somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষাই মেরুদন্ড শিক্ষাই কারাগার

০৮ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমারা ছোটকাল থেকেই জেনে এসেছি যে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এই কথার মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছি অল্প কথায় তা হল, শিক্ষাই হল জাতির অস্তিত্বের মুল স্তম্ভ যা ছাড়া একটি জাতি মাথা উঁচু করে কখনই দাঁড়াতে পারে না।কিন্তু আমি হলপ করে বলতে পারি যে, বহুল প্রচলিত অনন্য জ্ঞান সমৃদ্ধ এই বাক্যের অন্তরালে আরও কিছু ভয়ংকর শিক্ষা যে লুকিয়ে আছে তার সন্ধান আজ অবধি কোন শিক্ষক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা আমার অন্তত জানা নেই। আমি দাবি করছি না যে “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড” এই কথাটা কোন অংশে ভুল। বরং অন্যান্য পন্ডিত দের সাথে গলা মিলিয়েই বলছি, এটাই পরম সত্য। এবং এই পরম সত্যের একটি দিক জেনে-নাজেনে অথবা বুঝে-নাবুঝে কিংবা জেনে-বুঝেই আমাদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে যা বিন্দুমাত্রও কেউ টের পায়নি।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং সে জন্য শিক্ষাই জাতির জন্য একটি কয়েদ খানা, যেখানে সংশ্লিষ্ট জাতি অন্যের দ্বারা সম্পুর্ন প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়। কারও কারও কাছে এই কথাগুলো বড়ই নতুন ও আজব শুনালেও মুলত এটিই নিষ্ঠুর বাস্তবতা এবং সত্য। তবে হ্যাঁ, শিক্ষা তখনই জাতির জন্য কয়েদখানা যখন শিক্ষাটি জাতিয় মুল্যবোধ, নৈতিকতা ও বিশ্বাস বহির্ভুত কোন আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের কে আলোকিত করতে আসে। আর বহুল প্রচলিত জনপ্রিয় বাক্যের এ শিক্ষাটিই আমাদের থেকে যুগ যুগ ধরে আধাঁরের গহীনে রয়ে গেছে।

অন্ধকার গহীন বনে পথহারানো পথিকের কাছে আলো একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপযোগী বস্তু। কিন্তু সে আলো যদি ভয়ংকর কোন পরিনতির দিকে পথিক কে ডেকে নিয়ে যায় তাহলে সেই আলোই তার জন্য চরম দুর্ভাগ্যের কারন। ঠিক তেমনি পানির অপর নাম জীবন আবার এই পানির অতিমাত্রায় আগ্রাসীতা ও অপপ্রয়োগই আবার মৃত্যুর কারন। এভাবে শিক্ষা জাতির জন্য চরম গোলামির চুক্তিনামা, যখন সে শিক্ষা পদ্ধতি বা কারিকুলাম জাতিয় মুল্যবোধ, নৈতিকতা ও বিশ্বাস বহির্ভুত কোন আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়।

শিক্ষা শুধু জাতির জন্য কয়েদখানাই নয় বরং চরম মগজ ধোলাইও বটে। যখন শিক্ষা একমুখি বা একপাক্ষিক হয় তথা মানব জীবনের আধ্যাতিক শিক্ষার অনুপুস্থিতি চরম ভাবে পরিলক্ষিত হয় তখন শিক্ষা একটি মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যম। যাকে ইংরেজিতে “ব্রেইন ওয়াশ” বলা হয়। অন্যান্য জাতির জন্য আর যা ই হোক মুসলমান জাতির জন্য বর্তমানের প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থ্যা একটি ব্রেইন ওয়াশের কার্যকরি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থ্যাতে ধর্ম শিক্ষাকে একতরফা ভাবে এড়িয়ে গিয়ে জড়বাদি ও শুধুমাত্র সাধারন শিক্ষার অনবরত প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়। একক ভাবে মুসলিম ঘরের কোমল মতি মুসলিম সন্তানেরা ধর্মবিবর্জিত শিক্ষা পেয়ে যাচ্ছে যা তাদের মগজকে এমন ভাবে ধোলাই করছে যার ফলে শিশুরা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠার আগেই নিজের অজান্তেই নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হিসেবে গড়ে তুলছে। অথচ একজন মুসলমান হিসেবে এটা তার মৌলিক অধিকার ছিল তার ধর্ম ও আদর্শ সম্পর্কে জানার। সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব ছিলো সন্তানকে এই শিক্ষা দেয়া কিন্তু সে তার অধিকার থেকে সম্পুর্ন বঞ্চিত।

শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদন্ড সেহেতু এই মেরুদন্ডটি যে ছাঁচে বা যেই উপকরনের মাধ্যমে তৈরী করা হবে গোটা জাতি সেই ছাঁচে বা উপকরনের ভিত্তিতেই কাজ করবে বা চলবে। বিশ্বব্যাপি মুসলমানরা পশ্চিমা ধ্যান-ধারনা বা আদর্শের ভিত্তিতে তৈরী শিক্ষাব্যবস্থ্যার মাধ্যমে তাদের কোমলমতি সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলছে যার কারনে দিন দিন তারা নিজেদের অজান্তেই পশিমাদের বেধে দেয়া ছকের মধ্যে আটকে গেছে এবং তার থেকে আর বাইরে আসতে পারছে না। পশ্চিমাদের বেধে দেয়া ছকের মাঝে বন্দীহয়ে আজ পুরো জাতি কারাবন্দী হয়ে আছে। প্রচলিত ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থ্যার মাধ্যমে শিশুরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনবরত এমন জ্ঞানে জ্ঞানী হচ্ছে যাতে ইসলামের শিক্ষার তেমন কোন অবস্থান নেই, যাকিছু আছে তার পরিমান এতই নগন্য যে শিশুরা বাস্তবতার নীরিখে তাদের ধর্মীয় শিক্ষাগুলোকে সঠিক ভাবে রিদয়ঙ্গম ও বাস্তবায়নে ব্যার্থ হওয়ার পাশাপাশি চরম ভাবে সন্দীহান হয়ে উঠছে, যার কারনে সয়ংক্রীয় ভাবে এবং অবচেতন ভাবে শিশুরা অন্যান্য ইজম তথা ইসলাম বৈরী আদর্শের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এভাবেই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে গোটা মুসলমান জাতির নতুন প্রজন্ম ব্রেইন ওয়াশের শিকার হয়ে হয়ে পড়ছে ইসলাম বিরোধী অথচ তারা নিজেও বুঝতে সক্ষম নয় যে তারা কতটা ইসলাম বিরোধী হয়ে পড়ছে।
যার কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তৈরী হচ্ছে কিশোর বখাটে পাশাপাশি ইভ-টিজিং, ইলোরাদের আত্নহত্যা, সন্তানের সামনে বাবা-মা কে হত্যা, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, দুর্নীতি, ক্যম্পাসে প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রীদেরকে নাজেহাল করা, লাঞ্চনা করা, কন্সার্টে মেয়েদের শাড়ী টেনে খুলে ফেলে লাঞ্চনা সহ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের মুল কারন হল এই শিক্ষ্যা ব্যবস্থা।

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ফলে আজ অনেক মুসলমানকেই দাবী করতে শুনি তারা বলেন, ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত ব্যপার। যা ইসলাম সম্পর্কে তাদের চরম অজ্ঞতার প্রমান বহন করে। অন্যান্য ধর্ম যেহেতু অনুসরন করিনা তাই তাদের কথা জানিনা, কিন্তু যেহেতু আমি একজন মুসলমান এবং আমি এই ধর্মের অনুসরন করতে চেষ্টা করি, তাতে আমি যতদুর জানি তাতে ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থ্যা যেখানে প্রত্যেক অনুসারী একে অপরের ভাই ভাই। এখানে এক ভাইয়ের দায়িত্ব হল অপর ভাই কে তার ভুল ধরিয়ে দেয়া এবং তাকে দায়ীত্ব সম্পর্কে বার বার স্বরণ করিয়ে দেয়া। যার জন্য বলা হয়েছে মুমিনরা একে অপরের জন্য আয়না স্বরুপ। যতক্ষন পর্যন্ত একজন ব্যাক্তি নিজেকে মুসলমান হিসেবে দেখতে চায় বা দাবী করে ততক্ষন পর্যন্ত তার উপর অপর মুসলমান ভাইয়ের অধিকার ও দায়িত্ব হল তার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এবং দায়ীত্ব সম্পর্কে স্বরন করে দেয়া, সতর্ক করে দেয়া। অথচ পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা না থাকার কারনে এরা ইসলাম সম্পর্কে সম্পুর্ন ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছে। এর কারন হল এই যে শুধুমাত্র সেকুলার শিক্ষার অনবরত পর্যাপ্ততা অন্যদিকে ধর্মীয় শিক্ষার অপর্যাপ্ততার কারনে এদের ব্রেইন ওয়াশড হয়ে গেছে। যার কারনে এদের বুঝালেও এরা বুঝে না। এরা দেখেও দেখে না। ইসলামের মোউলিক ইবাদাৎ ও বিধিনিষেধ গুলোর ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিগত ব্যপার নেই। যে কেউ যদি এর কোন একটি অমান্য করে এবং তা অন্য মুসলমান ভাইয়ের দৃষ্টি গোচর হয় তাহলে তাকে সতর্ক করা বা শুধরে দেয়া ঐ ভাইয়ের কর্তব্য।যার কারনে নির্ধিষ্ট বয়সের পর নামাজ না পড়লে বেত্রাঘাতের কথা বলা হয়েছে এবং আলাদা করে দেয়ার কথাও হাদীসে বলা হয়েছে। মুসলমান মাত্রই এই বিষয়গুলোকে সিরিয়াসলি মানতে হবে সকলের। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদিরা আজ অধিকাংশ মুসলমানের মগজ এমন ভাবে ধোলাই করেছে যে আজ সবাই যেন আধাঁরের মধ্যে নিমজ্জিত। কেউ এসব কথা শুনতে চায়না, শুনলে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করলে মানেনা, মানলে অন্যকে সতর্ক করে না।

এভাবেই আমরা পশিমাদের দ্বরা শিক্ষা-দিক্ষায়, আচার-অনুষ্ঠানে, কৃষ্টি-কালচারে, অর্থনীতিতে, সমাজনীতিতে, সামরিকনীতি সহ গুরুত্বপুর্ন সকল অঙ্গনে আমরা তাদের দাসে পরিনত হয়েছি। এখনি সময় জেগে উঠার। পাঞ্জেরীরা ডেকে যায় অনবরত কিন্তু গভীর ঘুমে মত্ত জাতির সুবহে সাদীক আর হয় না ওরা জেগে উঠেনা। প্রতিদিন সুর্য উঠে ফোটে সোনালী যোছনা শুধু অদের ঘুম ভাঙ্গেনা, ওরা জাগে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×