somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলতি বোরো মৌসুম : কৃষক কতটুকু লাভবান?

১৬ ই মে, ২০১০ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের বিভিন্ন জেলায় মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসলের দোল খাওয়ার পাশাপাশি বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর চৈত্রের মাঝামাঝির দিকে আগাম বোরোধান কাটা শুরু হলেও বৈশাখের প্রথম থেকে শুরু হয় বাজারে বেচাকেনা। কোনো অঞ্চলে মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ বিক্রি হলেও আবার কোনো কোনো অঞ্চলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাজারেও চলে এসেছে বোরোর নতুন চাল। চালভেদে ৩৭ টাকা ৫১ পয়সা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২৮ টাকা ৮০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। তবে ভরা মৌসুম শুরু হলে চালের দাম আরো কমবে বলে জানান চাল ব্যবসায়ীরা।
এ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন একটা ফলন বিপর্যয়ে ছোবল বসাতে পারেনি। তবে কিছুদিন আগে পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলের সহস্রাধিক কৃষক পাহাড়ি ঢল থেকে জমিকে রক্ষা করতে বাঁধ দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। তারা জমির ধান কাটার সময়টুকু পায়নি। এদিকে হাওরের উঁচু অঞ্চলের বোরো চলে এসেছে আশুগঞ্জের মোকামে। ব্যাপারীরা জানান, বৈশাখের শুরু থেকেই আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন জাতের ধান। এর মধ্যে বিরি-২৮ই বেশি। ধান কিছুটা ভেজা, শুকনো, চিটা হলে তা মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আর চিকন মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা।
বোরো মৌসুমের শুরুতে বীজধানের সংকট দেখা দিলেও কৃষক ও সরকার তার সাধ্যমত চেষ্টা করছেন সে সংকট নিরসনের। এবার বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর থাকলেও বীজতলা হয় ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাত ৩৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর, হাইব্রিড ১০ লাখ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের বোরো ৫০ হাজার হেক্টর। বীজতলার নানা সমস্যা নিয়ে এবার বোরো মৌসুম যাত্রা শুরু করলেও মাঠে মাঠে যখন বোরোর গোছা রোপণ চলছে তখন বৈরি জলবায়ু আরেক ধাক্কা দিয়ে গেল সারা দেশের কৃষকের উপর। এরপর খরার কারণে অতিরিক্ত সেচ, ভেজাল সার ও কীটনাশক, বিদ্যুতের ঘাটতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বোরো উৎপাদন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
বোরোর উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ২৫ ভাগ চলে যাচ্ছে সেচ মালিকদের ঘরে। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ ভাগও নেয়া হচ্ছে। বোরো চাষে সেচের জন্য সরকার বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর ভর্তুকি দিলেও শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ নানা অঞ্চলের চাষিরা এ সুবিধা পাচ্ছে না। লক্ষ্মীপুরের একজন কৃষক জানান, একরপ্রতি এই এলাকায় ১০০ মণ ধান উৎপাদিত হলে তার ২৫ থেকে ৩০ ভাগ সেচ মালিকদের দিতে হয়। যার বাজারমূল্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। হিসেব করলে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত কৃষক তার উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না।
গত বছরের চেয়ে এ বছর বোরোধানে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। নড়াইলের লস্করপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষি মোস্তফা কামাল জানান, অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে বেশি সেচ দিতে হয়েছে। এতে অনেক সময় দেখা গেছে বিদ্যুত নেই। সেক্ষেত্রে জিজেল দিয়ে স্যালো মেশিন চালাতে গিয়ে খরচ পড়েছে বেশি। আবার গতবছর বোরোর জমিতে যে শ্রমিক দিনপ্রতি ১৪০ টাকা নিত সে এবার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছে। খরার কারণে এ বছর উৎপাদন গতবছরের তুলনায় কম হয়েছে। ধানে চিটা হয়েছে। গতবছর একবিঘা জমিতে ৪০ মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা আর এ বছর খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকার বেশি। বর্তমান বাজারে ধানের বিক্রয়মূল্য মণপ্রতি ৬৩০ টাকা থেকে ৬৪০টাকা।
কিছুদিন আগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‌২০০৯-১০ অর্থ-বছরে ‘বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন : করণীয় ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের নিজস্ব গবেষণাপত্র প্রকাশ করে সরকারের কাছে সুপারিশমালা পেশ করেছিল। তাতে ধান ও চালের আগাম ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিল তারা। তখন সম্ভাব্য গড় খরচ হিসেবে সিপিডি দেখিয়েছিল, এবার প্রতি কেজি বোরো ধানে ১১ টাকা ৪৩ পয়সা ও চাল উৎপাদনে ১৮ টাকা ২২ পয়সা খরচ হবে। এ হিসেবে সরকারিভাবে ধান ও চালের কেজিপ্রতি সম্ভাব্য ক্রয়মূল্য যথাক্রমে ১৫ টাকা ও ২৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবমতে, এ বছর প্রতিকেজি চালের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ২১ টাকা ৬৫ পয়সা যা গত বছর ছিল ২১ টাকা ১৬ পয়সা। ধান উৎপাদনের খরচ প্রতিকেজি ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা হলেও গত বছর ছিল ১৩ টাকা ২১ পয়সা। গত ২০ এপ্রিল সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় আরো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, আগামী ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের বেরো সংগ্রহ অভিযান চলবে। এই অভিযানে চালের আকারে সব মিলিয়ে সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ লাখ টন। সরকার প্রতিকেজি চাল ২৫ টাকা যা গত বছর ছিল ২২ টাকা এবং ধান ১৭ টাকা যা গতবছর ছিল ১৪ দরে কিনবে। সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “খাদ্যমূল্য আমাদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর। দাম একটু বেশি হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। আবার দাম কমে গেলে কৃষক ন্যায্যমূল পান না। তাই আলাপ-আলোচনা করে আমরা এ মূল্য ধরেছি। তবে প্রয়োজনে মূল্য পুননির্ধারণ করা হবে। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ফসলের সঠিকমূল্য পান সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আছে।”
গতবছরের তুলনায় এবার ক্রয়মূল্য বেশি ধরা হয়েছে কারণ উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। নতুন ক্রয়মূল্যের কারণে কৃষকরা চালের ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং দানে ২৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ লাভ পাবে। চাল কেনা হবে বিভিন্ন মিল মালিকদের কাছ থেকে। তবে এখানে খাদ্য অধিদপ্তর নিয়ম বেঁধে দিয়েছে যে, চাল কল মালিকদের অবশ্য ৪০ ভাগ ধান সরাসরি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কিনতে হবে।
দেশে মোট ধানী জমির শতকরা ৪১ ভাগ জমিতে বোরোধান চাষ হয়। ধান উৎপাদন হয় ৫৬ ভাগ জমিতে। ৫ বছর ধরে সরকারি সংগ্রহের ৯২ শতাংশ এসেছে বোরো মৌসুম থেকে। চলতি বছর ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে বোরোধানের উৎপাদন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার সম্ভবনা আছে। এ বছর সারের দাম কম, ডিজেলে ভর্তুকি বৃদ্ধি, সরাসরি কৃষকের হাতে অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন কারণে বোরোর উৎপাদন বাড়বে। বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৯০ লাখ টন আর সরকার কৃষক পর্যায় থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে কিনবে ১২ লাখ টন। বাকি ধান-চালে কৃষক যে ন্যায্যমূল্য পাবে তার নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১০ সকাল ১১:৫৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×