somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিএনজি চালকের সততা

১৬ ই মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিএনজি চালকের সততা

সিএনজি অটোরিক্সায় যাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তারা স্বভাবতই সিনএনজি চালকদের উপর মহা বিরক্ত। তাদের স্বৈরাচারী ও লাপরোয়া মনোভাব, মিটারে যেতে না চাওয়া এমন কি ১০/২০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার কথা বললেও যেতে না চাওয়া উল্টোদিকে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া আদায় করায় যাত্রীরা যেন তাদের হাতে রীতিমত জিম্মি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কি একবার এই সিএনজিতেই ছিনতাইকারীর হাতেও পড়েছি একবার। কিছু করার নেই। অপ্রতুল পাবলিক বাস, অস্বাভাবিক ভীড়, অনিয়মিত সিডিয়্যুল ও কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাস ধরার ঝক্কি পোহানের চাইতে ভাড়া যথেষ্ট বেশী হলেও সিএনজি বেছে নিতে হয়। অগত্যা যাতায়াতের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সিএনজি আমার অন্যতম ভরষা।

সকাল ১১টার দিকে মোহারম্মদপুর থানায় যেতে হলো একজনের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নেবার জন্য। আমার হাতে একটা হ্যান্ড ব্যাগ। সেই ব্যাগে আমার এসএলআর ক্যামেরা, এনার্জি সেভিং দুটো বাল্ব এবং আরো কিছু জরুরী কাগজপত্র। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটটা নিয়ে সেটাও ব্যাগে রেখে দিলাম। অতঃপর লালমাটিয়ার “লীড কম্পিউটারর্স” থেকে আমার পুরোনো পিসি যা সার্ভিসিং করতে দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে রিক্সায় করে মোহাম্মদপুর টাউন হলে এলাম একটা সি্‌এনজি করে বাসায় ফিরবো বলে। তখন প্রায় সাড়ে ১২টা বাজে। অনেকগুলো সিএনজি চালককে জিজ্ঞেস করলাম কেউ বনানী আসতে চায়না। যাও দু’একটা আসতে রাজী হলো তারা ৮০ টাকার ভাড়া (যা মিটারে ৬০ টাকার বেশী ওঠেনা) ১৫০ টাকা/১২০ টাকার নীচে কিছুতেই আসবেনা। আমিও নাছোরবান্দা অত টাকা ভাড়া দিয়ে কক্ষনো সিএনজিতে আসবোনা, আর যদি ঐ ভাড়াতে আসতেই হয় তবে ট্যাক্সি ক্যাবে আসবো, সিএনজিতে নয়।

এদিকে রোদের তাপ যেন বাড়ছেই। প্রচন্ড গরমে দাঁড়িয়ে থাকতেও অস্বস্তি লাগছে। তবুও ভাড়ার কাছে আমি আপোষ করতে রাজী নই। যাই হোক অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন সিএনজি চালক ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই ১০০ টাকা চাইলো। আমি ৮০ টাকা বলায় রাজী হলোনা। বললো এর কমে কেউ যাবেনা। কথাটা সত্যি মনে হলো। আমি রাজী হয়ে গেলাম। সিএনজি চালককে যথেষ্ট ভদ্র মনে হলো। গতকাল দেশ থেকে ফিরেছে। তার দেশেও গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। এই গরমের ভেতরেও রাতে নাকি বেশ ঠান্ডা ছিল তার দেশের বাড়ীতে। একটু শীত শীত ভাব ছিল। অথচ আজ দেশের বাড়ী থেকে ফিরেই দেখছে ঢাকায় প্রচন্ড গরম। গাছ কেটে ফেলার কথাও বললো। দেশের বাড়ীতে গাছের ছায়া আছে বলেই অনেক ঠান্ডা পরিবেশ। ঢাকার রাজপথ ছায়াবিহীন তাই এতো গরম। অবশেষে বাসায় পৌঁছুলাম। পিসিটা নিয়ে নেমে গেলাম বাসায় ব্যাগটা তার সিএনজিতেই রয়ে গেল সেটা আর আমার মনে ছিলনা। বাসায় ফেরার পরেও মনে হয়নি আমি ক্যামেরা ও জরুরী কাগজপত্রসহ ব্যাগ সিএনজিতে রেখেই চলে এসেছি।

বাসায় এসে আবারো গোছল করলাম। দুপুরের খাবার খেলাম। ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছি এমন সময় বাসার দারোয়ান এসে জানালো এক সিএনজি চালক আমাকে নীচে ডাকছে। আমি কিছুটা অবাক হয়ে নীচে নামলাম। স্মরণ করলাম ওকে কি ভাড়া দেইনি! পরে মনে পড়লো আরে আমার ব্যাগ! নিশ্চয়ই আমার ব্যাগ ফেলে রেখে গেছি। সিএনজি চালককে বললাম আমি মনে হয় নীল রঙের একটা ব্যাগ ফেলে গেছি। সে বললো দেখেনতো এই ব্যাগটা সম্ভবত আপনার। আমি দেখলাম আসলেই আমার ব্যাগ। পরে সে জানালো, আমাকে বনানী নামিয়ে ভাসির্টির এক মেয়ে প্যাসেঞ্জার নিয়ে আবার মোহাম্মাদপুর ফেরার সময় হঠাৎ সিটের পেছনে মেয়েটা ব্যাগটা দেখতে পায়। পরে চালককে বলে, মামা কে যেন একটা ব্যাগ ফেলে গেছে। সিএনজি চালক বুঝতে পারে সেটা সম্ভবত আমারই ব্যাগ। সে মেয়েটাকে নামিয়ে আবার আমার বাসায় ফিরে আসে এবং ব্যাগটা আমার হাতে তুলে দেয়। আমি মনে মনে ভাবলাম সিএনজি চালকেরদের যতই গালমন্দ করিনা কেন এখনো ওদের মধ্যে কিছু ভাল মানুষ রয়ে গেছে। ওদের এই সততার মূল্যায়ন আমি কিভাবে করবো। আমি ১০০ টাকা ওর হাতে দিয়ে বললাম আমার ব্যাগটা পৌঁছে দেবার ভাড়া। সে খুশী মনে টাকাটা নিল। আমিও আমার ব্যাগ ফেরৎ পেয়ে খুব খুশী হলাম। কারণ ব্যাগে ক্যামেরা ছাড়াও জরুরী কিছু কাগজ ছিল যা সত্যিই খুব দরকারি। নইলে সেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নেবার জন্য আমাকে আবারো মোহাম্মদপুর থানায় দৌড়াতে হতো। ধন্যবাদ আপনাকে নাম না জানা সিএনজি চালক।
৪১টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×