মোবাইল আর হিডেন ক্যামেরায় বিপন্ন প্রেম !
প্রতারণার ফাঁদে পাহাড়ী তরুণীরা
একের পর এক প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হচ্ছে আর আতংক ছড়িয়ে পড়ছে পর্যটন শহর রাঙামাটিতে। ভালোবাসার অভিনয় করেই মূলতঃ অপরাধ ঘটাচ্ছে অপরাধীরা। স¤প্রতি রাঙামাটি শহরে বেশ কয়েকজন তরুণীর সাথে গোপন মেলোমেশার স্থির ছবি, ও ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর আতংক ছড়িয়ে পড়েছে রাঙামাটি শহরের অভিভাবকদের মধ্যে। অপকর্মের হোতারা ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি,একইসাথে তারা তা নিজেরাই মোবাইলের ব্লুট্রুথের মাধ্যমে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়ছে সংশ্লিষ্ট তরুণীরা এবং তাদের পরিবার।
প্রায় এক বছর আগে সর্বপ্রথম এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হয়ে রাঙামাটিতে চাকুরী করতে আসা এক শ্রীলংকান কর্মকর্তা চাকরী শেষে রাঙামাটি ছেড়ে যাওয়ার পর শ্রীংলকা থেকেই তার পরিচিতদের ইমেইলে একটি ভিডিও ফুটেজ এবং কিছু স্টিল ছবি পাঠায়। সেখানে রাঙামাটি শহরের কলেজগেইট এলাকার একজন চাকমা তরুণী গৃহবধুর সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের বেশ খোলামেলা দৃশ্য আছে। এই ছবি এবং ফুটেজ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে। বেকায়দায় পড়া তরুনীটি আত্মগোপনে চলে যায় সাময়িক সময়ের জন্য।
এরপর শহরের চম্পকনগর এলাকার একটি অভিজাত পরিবারের এক মেয়ের ওয়েব ক্যামেরায় নিজের পরিচিত কারো সামনে নগ্ন হওয়ার দৃশ্য সম্বলিত একটি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ধারণা করা হয়,মেয়েটি তার পরিচিত কারো সামনে নিজেকে উম্মোচন করছিলো,আর সেই দৃশ্য যে রেকর্ড হচ্ছিলো তা সে বুঝতেই পারেনি। অভিজাত পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ঘটনাটি বেশ সাড়া ফেলে শহরে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে মেয়েটির পরিবার শিক্ষিত এবং সচেতন হওয়ায় তারা ইউটিউব/ফেসবুক সহ বিভিন্ন সাইটে যোগাযোগ করে ফুটেজটি প্রচার কিছুটা বন্ধ করতে সক্ষম হয় এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
এরপর পর পর কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ বের হয় পাহাড়ী তরুণীদের । এর মধ্যে শহরের তিনটি অভিজাত পরিচারের তিন মেয়ের ফুটেজ নিয়েই আলোচনা ছিলো বেশি। এদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে যেমন আছে,তেমনি একজন অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মেয়েও আছে। আবার স্কুলপড়–য়া দুই পাহাড়ী কিশোরীর ছবি এবং ফুটেজও আছে। এইসব ফুটেজের বেশিরভাগই পাহাড়ী তরুণ তরুণীদের। তবে স¤প্রতি আবার তোলপাড় তৈরি হয় গত সপ্তাহে পরপর পাওয়া দুটি ফুটেজ নিয়ে। এই দুটি ফুটেজের তরুণীরা পাহাড়ী হলেও অপরাধীরা বাঙালী। ফলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয় ফুটেজগুলো নিয়ে। এর একটি ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণ রাঙামাটি শহরের হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা এবং ফুটেজ প্রকাশের পর ঘটনার শিকার মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা করে ছেলেটির বিরুদ্ধে বিয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগ আনে। এবং প্রথমবারের মতো এই ধরণের ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। ছেলেটি পালিয়ে গেলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। শহরের রাজবাড়ী এলাকার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটির ঘটনার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তার পুরো পরিবার। পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এই ঘটনাটির পুরো ভিডিওটি ধারণা করা হয় কলেজগেইট এলাকার মোটেল জর্জ এর একটি কক্ষে। এই প্রসঙ্গে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন শরীফ বলেন-আমরা ঘটনার প্রকৃত চিত্র বের করার জন্য তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং একই সাথে অপরাধীকে আটক করার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
