somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বছরে ৩‘শ কোটি টাকার কাগজী লেবু উৎপাদন ঃ এখন কোটি টাকার কাগজী লেবুর হাট শ্রীমঙ্গল

১৩ ই মে, ২০১০ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার লেবু বিক্রয় করা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের হাটে। বছরে ৩‘শ কোটি কোটির টাকার অধিক মূল্যের কাগজী লেবু দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় কাগজী লেবু চাষের প্রতি চাষীদের উৎসাহ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেট বিভাগের বানিজ্যিক কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে এখন কাগজী লেবুর ব্যাপক সমারোহ। এখান থেকে কোটি কোটি কাগজী লেবু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন প্রসাধনী ও কেমিকেল কোম্পানী গুলো কিনে নিচ্ছে কাগজী লেবু। তাছাড়া বেভারেজ কোম্পানীও লেমন কোল্ড ড্রিঙ্কস এর জন্য বিপুল পরিমান কাগজী লেবু ক্রয় করছে। এখন কাগজী লেবুর ভর মৌসুম হওয়ায় লেবুর দাম কিছুটা কম হলেও প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার লেবু বেচা কেনা হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন বাগান থেকে উৎপাদিত কাগজী লেবু দেশের বাইরে রপ্তানী করা হয়। ফলে বিপুল সরকারের পরিমান রাজস্ব আয় হচ্ছে। বৃহত্তর সিলেট দেশের উন্নয়নশীল জেলার মধ্যে অন্যতম এবং সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার্জনের কেন্দ্রস্থল। বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে সারা বছরেই কাগজী লেবু উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার অধিক কাগজী লেবু দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে রপ্তানী করা হয়। দেশের চা শিল্পাঞ্চল মৌলভীবাজার জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল চায়ের পরেই কাগজী লেবুর স্থান। টিলা ও সমতল ভুমিতে কাগজী লেবুর বাগান দিগন্ত বি¯তৃত। উচু-নীচু পাহাড়ী টিলা, পাহাড়ের ঢালু, ফসলী জমির মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনাসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কাগজী লেবুর বাগান। আদিকাল থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির লেবুর চাষ কম-বেশী হলেও বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হয় সত্তরের দশক থেকে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, চুনারুঘাট উপজেলায় কাগজী লেবুর ব্যাপক চাষাবাদ করা হচ্ছে। তবে শ্রীমঙ্গলেই এর চাষাবাদ বেশী হয়ে থাকে। যা অন্যান্য অঞ্চলের উৎপাদিত কাগজী লেবুর চেয়ে স্বাদ, গন্ধ ও সাইজে আলাদা। লাভজনক হওয়াতে লেবু চাষের প্রতি চাষীদের উৎসাহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাক ঢাকা ভোর থেকে দিনভর জীপ, টেম্পু, ট্রাক ও ঠেলা গাড়ীতে করে বিপুল পরিমান কাগজী লেবু শ্রীমঙ্গলের বাজারে আসছে। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত কাগজী লেবু ছাড়াও উন্নত মানের চায়না, জারা, এলাচি, সিডলেস লেবু উৎপাদন হয়। শুধু শ্রীমঙ্গল ও আশপাশের এলাকায় ২ হাজারেরও বেশী লেবু বাগানের উৎপাদিত কাগজীলেবু শ্রীমঙ্গলের বাজারে বেচা-কেনা হয়। বর্তমানে উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ভুমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে, তবে প্রকি বছর লেবু বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। রীতিমত প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে লেবু চাষ নিয়ে। অনেকে আনারস চাষ বাদ দিয়ে লেবু চাষের প্রতি ঝুঁেক পড়েছে। একাধিক লেবু চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় লেবু চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থা খুবই ব্যয় বহুল। বৈদ্যুতিক নলকুপের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানো হয়। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় অসংখ্য নতুন নতুন কাগজী লেবুর বাগান গড়ে উঠেছে। দেশের লেবুর চাহিদার ৯০ শতাংশ উৎপাদন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন লেবুর বাগান থেকে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ৪০ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ও সমতল ভুমিতে কাগজী লেবুর চাষাবাদ করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমানের কাগজী লেবু নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবুর চাহিদা দেশের আভ্যন্তরে যেমন রয়েছে তেমনি বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। প্রতি বছরেই লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবু রপ্তানী করা হয়ে থাকে। চট্রগ্রাম ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের পাহাড়ী এলাকায় কাগজী লেবুর চাষ করা হলেও তা শ্রীমঙ্গলের লেবুর মত উন্নত ও মানসম্পন্ন নয়।
কাগজী লেবু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য শ্রীমঙ্গলে প্রায় ৪‘শ আড়ৎ ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। আড়তদারদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, প্রতিদিন বাগান থেকে শ্রীমঙ্গলের বাজারে লেবু পরিবহনের জন্য ২ হাজার জীপ, ৮/৯ ‘শ ঠেলাগাড়ি, প্রায় এক হাজার বাইসাইকেল ব্যবহৃত হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি বাগান থেকে একটি জীপ প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার লেবু আনতে পারে। তাছাড়া ঠেলা গাড়িতে প্রতিদিন ২বার এবং বাইকেলে ২ থেকে ৩ বার লেবু বাজারে বিক্রয়ের জন্য পরিবহন করছে হরদম। শ্রীমঙ্গল নতুনবাজারের আড়তদার আব্দুল মালেকের দেওয়া তথ্যমতে শ্রীমঙ্গলের বাজারে প্রতিদিন ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার কাগজী লেবু ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। মৌসুমে এর পরিমান কিছু বৃদ্ধি পায়। তবে গড়ে প্রতি বছর ৩’শ কোটি টাকার অধিক মূল্যের লেবু বিক্রয় হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলের শীর্ষ কাগজী লেবুর বাগান মালিক ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মোঃ আহাদ মিয়া জানান, সারা বছরই কাগজী লেবুর ফলন হয়। তিনি বলেন লেবু উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেতো। যথা সময়ে ইউরিয়া সারের সঙ্কট দেখা দেয়। ফলে বাগান মালিকরা চাহিদা মত সার প্রযোগ করতে পারেন না। তিনি বলেন, কাগজী লেবুর চাষাবাদ লাভ জনক, তাই শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় কাগজী লেবু চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন লেবু বাগানের সার সমস্যা না হলে প্রতি বছরে শ্রীমঙ্গলে কমপে ৪শ’ কোটি টাকার কাগজী লেবু বেচা-কেনা সম্ভব হতো।
শ্রীমঙ্গলে ৮টি কাগজী লেবুর বাগান সরফরাজ আলী বাবুল জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় লেবু চাষ শুরু হলেও এর বিস্তার ঘটেছে কমলগঞ্জ, বাহুবল, মৌলভীবাজারসহ শ্রীমঙ্গলের আশপাশ উপজেলাগুলোতে। এসব বাগানের উৎপাদিত লেবুর বাজার শ্রীমঙ্গল। তার দেওয়া তথ্যমতে প্রায় ২ হাজারের অধিক কাগজী লেবুর বাগানের উৎপাদিত লেবু শ্রীমঙ্গলে বেচা কেনা হয়।
কাগজী লেবুর চাষাবাদ বৃদ্ধির ফলে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ছাড়াও দেশের বাইরে লেবু রপ্তানীর মাধ্যমে সরকার পাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। কাগজী লেবু দেশের বিশাল অর্থকড়ি আয়ের উৎস হিসেবে
লেবু চাষীদের সমস্যা নিরসনসহ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিকুলতা দুর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী।

৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×