শেষ রাতের দিকে জানালার পাশে এসে দাঁড়াই। দেখি যে তখনও দীপার ঘরের জানালায় আলো জ্বলে আছে। জানি যে, আমার মতোই এ মুহূর্তে ঘুম নেই দীপার চোখেও ...
শত যন্ত্রণা আর বিরুদ্ধ স্রোতের পাঁকে পড়ে ভালোবাসা জিনিসটা কখনোই মরে যায় না বলেই মাঝে-মাঝে আমাদের আজও দেখা হয়ে যায়। পড়ন্ত বিকেলের শহরের কোনও ধূমায়িত রেস্তোঁরায় আমরা মুখোমুখি বসে থাকি। কখনও-বা বসে থাকি হেমন্তের পাতা-ঝরা পার্কের বেঞ্চে (পার্কটা আমাদের পাড়ার খুব কাছেই ...) দীপা বরাবরই কম কথা বলে। আমিও আজকাল কেমন নীরব হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ ...
দীপা আমাকে ভালোবাসলেও আমাদের বিয়ে হবে না। ওদের মধ্যবিত্তের সংসার, অনেকগুলি ভাইবোন, আমার মতোই একটা চাকরি করে দীপা; দীপার বাবা দু-বছর আগেও পোষ্টঅফিসে চাকরি করতেন ... ভদ্রলোক এখন অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন ...
এইসমস্ত ভেবে ভেবে আমার বুকের ভিতরটা হিম হয়ে থাকে। অফিস শেষে সন্ধ্যের পর শরীরে ডিজেলের গন্ধ মেখে এলোমেলো হাঁটি রাস্তায় । আমার চারপাশে ঘুরে যায় একটা নির্বিকার অপরিচিত শহর, আর তার লাল-নীল আলো ...
অনেক রাতে বাড়ি ফিরে আসি। মা জেগে থাকে । খেয়ে নিতে বলেন । কোনওদিন খাই, কোনও দিন খাই না। মা, আজকাল আমার ওপর খুব বিরক্ত। মা, বড় ভাইয়ের ওখানে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। আমার বড় ভাই কানাডা থাকে। জানি যে, মা কানাডায় চলে গেলে আমি আরও গভীর অন্ধকার নির্জনে ডুবে যাব।
আলো নিভিয়ে ঘরটা অন্ধকার করে ফেলি। তারপর সেই অন্ধকার ঘরে সিগারেট ধরাই। আমার তখন কত কথা মনে পড়ে। দীপাদের বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশেই। দীপা একসময় আমাদের বাড়িতে আসত, এখন আর আসে না।
শেষ রাতের দিকে জানালার পাশে এসে দাঁড়াই। দেখি যে তখনও দীপার ঘরের জানালায় আলো জ্বলে আছে। জানি যে, আমার মতোই এ মুহূর্তে ঘুম নেই দীপার চোখেও ।
আর, এ ভাবেই কাটছে আমাদের অদ্ভূত জীবন ...