somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মস্কোতে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর-২ (দুরে কোথায় দুরে দুরে...)

০৮ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?
-জ্বী-বাংলাদেশ- কেন?
বৃদ্ধা স্মিত হেসে বললেন,
-এমনিতেই- বাংলাদেশটা যেন কোথায়?
-দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় ’ তার চেহারা দেখে বুঝলাম তিনি ধরতে পারছেন না তাই সহজ করার জন্য তক্ষুনি বললাম,'মানে -ঠিক ইন্দির পার্শ্ববর্তী দেশ। ইন্দি(ইন্ডিয়া)
-ও - তার মানে তুমি ইন্ডিয়ান?
-জ্বী-না। আমি বাঙ্গালী, বাংলাদেশী।
-বাংলাদেশ কি তাহলে স্বাধীন কোন ভুখন্ড?
-জ্বী আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।
-ওদেশটা কি আমেরিকার মত ধনী কোন দেশ?
-এ-প্রশ্ন কেন করছেন?
-কারন তোমরা এত পয়সা খরচ করে ভিন দেশে পড়তে এসেছে। নিশ্চয়ই তোমাদের দেশ খুব ধনী অনেকটা আমেরিকার মত? আমরাতো উচ্চশিক্ষার্থে অন্যদেশে যওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারিনা।

কিভাবে তাকে বলি যে,‘আমি তৃতিয় বিশ্বের একটা দরিদ্রতম দেশের নাগরিক।’ সদ্য কম্যিউনিজম থেকে মুক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের আম জনতাদের আইডল দেশ হচ্ছে‘আমেরিকা’। সবকিছুরই শেষ সীমা হচ্ছে আমেরিকা। ‘ওরা দেখতে কি আমেরিকানদের মত?’ ওরা কি আমেরিকানদের মত পোষাক পরে?’ দেশটা কি আমেরিকার মত?’এই প্রশ্নের উত্তরগুলো যদি ‘হ্যা’ হয় তবে তাদের শ্রেষ্ঠতা নিয়ে আর কারো সন্দেহ থাকবেনা!’ ব্যাপারটা আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হলেও - রুঢ় বাস্তবতা হল সত্তুর বছরের অধিককাল দৈনিক‘প্রাভদা’র (যার অর্থ ‘সত্য’ ওদের অধুনা লুপ্ত জাতীয় সংবাদপত্র) বদৌলতে ওদের জানার পরিধি এমনিই সীমিত হয়ে গিয়েছিল!
-জ্বীনা- দেশের বেশীর ভাগ লোকই খুব গরিব তবে অল্প কিছু লোক আছে যারা আমেরিকানদের মতই ধনী।
-ও তাই!
-কিছু মনে করোনা-তোমাদের দেখে কিন্তু ভারতীয় মনে হয়।
-খুবই স্বাভাবিক। নিকট অতীতে আমাদের দেশ ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল। আলাদা হলাম আর ক’দিন আগে-ঠিক আপনাদের মত ‘রাশিয়া আর উক্রেন।’
এতক্ষনে যেন তিনি তাঁর প্রশ্নের সদুত্তর খুজে পেলেন- তেমনি একমুখ হাসি ছড়িয়ে মাথা নেড়ে বললেন,-তাই তো বলি? আচ্ছা তুমি মিথুনকে চেন?
-মিথুন কে?
-আ- নায়ক মিথুন। তুমি তার ডিস্কো ড্যান্সার দ্যাখোনি?
-ও হ্যা! হেঃ হেঃ মিঠুন, মিঠুন চক্রবর্তি? তাকে খুব ভাল ভাবে চিনি। সেতো আমারই দেশের ছেলে।
-ওঃ ঈশ্বর আমার - তাই! দেখি দেখি তুমি একটু আলোতে এসে দাড়াওতো -তোমাকে ভাল করে দেখি। ইস্ -তোমার চেহারাটাওতো দেখি তার মত !
-হেঃ, হতেই হবে দেশের ছেলে বলে কথা। ‘গর্বে আমার বুকখানা যেন ইঞ্চি দশেক প্রসারিত হল! ভাবলাম আয়নায় আজকে ভাল করে চেহারাটা দেখতে হবে। মনে হয় আমার আয়নাটায় কোন গলদ আছে না হলে চোখে কেননা এমন একটা আবিস্কার এতদিনে কেন করতে পারলাম না!
-তুমি ডিস্কো ড্যান্সারের ওই গানটা জান? “নাসোনা - না চাঁদি”।
এই খেয়েছে রে! প্রসঙ্গটা একটু ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাইলাম। জিজ্ঞেস করলাম,-আপনি ’ডিস্কো ড্যান্সার’ দেখেছেন?
-কি যে বল! বহুবার দেখেছি। শুধু আমি নই এতল্লাটের প্রায় সবাই একাধিকবার দেখেছে।
আমাকে কথা বলার সুযোগ নাদিয়ে তিনি বলেই চললেন,-এ শহরের ছেলে বুড়ো সব্বাইয়ের প্রিয় নায়ক মিথুন। ‘রাঙ্গা মুখে একটু লাজুক হেসে কোমল কন্ঠে বললেন , -অবশ্য আমিও তাকে খুব পছন্দ করি।
-যুবক তুমি কি তার সেই গানটা আমাকে একবার গেয়ে শোনাবে?
‘আমি যতই তাঁর হাত গলে পিছলে যেতে চাই তিনি ততই আমায় আরো বেশী ছাইভুষো মেখে চেপে ধরেন!
গানটা জানি সর্বসাকুল্যে দু’লাইন তারপরও ভুলে ভরা। আর কন্ঠের যে ছিরি - শুললে হয়ত তিনি আমাকে আট হাজার কিলোমিটার দাবড়ে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে চুবিয়ে ছাড়বেন!’
তার হাত থেকে নিস্তারের উপায় নেই তাই সাহসে (!)ভর করে অনুরোধের পাহাড় গিললাম। সেই দুলাইনই একটু ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে গাইলাম।
তার বিকৃত চেহারা দেখে আমার গায়ক হওয়ার খায়েসকে এক্ষনেই সমাধিস্ত করতে হয় সেই ভয়েই চোখ দুটো অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ছিলাম। গান শেষে তার দিকে ফিরে চাইতেই আমি বিস্ময়ে হতবাক!

