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তার একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে এবং ঐ বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে অন্যায্য অগণতান্ত্রিক সরকারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি গ্রেপ্তার-রিমান্ড-নির্যাতনের প্রতিবাদে জরুরি ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেগে উঠেছিলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে বাধন অধিকারী ছিলো তার বলিষ্ঠ সংগঠকদের অন্যতম। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কর্তৃত্ব বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ প্লাটফর্মে যে মুক্ত বিম্ববিদ্যালয় আন্দোলন সংগঠিত হয় বাধন সেখানে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক এবং কর্মী। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রতিরোধ নয়, লেখায়ও প্রতিরোধ জারি রেখেছিলো বাধন তখন থেকেই। ঐ সময়টাকে ও নিও লিবারাল দুনিয়ায় বাংলাদেশের যাত্রাকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্যায় বলে অভিহিত করেছিলো । তারপর থেকে সেই কালকে বাধন নির্মোহ বিশ্লেষণ করে গেছে, যাচ্ছে।

জীবিকার তাগিদে বাধন অধিকারী কাজ নিয়েছিলো নতুন প্রকাশিত বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা "কালের কণ্ঠ"র সম্পাদনা বিভাগে। কিন্তু কর্পোরেট সংবাদ-বাণিজ্যের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেয়াটা তাঁর কাজ নয়। সেটা ও করেওনি। সম্পাদকীয় বিভাগে জারি থাকা আওয়ামী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একা ও লড়ে গেছে যতোটা পেরেছে। কিন্তু শেষাবধি লড়াই জারি রাখতে পারেনি, কিন্তু জীবিকার অনিশ্চয়তার ভয়ে থেমে যায়নি ও। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ওর আটকে যাওয়া একটা লেখা নিয়ে সুস্পষ্টভাবে সম্পাদক বরাবর ও বলেছে: ‘যে লেখাটি আমি লিখেছিলাম, তাতে একুশের চেতনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ, সাংবাদিক হিসেবে আমার নৈতিকতা আর পুরুষতান্ত্রিক অবদমনের এই যুগে একজন নারীর হাহাকারের সম্মিলন ছিলো। এমন একটি লেখা কালের কণ্ঠের পাতায় হাজির করতে না পারবার ব্যর্থতাকে সাথে নিয়েও যদি আমি কালের কণ্ঠে কাজ চালিয়ে যেতে থাকি তাহলে আমার বিবেচনায় আমি একুশের চেতনার সাথে, সমাজের সাথে, আমার নিজের সাথে এবং পুরুষতান্ত্রিক অবদমনের শিকার একটি মেয়ের সাথে অন্যায় করে ফেলি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবার।’ যদিও "কালের কণ্ঠ" কর্তৃপক্ষ এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের তথাকথিত অভিযোগে তাকে বহিস্কার করে! বাধনের বিবেচনায় এই প্রতিক ইতিবাচক। ওর ভাষায় ‘প্রমাণিত হলো আমি না, বরং কালের কণ্ঠের অগণতান্ত্রিক পরিসর আমাকে ধারণ করতে পারে না!’

লেখার জন্য আর বলার জন্য তাই ছোটকাগজ-সহ বিভিন্ন অনলাইন অল্টারনেটিভ পরিসরই বাধনের ভরসার জায়গা ছিলো সবসময়, এবং এখনও আছে। এই বিকল্প উদ্যোগগুলো বেঁচে আছে বলেই প্রতিরোধ আছে এবং বাধনের বিভিন্ন প্রতিরোধের প্রচেষ্টা মূর্ত হয়েছে। ওর লেখাগুলো সময়ের ঐতিহাসিক বিবরণ আকারে পড়তে পারি আমরা। বুঝে নিতে পারি একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক যুগপর্বে একজন ব্যক্তি কিভাবে নিজের, নিজের বন্ধুদের আর তার চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে বোঝাপড়া করে যাচ্ছে কোনোরকমের মোহ-পক্ষপাত-ক্ষমতা-স্বার্থ ছাড়া। ডান-বাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এনজিও-কর্পোরেট কোনো মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে ভালো রেজাল্টের বাসনায় কোনো শিক্ষক-প্রশাসনের চাটুকারিতা নয়; বাধন ক্ষমতার বিপরীতে নিঃসঙ্গ কর্মীর মতো করে বলে যাচ্ছে সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-মিডিয়া নিয়ে।

আমরা যারা ওর বন্ধু, তাদের দিক থেকে তাই একটা কর্তব্য অনুভব করছি, ওর অনেক লেখাকে একজায়গায় জড়ো করে প্রকাশ করবার। সেই কথা বাধনকে বলতেই ও বাণিজ্যিক প্রকাশকদের প্রতি ওর অনাগ্রহের কথা স্পষ্ট করে জানান দেয় আমাদের। ‘আমার লেখাগুলোকে এক জায়গায় করে বাণিজ্য লুটতে দিতে ইচ্ছে হয় না, ভালো হতো যদি নিজেরা করা যেতো। দাম রাখা যেতো পাঠকের নাগালে। বেশি বেশি মানুষের কাছে সেটা পৌঁছাবার সুযোগ তৈরী হতো’ ওর এই বাসনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই আমরা 'বাংলাদেশ' নামের রাষ্ট্রটির উপর পাশ্চাত্যের ‘উদার গণতন্ত্রের’ অনুদার অভিঘাত এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বাসনা ও তৎপরতা নিয়ে ওর বেশকিছু লেখা একজায়গায় করে প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েও লিখেছে বাধন, কম হলেও। সেখানেও ক্ষমতা-রাজনীতি-প্রতিরোধের খেলাগুলোকেই ধরতে চেষ্টা করেছে ও। ফেসবুকের নোটগুলোও তেমনই। প্রতিরোধ-প্রেম- সংহতির বোধ বাধনের একমাত্র ভরসার জায়গা। আমরা বাধনের সেই প্রেম আর প্রতিরোধ বাসনা থেকে উৎসারিত লেখাগুলোকে এক জায়গায় করে প্রকাশ করতে যাচ্ছি:
নিও লিবারাল বাস্তবতায় বাংলাদেশ: পরিস্থিতি ও প্রতিরোধ
শিরোনামে। আপনাকে সাথে চাই। পাশে চাই।

প্রচ্ছদঃ চারু পিন্টু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×