আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন , যারা মুখে ধর্মের কথা বললেও আসলেও তারা ষোল আনা নির্লোভের মুখোস পরা ভণ্ড , যাদের কাজই হল ধর্মের বানীকে নিজেদের আখের গোছানোর চাবিকাঠি হিসাবে ব্যাবহার করা । বলতে পারেন নিজেদের মত করে ব্যাবহার করা। যাই হোক এই সকল বেক্তিরা আসলেই খুব বিপদজনক। কিন্তু কথাই আছে “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে”।
প্রথম পর্বটি না পড়ে থাকলে ক্লিক করুন
আজ আপনাদের সামনে তাই এই বিষয় ভিত্তিক একটি প্রবাদের অবতারনা করতে চলেছি । আপনারা সবাই “বকধার্মিক” এই প্রবাদটির সঙ্গে কম বেশি পরিচিত । আজ একটি রূপকথার গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কেন এই সকল ধর্মের মুখোশ পরা বেক্তিদের জনমানুষে "বকধার্মিক” বলে আখ্যায়িত কারা হয়েছে।
অনেক বছর আগের কথা , কোন এক দেশে এক গভীর জঙ্গলএর মধ্যে পাহাড় বেষ্টিত একটি ঝিল ছিল। প্রতি বর্ষায় বৃষ্টির জল জমে এটি টইটম্বুর হয়ে থাকত , পাহাড় বেষ্টিত হওয়াতে পাহাড়ের গা বেয়ে প্রচুর জল এটিতে জমা হওয়াতে কয়েক বছর বর্ষার জল না জমলেও ঝিলটি শুকিয়ে জেত না ।
তাই এই ঝিলটি হয়ে উঠেছিল যত রাজ্যের মাছ , ব্যাঙ ও কাঁকরাদের আবাসস্থল । একই সঙ্গে ঝিলটির পার্শ্ববর্তী গাছ এবং ঝোপগুলিতে ছিল একাধিক বকের বাসা । তারা হাঁটুজলে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকত এমন ভাব করে, যেন ধ্যান করছে । কিন্তু যেই না কাছে পিঠে ভেসে উঠত কোন মাছ অমনি খপ করে তাদের কে খেয়ে ফেলত। এদের মধ্যে একটা বক বুড়ো হয়ে গিয়েছিল বলে মাছেরাও তাকে খুব একটা পাত্তা দিত না , জানত তার কাছে গেলেও প্রান হারাবার ভয় খুব কম । এই ভাবে কিছুদিন চলার পর বুড়ো বক দেখল মহা মুশকিল এই ভাবে বেশিদিন না খেয়ে থাকলে যে নিশ্চিত মৃত্যু । তাই সে মনে মনে এক গভীর ষড়যন্ত্র করল।
একদিন বুড় বক দেখল দূর থেকে তার দিকে একটা কাঁকরা চলে আসছে, যেই না দেখা সেই মাত্র সে তার চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল , এই দেখে কাঁকরা বলল – কি হল গো বক মামা কাঁদছ কেন ?
সে বলল কি আর বলব ভাগ্নে তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে । এখন নিজের চিন্তা ছেড়ে দিয়েছি , পরের চিন্তায় মন বড় ব্যাকুল । নিজের চিন্তা করি না বলেই আজ আমার এই দশা , আমরষ ছেরে নিরামিশ ধরেছি , বকধরমে মন দিয়েছি !
কাঁকরা বললে তা পাঁচজনের জন্য তুমি কাঁদছ কেন ?
বক বলল – শোন তাহলে –জ্যোতিষদের কাছে যা শুনে এলাম তাতে আমার মনে শান্তি নেই ! তোমাদের সকলের জন্য চিন্তাই আমার প্রান কাঁদছে ।
কাঁকরা বলল জ্যোতিষরা কি বলেছে , যে তুমি অমঙ্গলের ভয়ে চিন্তিত ?
