somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফিম যুদ্ধ এবং আমাদের প্রতিদিনের যুদ্ধ

১৩ ই মে, ২০১০ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে নেশা একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। নাগরিক জীবনের ঘরে ঘরে আজ মাদক সমস্যা। জেলা শহর ছাড়িয়ে আজ প্রত্যন্ত গ্রামেও মাদকের থাবা। এই সমস্যা আমরা চোখ-কান বুঁজে সয়ে যাচ্ছি। কারও ঘরের শান্তশিষ্ট সুবোধ ছেলেটি, কারো প্রিয় ভাইটি চোখের সামনে নেশার জগতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিশোর-তরুণরা নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্ত্রী নির্যাতন, পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন অহরহ ঘটছে। মাদকাসক্ত হওয়ার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মাদকে বিপর্যস্ত পরিবার সব দেখেশুনেও উটের মত বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে। কিছুই করতে পারছে না শুধু চেয়ে দেখা ছাড়া।

গতকাল আমার অফিসে বসে আছি। গবেষণা সহকারী সোহেলকে এক কাজের দায়িত্ব দিয়ে নীলক্ষেত পাঠিয়েছি। আরেক সহকারীকে দুপুরের লাঞ্চের জন্য ছুটি দিয়েছি। অফিসে আমি এবং মইন। দুপুর ১.৪০ বাজে তখন। আমার নিজস্ব ল্যাপটপ ছাড়াও আরও দুটি ল্যাপটপ আছে অফিসে। এর একটিতে যখন যার প্রয়োজন হয় জরুরী কাজ করে এবং আমার রূমে এনে রাখে।

ভোজবাজির মতো করে আমার দ্বিতীয় ল্যাপটপটি উধাও। আমার উপস্থিতিতে এসময়ে মইন ব্যতীত অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিল না। নিবিষ্ট মনে কাজ করার সময় এক ফাঁকে ল্যাপটপটি সরিয়ে ফেলেছে। অন্য কাউকে দিয়ে পেছনের রূম দিয়ে পাচার করেছে। যেহেতু একমাত্র সেই অফিসে উপস্থিত ছিল সুতরাং অন্য কারও উপর সন্দেহ আসার প্রশ্নই উঠে না।

কিন্তু ভয়াবহ মাদকাসক্ত এই ছেলেটি কিছুতেই স্বীকার করছে না যে সে ল্যাপটপটি সরিয়েছে। তার একমাত্র যুক্তি 'আপনি দেখেছেন কিনা?'
মাদকাসক্ত এই ছেলেটি আমার আত্মীয়ও বটে। ভেবেছিলাম কাজে কর্মে ব্যস্ত থাকলে মাদক থেকে দূরে থাকবে। অতীত ইতিহাস জেনেই আমি তাকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু মাদক তাকে এ পর্যায় নিয়েছে যে সে সমস্ত বিচার বুদ্ধি বিবেক হারিয়ে অফিসের ল্যাপটপটি চুরি করেছে। মাদকাসক্তিই তাকে এ কাজে প্ররোচিত করেছে।

ওর বাবা, বড় ভাইকে ডেকে আনলাম। বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তায় সবাই বুঝতে পারছে যে চুরিটি সেই করেছে। পুলিশে দিতে চাইলাম। ওর বাবা কাকুতি মিনতি করল। ক্ষতিপূরণ করবে বলেও রাজী হল। কিন্তু ছেলেকে প্রশ্রয় দেওয়ায় সমাজে যে আরেকটি বিষফোঁড়া বেড়ে উঠছে তার কি হবে? আমার একটি ক্ষতি হলো। এই ক্ষতি হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবো কিন্তু এরকম শত শত মইনের কারণে দেশ ও সমাজের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তার কি হবে?
============================================
১৮৩৯ থেকে ১৮৪১ পর্যন্ত বৃটেন চীনে একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসে এটি আফিম যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। একচেটিয়া আফিম বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে রেখে চীনের যুবসমাজকে আফিমে বুঁদ করে রাখার জন্যই এই যুদ্ধ। বৃ‍‍টেন চিন কে শোষণ করার জন্য আফিমকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল। একটি দেশকে পদানত রাখতে তার যুবসমাজকে আফিমের নেশায় বুঁদ করিয়ে রাখলেই কেল্লা ফতে।

আমাদের দেশের কিশোর-তরুণ-যুবসমাজ আজ নেশা নামক ভয়ংকর এক আফিম জগতে প্রবেশ করেছে। এই জগতে আছে শুধু ফ্যান্টাসী। কিশোর-তরুণ-যুব সমাজ এই নেশায় বুঁদ হয়ে কর্ম অক্ষম হয়ে পড়ছে। আমাদের উপর আফিম যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কোন স্বার্থান্বেষী আন্তর্জাতিক চক্র আমাদের উপর আফিম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে এই আফিম যুদ্ধকে লালন করছে আমাদের কলুষিত সন্ত্রাসী রাজনৈতিক গোষ্ঠী।
ভারত, বার্মা থেকে আসছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা, পাকিস্তান-আফগানিস্তান থেকে আসছে হেরোইন, কোকেন, আফিম আর জঙ্গীবাদ। হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজ মাদককে বেছে নিচ্ছে। ভুলের চারপাশে ঘুরতে থাকা যুব সমাজ জঙ্গীবাদকে বেছে নিচ্ছে। কিন্তু কেউই সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছে না।

হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজকে আরও স্থবির করে দেওয়ার জন্য যে কোন মাদক এখন সহজলভ্য। উপরে বসে যারা ক্ষমতা ভোগ করছেন এবং টাকা বানাচ্ছেন তারা এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। তাতে ধ্বংস হচ্ছে দেশ-জাতি-সমাজ। ঘরে ঘরে আজ মাদকের ভয়াবহতা। ঘরে ঘরে আজ আফিম যুদ্ধ। আমরা কি এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো?

----------------------------------------------------------------------------------
আগামীকাল ১৪ মে ২০১০, শুক্রবার বিকাল ৪.০০ টায় অনুষ্ঠিতব্য সেমিনারে আমরা মাদক নিয়েও একটি উন্মুক্ত আলোচনা রেখেছি। আপনারা সেমিনারে সবাই আমন্ত্রিত।
সেমিনারঃ ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং আপনার সন্তান। সবার প্রতি আমন্ত্রণ পত্র।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১০ দুপুর ২:৪৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×