somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারে একা................................................................

১০ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘাড়ের পিছনটা চুলকাচ্ছে সোহেলের। পকেট থেকে ক্ষুরটা বের করে জামার কলারের ভিতরে ঢুকিয়ে বন্ধ ক্ষুর দিয়ে জায়গাটা চুলকে নেয় সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘঃশাস ছাড়ে সে। "শালা, আজকেও মেঘ করছে। গতদিন একটা ও মুরগী পাইলাম না। আজকেও মনে হয় পাব না", পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রবিউলের উদ্দেশ্যে বলে চাপা গলায়। কিছু বলে না রবিউল। ওর শরীরে টান ধরছে। এখন পুরিয়া না টানা পর্যন্ত কিছুই মাথা ঢুকবে না ওর। ছিনতাই করার জন্য এই গলিটা খুব ই ভালো। একদম বড় রাস্তার পাশেই ঘুটঘুটা অন্ধকার গলি। কিন্তু রাত হলে খুব বেশি লোক আসে না। তবুও কিছু মানুষ কে তো চলাচল করতেই হয়। তাদের দিয়েই ভালো খ্যাপ মারা যায়। এই জায়গাটা নিয়ে আরো দুইটা পার্টি ঝামেলা লাগাইছিল। কিন্তু বড় ভাই বেশি টাকা দিয়ে গলিটা নিজেই রাখছে। এক জায়গায় সবসময় একই লোক খ্যাপ দেয় না। তাহলে ধরা পড়ার রিস্ক বেশি। পুলিশরে নিয়ে ভয় নাই। পাবলিকরে নিয়েই ঝামেলা। গলিটা থেকে যতদূর চোখ যায় সাবধানে তাকায় সোহেল। "ধূর শালা, একটা মাছি ও নাই"। গতকাল খ্যাপ না পাইলেও বড় ভাই টাকা দিছে। পুরিয়াও দিছে।কিন্তু আজ আর দিবে না। পুরিয়াতে টান না দিলে সোহেল মরে যাবে, এমনই মনে হয় তার। রবিউলের অবস্থা তো আরো খারাপ।




ভাইয়ের আন্ডারে বিশটার মত ছেলে কাজ করে। ভাই নিয়মিত টাকা দেয়, নেশা ও করায়। আর কি লাগে জীবনে?, গলির মাথায় অন্ধকারে মাথা নিচু করে বসে ভাবতেছিল সোহেল। জীবন কথাটা মনে আসতেই কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যায় সোহেল। ওর বাবা সবসময় বলত, জীবনে বড় কিছু হতে হবে তোকে। সামান্য কেরানি ছিল বাবা। তাই ছেলে মেয়েদের নিয়ে ছিলো আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছিল যেদিন, সেদিন সোহেলের বাবা আনন্দে চিৎকার করে কেঁদে ফেলেছিলেন। তার ছেলে বোর্ডে মেধা তালিকায় চতুর্থ হইছে, এটা কি সত্যি? মাসের বেতনের অর্ধেক খরচ করে মিষ্টি কিনতে বের হয়ে গিয়েছিলেন বাবা।



