somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদ। নিরহংকার সদালাপী দক্ষ সংগঠক মোজাফ্ফর আহমদ ২০১২ সালের আজকের এইদিনে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুদিনে তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ।


মোজাফ্ফর আহমদ ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন । তাঁর বাবার নাম নাজির আহমেদ এবং মায়ের নাম জাহানারা বেগম। ৫ ভাই ২ বোনের মাঝে তার অবস্থান ছিলো ২য়। তাঁর বাবা নাজির আহমেদ বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে ছিলেন। মোজাফ্ফর আহমদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় 'মঠবাড়িয়া কে এম লতিফ ইনস্টিটিউশন' থেকে। ১৯৫০ সালে তিনি নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি অনার্স এবং ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স করেন। মোজাফ্ফর আহমদ অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪০ বছরেরও বেশি সময়। হরগঙ্গা কলেজে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন মোজাফফর আহমদ। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে পিএইচডি করতে যাওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র মোজাফ্ফর আহমদ ১৯৬৫ সালে আমেরিকার শিকাগো ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বব লুকাস তাঁর সহপাঠী ছিলেন। পিএইচডি শেষ করে মোজাফ্ফর আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করলেও কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন। এরপর কিছুদিন করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। যোগ দেন ইপিআইডিসিতে।


১৯৬৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মোজাফফর আহমদ। তাঁর সহধর্মিণী অধ্যাপিকা রওশন জাহান। রওশন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। সন্তানদের দেখাশোনা করতে তিনি চাকরী ছেড়ে দেন। উইমেন ফর উইমেন এর সক্রিয় সদস্য ও সাবেক সভাপতিসহ আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, গণসাক্ষরতা অভিযানের সক্রিয় সদস্যা তিনি। তাঁদের বড় ছেলে সিরাজুল আমিন আহমদ, মমতাজুল করিম ও মেয়ে সোহেলা নাজনীন।


(স্বজনদের সাথে মোজাফ্ফর আহমদ)
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন মোজাফ্ফর আহমদ। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবে। দীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।


লেখা লেখির অভ্যাস ছিলো মোজাফফর আহমদের। তাঁর লেখালেখির শুরু কবিতা, গল্প দিয়ে। এরপর অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, নির্বাচন, গণতন্ত্র এগুলো নিয়েও লিখেছেন। তাঁর লেখা ৪শ প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রকাশনায়। এছাড়াও রয়েছে ২০০ বুক রিভিউ, আছে শ'খানেক অন্যদের বইয়ের সমালোচনা। দেশ-বিদেশে তাঁর একাধিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। মাঝখানে ১৯৭৯সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত পড়িয়েছেন বোস্টন ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস্ ডিপার্টমেন্টে। এ ছাড়াও একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে।


(আত্মীয় স্বজন পরিবেষ্ঠিত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ)
দেশব্যাপী সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সংগঠন সুজন-এর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। টিআইবি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। তিনি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাপার সাথে। পরিবেশ আন্দোলনে তরুণ সমাজকে উৎসাহ দিতে ‘পরিবেশ অলিম্পিয়াড’ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন; যা বাপা’র উদ্যোগে দেশব্যাপী এখন সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমিরেটাস ড. মোজাফ্ফর আহমদ শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে সম্মানিত হন ২০০৮ সালে


মোজাফ্ফর আহমদ খ্যাতি বা ঐশ্বর্যের পেছনে ছোটেননি। তিনি ছিলেন লাজুক স্বভাবের অমায়িক মানুষ। তাঁর অনেক সহকর্মী বিদেশে চলে গেছেন; কিন্তু তিনি নিশ্চিন্ত-নিরাপদ প্রবাসজীবনের আরাম-আয়েশের লোভ ত্যাগ করে রয়ে গেছেন বাংলাদেশে। জীবনযাপনে পরিমিতির অনুশীলন তাঁকে রক্ষা করেছে অনৈতিকতার দূষণ থেকে; এবং এটাই তাঁকে শক্তি-সাহস জুগিয়েছে ক্ষমতাবানদের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বদানকারী দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ২০১২ সালের আজকের এইদিনে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত বছর ২১ মে তারিখ রাতে অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে দ্রুত ল্যাব এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে গেছেন।


আজ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। নিরহংকার সদালাপী অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×