একই সপ্তাহে রাঙামাটির বনরুপা এলাকার এক মোবাইল বিক্রেতার সাথে শহরের এক সুন্দরী চাকমা তরুণীর কিছু স্থির ছবি প্রকাশ পায়। শিক্ষিতা এই সুন্দরী মেয়েটিকে বখাটে এক তরুণের পটিয়ে ফেলার ঘটনায় বিস্মিত সবাই। রিজার্ভবাজার এলাকার এই মেয়েটির সাথে অপরাধ করা ছেলেটির বাসা ফরেস্ট কলোনী এলাকায়।
আবার ট্রাইবেল আদাম এলাকার এক তরুণ-তরুণীর মোটর সাইকেল সেক্স এর ফুটেজটি সাড়া ফেলে সর্বত্র। শহরের আশেপাশের কোন একটি একটি এলাকায় দুই পাহাড়ী তরুণ-তরুণীর মোটর সাইকেলের উপর খোলামেলা সেক্স এর ফুটেজটিও বেশ সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। আবার জাতিসংঘের একটি সহযোগি সংস্থায় চাকরীরত দুই পাহাড়ী সহকর্মীর ভিডিও ফুটেজ,একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ছবি,ঢাকার একটি বাসায় পাঁচজন পাহাড়ী তরুণীর ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্তের ছবি,ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত রাঙামাটির এক মারমা তরুণী মডেল এর ব্যক্তিগত জীবনের ছবি এখন হাতে হাতে।
এই প্রতিবেদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা গেছে এই মুহূর্তে অন্ততঃ পনেরে থেকে বিশটি ঘটনার স্থির ছবি বা ফুটেজ এক শ্রেণীর যুবকের হাতে হাতে আছে। এবং এইসব ফুটেজ ও ছবির একটি বড় অংশই গোপনে ধারণা করা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সম্মতির ভিত্তিতেই করা।
বছর খানেক আগে রাঙামাটির পর্যটন এলাকার একটি কটেজ থেকে পুলিশ নিষিদ্ধ ব্লু ফ্লিম্ম তৈরির সময় হাতেনাতে দুই পাহাড়ী এবং এক বাঙালী তরুণীসহ মোট এগারোজনকে গ্রেফতারও করেছিলো। কিন্তু পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে তারা মাত্র ২০০ টাকা করে দিয়ে জামিন নিয়ে চলে যায়। আবার গত সপ্তাহেই শহরের রিজার্ভবাজার এলাকার হোটেল বনানী থেকে পুলিশ এক পাহাড়ী তরুণী এবং তিন তরুণকে হাতেনাতে আটক করে।
মূলতঃ ভালোবাসা-প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের পরই শুরু হয় ব্লুট্রুথ,ফেইসবুক,ব্লগের মাধ্যমে ছবি বা ফুটেজ ছড়িয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া। আর পাহাড়ী সমাজে শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিজ্ঞানেও সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেয়েরা। তবে কেবল শিক্ষিত হলেই হবেনা,সেই সাথে মানবিক মূল্যবোধ এবং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াটাকেই জরুরী মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ান। তিনি বলেন-মোবাইল ফোন ব্যবহারের একটি নীতিমালা থাকা জরুরী আর এইসব সামাজিক অপরাধ নির্মূলে প্রশাসনিক উদ্যোগের অনেক বেশি প্রয়োজন। আর সবচে বেশি প্রয়োজন অভিভাবকদের সচেতনতা।
আর রাঙামাটির পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান বলেন- সারাদেশে মোবাইল এবং ভিডিও ক্যামেরায় যে পর্নোগ্রাফির গোপন ব্যবসা তার থেকে পার্বত্য এই শহরও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে,আমি রাঙামাটির সকল থানার ওসিদের নিয়ে এই বিষয়ে স¤প্রতি বৈঠক করলাম। ইতিমধ্যে আমরা ভিডিও ফুটেজ এবং স্থির ছবি দেখে অভিযুক্তদের সনাক্ত করেছি,তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে এই বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি অনেক বেশি জরুরী।