বন্ধুদের সাথে স্কুলের মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল সোহেল। "দোস্ত, তুই তো কাঁপায় দিছস, বোর্ড স্ট্যান্ড কইরা ফেলছস! , চল এখনি সেলিব্রেট করি", বলেছিল আরমান। তারপর কখন যে বন্ধুদের সাথে পার্কের পিছনে ভাঙ্গা বাড়িতে এসে বসল সোহেল, তা টের পায় নি। তখন খুব জোরেশোরে প্রচারণা চলছে, "মাদককে না বলুন"। বন্ধুদের কথাটা বলতেই , জোরে হেসে উঠেছিল ওরা।"আরে আমরা তো শুধু একদিন একটু মজা করব। যা, তোর এত ভয় লাগলে বাসায় যায়ে ঘুমা। ভালো রেজাল্ট কইরা ভাব ধইরা ফেলছস"। আত্বসম্মানে লেগেছিল সোহেলের। তাই শাকিলের হাত থেকে গাঁজা ভরা সিগারেট টা নিয়ে টান দিয়েছিল সবার আগেই। সেদিন ই বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গেছিল। কেউ কিছু বলে নি। ভেবেছিল ,এখন তো ছেলে ঘুরে-বেড়াবেই। কলেজে ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের ভিতরই পুরোপুরি ঢুকে গেলো ও অন্য জগতে। বাসায়, সবার আগে বাবাই টের পেয়েছিলেন। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম ওকে বুঝিয়ে, হাতে টাকা না দিয়ে ভালো করার চেষ্টা করছিল সবাই। লাভ হয় নি। বড় আপার স্কলারশিপের টাকা চুরি দিয়ে শুরু, এরপর মায়ের চুড়ি বিক্রি করতেও বাঁধে নি ওর। তখন ও জ্ঞাণ শূন্য। পুরিয়ায় টান না দিলে বেঁচে থাকা অসম্ভব। সঞ্চয়ের শেষ টাকাটা দিয়ে বাবা ওকে ভর্তি করিয়েছিল নিরাময় কেন্দ্রে। সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিল। "তুই আর আমার ছেলে না। তুই এখন রাস্তার কুকুর। আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা।", একটুও উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা গলায় কথাগুলো বলেছিল বাবা।



ঝিমাতে ঝিমাতে অনেক আগে হারান সময়ের কথা ভাবছিল সোহেল। "আইতাছে", চাপা গলায় বলে রবিউল। ওর চোখে অদ্ভুত হিংস্রতা। ক্ষুর ধরা হাতটা কাঁপছে ওর। রবিউলটা আর বেশিদিন বাঁচেবে না। দিনে কম করে হলেও বারোটা টানে ও। কয়দিন পরে পরে যে ভাত খায় তা নিজেও জানে না। ধীর গতিতে এগিয়ে আসা রিকশাটার দিকে তাকিয়ে ভাবে সোহেল। রিকশাটা কাছে আসতেই যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে রবিউল। কিছু বলে না সোহেল। শুধু ক্ষুরটা শক্ত করে ধরে। "ওই হারামির বাচ্চা যা আছে, দে"।মধ্যবয়স্ক একটা লোক আর কিশোরী একটা মেয়ে বসে আছে রিকশায়।বোধহয় লোকটার মেয়ে। আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছে মেয়েটা। কিচ্ছু না বলে মানিব্যাগ, মোবাইল বের করে দিতে থাকে লোকটা। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় সোহেল। একদম ওর ছোট বোন সীমার মত দেখতে, সীমার মতই মাথায় ছোট ছোট দুটো বেনী করা। বাসা থেকে বের হয়ে আসার আগে একদিন সোহেল কে ধরে আকুল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল সীমা, "ভাইয়া , তুই আবার ভালো হয়ে যা না", বার বার কথাটা বলছিল আর কাঁদছিল। কোথায় আছে এখন বাবা, সীমা, মা , রিনা আপা? সোহেলের ইচ্ছে হল বলে , কিছু দেয়া লাগবে না,
আপনারা চলে যান। কিন্তু ঠিক তখন ই শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক খিঁচুনি আসে ওর। আর পারবে না। এখন ই টান দিতে হবে। বড় ভাইয়ের আস্তানায় যেতে হবে। "মেয়েটার কানে যেইটা আছে ওই টাও দে কুত্তা", চিৎকার দেয় সোহেল। যেমন দ্রুত এসেছিল তেমনই দ্রুত সব নিয়ে গলিটায় ঢুকে পড়ে ওরা। তাড়াতাড়ি পা চালায়। অন্ধকারের ভিতর হারিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ সকাল ৭:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×