তখন বক বলল তারা বলেছে যে আগামী দশ বছর এ তল্লাটে বৃষ্টি হবে না , তার জেরে শুকিয়ে যাবে এই ঝিল , আর তখন তোমাদের অবস্থার কথা ভেবে আমার এত দুঃখ সর্বদা ।
কাঁকরা বলল তাই তো তাহলে এখন কি উপায় ? যাই আমি সকল কে খবর টা দিয়ে আসি। তখন কাঁকড়ার কাছে মাছেরা সব কথা শুনল এবং এও শুনল যে বক মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে , এবং তাদের চিন্তায় সর্বদা ব্যাকুল । অবস্থা দেখে মাছেরা সবাই এল বকের কাছে উপায় বার করতে।
বক অনেক চিন্তা ভাবনা করে বলল- একটা উপায় আছে। এই পাহাড় ঘেরা ঝিলের বিপরীতে একটা মস্ত হ্রদ আছে , সেই হ্রদটি বহু বছর অনাবৃষ্টি তেও শুকিয়ে যাবে না।
মাছেরা বলল , তা না হয় আছে কিন্তু আমরা সেখানে যাব কি প্রকারে ? আমরা তো আর উড়তে পারি না বা হেটেও যেতে পারব না , তাহলে কি আমাদের কে এখানেই শুকিয়ে মরতে হবে?
বক বলল আরে আমি থাকতে তোমরা কেন মরবে! আমি অনেক ভেবে তোমাদের জন্য একটা উপায় বের করেছি। ।
মাছেরা বলল কি উপায়। তখন বক বলল , আমি তোমাদের কে এক এক করে আমার পিঠে করে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ওই হ্রদে ছেড়ে দিয়ে আসব । তাহলে তোমাদের আর কোন ভয় থাকবে না।
ভন্ড বকের কুবুদ্ধি মাছেরা বুজতে পারল না , সকলে সানন্দে রাজি হয়ে গেল ।
তারপর থেকে বুড়ো বক এক এক করে মাছেদের উড়িয়ে নিয়ে যায় আর ফিরে এসে বলে – জলে ছেড়ে দিয়ে এলাম । এই ভাবে সে দিনের পর দিন মাছেদের চলান করতে লাগল এবং মহা আনন্দে বিনা ঝাঞ্ঝাটে কালপাত করতে লাগল । আসলে বক তাদের কে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের এক দিকে তার আহার পর্ব সমাধা করতে লাগল।
একদিন সেই কাঁকরাটি এসে বলল মামা , এ তোমার কেমন ব্যাবহার , আমি প্রথম এসেছিলাম তোমার কাছে – আর তুমি আমাকেই নিয়ে গেলে না ঐ হ্রদে ?
বক বলল ঠিক আছে আজ তোকেই নেব । কাঁকরা তার পিঠে চড়ে বসতেই সে উড়তে লাগল । উড়তে উড়তে কাঁকরা দেখল যে পাহাড়ের একটা বড় পাথরের গায়ে অনেক মাছের কাঁটা পরে আছে , তাই দেখে তার সন্ধেহ হল – এখানে এত মাছের কাঁটা পড়ে আছে কেন ? এগুলো কোথা থেকে এল ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন তার মনে বাসা বাধতে থাকল । সে তখন অধীর হয়ে বলল – বক মামা কতদূর তোমার জলাশয় । এইবার “বকধার্মিক” রুপি ভণ্ড বক তার আসল স্বরূপ এ এসে বলল , জলাশয় তো তোর মামার পেটে , এ জল কোনদিন শুকাবে না , বেশ সুখেই থাকবি সেখানে । মাছ খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে একেবারে, এবার তোকে দিয়ে স্বাদ বদলানো যাক। কাঁকরা ভাবলো ওরে ভণ্ড , এই তোমার আমাদের জন্য ভেবে ভেবে কান্নাকাটি দাড়াও দেখাচ্ছি মজা, যেই না বক তাকে পাথরের উপর নামাল, সেই মাত্র কাঁকরা তার সামনের দাড়া দিয়ে বক মামার গলা চেপে ধরল সাঁড়াশীর মত করে , কিছুক্ষণ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত বক মামার মৃত্যু ঘটল।
কৃতজ্ঞতা : বন্দনা গুপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