বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই ভারতে বাস করে। কিন্তু এই দারিদ্র্য যে কত ভয়াবহ হতে পারে, তা স্রেফ এই পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা অসম্ভব। কারণ, পরিসংখ্যান বলবে না, এই একুশ শতকেও ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে মাটি খেতে হচ্ছে কিছু মানুষকে।
ঘটনাস্থল উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ জেলা শহরের দক্ষিণে উপজাতি অধ্যুষিত গ্রাম গান্নে। গ্রামটিতে রয়েছে পাথরের খনি। খনিতে কাজ করাই এখানকার বাসিন্দাদের জীবিকা অর্জনের উপায়। খনি ঘিরে ছোট ছোট কুঁড়েঘরে কোনো রকমে মাথা গুঁজে থাকে উপজাতীয় পরিবারগুলো। আয় এত কম যে অন্য সব চাহিদা পূরণ দূরে থাক, বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্য দরকার, তা থেকেই বঞ্চিত এরা। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে কোয়ারি থেকে সংগ্রহ করা মাটি ও সিলিকা বালু পর্যন্ত খাচ্ছে তাদের কেউ কেউ!
মাটি খেয়ে তিন বছর বয়সী একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই খবরটি প্রকাশ পায়। পুনম নামের ওই শিশুটির কিডনি অকেজো হওয়ার পথে। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে মাটি খাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানার পর ওই গ্রামে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। তাঁরা বিষয়টি বাইরে প্রকাশ না করার জন্য গ্রামবাসীকে সাবধান করে দেন।
তবে এ খবর গোপন থাকেনি। অসুস্থ হওয়া শিশু পুনমের বাবা ভুল্লির মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়। ভুল্লি উদাস ভঙ্গিতে বলেন, ‘কী বলব, আমরা তো ভালোমতো খেতেই পারি না। পুনমের জন্য ওষুধ কিনব কীভাবে?...আমাদের গ্রামে সরকারের সাহায্য দরকার।’
ভুল্লির মতো গান্নে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষেরই প্রধান কাজ কোয়ারি থেকে পাথর সংগ্রহ করে গাড়িতে তুলে দেওয়া। পাঁচজন মিলে আট ঘণ্টা কাজ করে এক গাড়ি পাথর বোঝাই করতে পারেন তাঁরা।
গ্রামের আরেক নারী ফুলকারিও জানান, তাঁর সন্তান সুরুজ মাটি খায়। ফুলকারি বলেন, ‘আমরা কী করব? ক্ষুধা লাগলেই খনি থেকে মাটি নিয়ে তা খেয়ে নিই। আমরা সাধারণত দিনে একবেলা খাই। গত রাতে কোনো খাবার ছিল না। তাই না খেয়েই রাত কাটিয়েছি।’
খাদ্যসংকটের কারণে রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন সময় গরিব ও অধিকারকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
‘খাদ্য অধিকার’ নামের একটি আন্দোলনের সমন্বয়ক কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে জিডিপির মাত্র এক দশমিক দুই শতাংশ ব্যয় করে একটি পদ্ধতি দাঁড় করাতে হবে। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ব্যাপার। সরকার কোন খাতে টাকা ব্যয় করবে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা ঠিক করতে হবে।
ভারত এখন বিশ্বের প্রধান কয়েকটি উঠতি আর্থিক পরাশক্তির একটি হলেও সেখানে আরও অনেক দেশের মতোই ধনী-গরিবের বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন।
ক্ষুধার জ্বালায় মাটিই খাদ্য!- কথায় কথায় যারা দাদা বাবুদের গুনগান করেন---
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন