somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি কথা : খরগোশ কাহিনী ১

১৫ ই মে, ২০১০ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খরগোশ কাহিনী ১

ক্লাস নাইনে পড়তাম। আগের পোষ্টই বলেছি যে প্রাণীর প্রতি আমার বেশ দুর্বলতা ছিল। হঠাৎ
মাথায় এলো যে খরগোশ পুষবো, যেই বলা সেই কাজ- চট্টগ্রাম রিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে
দেখেশুনে একটা খরগোশ কিনলাম। কেনার সময় দোকানী বল্লো যে- খরগোশটা শেম্পু দিয়ে ভালো
করে গোসল করাবেন আহলে দেখবেন আরো বেশি সুন্দর হয়ে গেছে। বাচ্চা একটা খরগোশ কিনলাম।বাসায় এনে চিন্তা হলো যে রাখবো কোথায়। পরে আপাতত কয়েক দিনের জন্য আমার বাটা জুতোর বাক্সের মধ্যেই রাখলাম। পরদিন সকালে শেম্পু দিয়ে গোসল করালাম। গোসলের পরে দেখছি খরগোশ আশি বছরের বুড়োর মত কাঁপছে। সবাই বলছে এমন শীতের মধ্যে এই বাচ্চাটাকে কেন যে গোসল করাতে গেলি? এতো মরে যাবে। আমি তাড়াতাড়ি রোদ খুঁজে বের করে রোদ পেহাতে দিলাম। খরগোশটার এমন কাঁপুনি দেখে আমি ভেবেছিলাম যে আসলেই হয়ত মারা যাবে। মনে মনে যথেষ্ট শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। পরে ঘন্টা দুয়েক পর আস্তে আস্তে আমার খরগোশটা ভালো হতে লাগলো। ভরসা পেলাম। খুব মজা পাচ্ছিলাম খরগোশ পালতে পেরে। স্কুলে যাওয়ার আগে ঘাস এনে দিয়ে যেতাম আবার স্কুল থেকে এসে প্রধান ডিউটি ছিল খরগোশ চড়ানো। এ ফাঁকে একটা কথা মনে পড়ল- খরগোশ চড়ানোর দরুন খুব মজা করে আড্ডা দিতে পারতাম নিচ তলার সমবয়সি মেয়েটার সাথে। খরগোসের সুবাধে
মেয়েটার সাথে অনেক মজার সময় কাটাতে পারতাম। যাক মেয়ে কাহিনী বাদ খরগোশ কাহিনীতে যাই....খরগোশটা নিয়ে ভারি সমস্যায় পড়তে হল কয়েক দিনের মধ্যে। রাতে পেশাব করে সব ভিজিয়ে ফেলে।প্রতিদিন সকালে উঠে ঘর মুছতে হয় আমার। হাগু পরিস্কার করতে হয় ,ভীষণ ঝামেলা । সবচেয়ে বড়সমস্যা হল আমার মায়ের সুচিবায়ু আছে উনি এগুলো পছন্দ করেন না। আরো ঝামেলা হল ও দৌড়ে পাশের ফ্লাটগুলেতে চলে যেতো সুতরাং তাদের নানা রকম কটু কথা শুনতে হত। একদিন রাতের কথা -- আমি পাশের বাসা থেকে এসে দেখি আমার খরগোশ নেই!!! আমি হতবাক!! শুনলাম খরগোশ বাসা থেকে বেড়িয়ে ঘরের এদিক সেদিক ঘুড়ে ঘর নোংড়া করেছে। তাই আমার মা রাগে এক লাথি দিয়ে নিচে ফেলি দিয়েছে। একথা শুনে আমি দৌড়ে নিচে গেলাম। দেখলাম ও আপরাধির মত সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের ভয়ে সে ঘরে আসতে পারছেনা। আমাকে দেখেই লাফিয়ে আমার কোলে এসে পড়ল। আমি পরম আদরে ওকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসলাম। অভয় দিলাম আমি আছি তোর ভয় নেই।
এভাবেই একের পর এক নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হল আমার। তখন গ্রাম এর বাড়ি খুব মিস করতাম। কারন নিজেদের বাড়িতে যথেষ্ট জায়গা থাকায় ওকে নিয়ে আমার চিন্তার কারণ থাকতনা । তো পরে অনেক কষ্টে নিজের মনকে বেঁধে খরগোশটা একজনকে দিয়ে দিলাম। ওনার সাথে দেখা হলেই আমার খরগোশটার কুশল জিজ্ঞেস করতাম। মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেতাম।
অনেক দিন পরে ঐ লোকের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করি- কেমন আছে আমার খরগোশটা?
সে আমায় হতাশ করে বল্লো- “আমার ভাগিনা খেলা করছিল খরগোশটা নিয়ে, হঠাৎ কোত্থেকে এক কুকুর এসে খরগোশটাকে এক কামড় বসিয়ে দিল। পরে আমি ডাক্তার এর কাছে নিয়ে ‘এ টি এস’ মেরে আনলাম।’’
আমি বল্লাম- তারপর?!!!!!!!
উনি বল্লেন- তারপরও খরগোশটাকে বাঁচাতে পারলামনা।
আমার মনে হল আমার অতী আপন কেউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । আমি আর কিছুই সেদিন বলতে পারিনি। কখন যে আমার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিল তা আমি বুঝতেও পারিনি।বাসায় এসে মাকে খবরটা দিলাম- বল্লাম মা তুমিতো বেশ খুশি হয়েছ না? তোমাকে আর খরগোশটা জ্বালাতন করবেনা....!!!
দেখলাম মা নির্বাক -- কি যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলান । মার চোখদুটো জলে ছল ছল করছিল...চোখের পাতা বুজলেই দু'ফোটা অশ্র“ মায়ের শাড়ি ভিজিয়ে দিত কিন্তু তার আগেই আমার মা আমার সামনে থেকে উঠে তাঁর রুমে চলে গেলেন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×