প্রথমে ভেবে ছিলাম ‘সিভিয়ার স্ট্রোক’! আমার কন্ঠের মাধুর্যে শেষবেলায় একটু নড়াচড়ারও সুযোগ পাননি। স্ট্যান্ডিং ডেথ! ইন্নালিল্লাহ .. বৃদ্ধা আমার দিকে এমন বিমুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছেন যেমন কোন তানসেন ভক্ত তার সুররস উপভোগ করার পর গুরুর দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকেন।
বিদেশীরা বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা গেরস্তের বাড়ি দাওয়াত খেতে গিয়ে বিস্বাদ খাবার মুখে পুরে চোখের জলে গাল ভিজিয়ে বেষম খেতে খেতে বলে ‘খাসা রান্না’! আর ইনি যে ওদের থেকেও মহান অভিনেত্রী। যেই আমি বাথরুমে গান গাইতে গেলেও বারবার পরিক্ষা করি ছিটকানীটা ঠিকমত আটকানো আছে কিনা! সেই তার গান শুনে ইনি মুগ্ধ। শুধু মুগ্ধ নয় মহা মুগ্ধ! আহা বেশ বেশ।
আরো চমক আছে বৃদ্ধা পরম মমতাভরে আমার হাতখানি তার শুভ্রফেনিল দুহাতের মাঝে নিয়ে বললেন,
-যুবক তুমি কি আমার বাড়িতে একবার আসবে আমার স্বামী খুব খুশী হবে। তিনি ভারতীয়দের বিশেষ করে ভারতীয় গানের খুব ভক্ত। পাসালোসতা ..(দয়াকরে)’ ফ্যাকাসে নীল চোখে আকুতি ঝরে পড়ল।
তার আন্তরিক আহ্বান আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না। ঠিকানা নিয়ে রাখলাম কথা দিলাম খুব শীঘ্রিই আসব।
হাওয়ায় পাখনা মেলে উড়ে উড়ে চলে আসলাম আমার ক্ষুদ্র আলয়ে। বুকউচু আয়নার সামনে কুজো হয়ে দাড়িয়ে চুলে চিরুনী চালাতে চালাতে গুন গুন করে একটা গান ধরলাম। মাঝপথে গানখানি থামিয়ে হাসি হাসি মুখে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালাম রুম মেটের দিকে। সে দেখি পড়া থামিয়ে বিরক্ত মুখে পানসে চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই বলল, ‘মাফ করে দেয়া যায় না?’
চুপসে যাওয়া মনের ভাব গোপন করে ওকে একদম পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলাম অন্য রুমের উদ্দেশ্যে।

দুসপ্তাহ পরেই ইনষ্টিটিউটের বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সে উপলক্ষে ছাত্র শিক্ষক মিলে জমকালো এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরাওবা পিছিয়ে থাকব কেনো সেই লক্ষ্যে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ম্যাডামরা বারংবার অনুরোধ করলেন একটা কিছু উপস্থাপন করার জন্য। ক্লাস শেষে শুরু হোল নিজেদের মধ্যে আলোচনা। ঘন্টা তিনেক তুমুল তর্ক বিতর্ক শেষে একটা ব্যাপারেই সবাই একমত হোল যে, -তাক লাগানোর মত একটা কিছু করতে হবে।’ কিন্তু কি করতে হবে সে ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়াই যেন বুদ্ধিমানের কাজ।
পরবর্তী তিন চারদিন কাজকর্ম সব ফেলে ওই একই বিষয়ে তর্ক বিতর্ক বাক বিতন্ডা চলতে লাগল কিন্তু ফল ওই একটা,-তাক লাগানোর মত একটা কিছু করতে হবে!
কেউ যদি বলে নাটক সঙ্গে সঙ্গে অন্যজন দাত কেলিয়ে বলে,-তা নায়িকাটা কে হবে আপু -তুমি?’ অন্যজন আবার চোখ মেরে টিস করে,‘তোর চেহরাটা কিন্তু.. মাশাল্লাহ ..!
কবিতার কথা কেউ তুললে আরো দ্রুত রি-অ্যাকশান। আলম বলে,-ঠিক বলেছিস আমরা কোরাশ কবিতা গাইব। তা কবিতার সুরটা কি তুই দিবি ?
তোতলা রফিক বলে,-দো -দোস্ত সাথে এ-একটা নাচ দিলে কেমন হয়?
হেলায় হেলায় বেলা যায় কিন্তু সমঝোতায় পৌছায না। এদিকে হাতে বেশী সময় নেই শিক্ষকরাও তাড়া দিচ্ছেন।
অগত্যা দফারফা হোল গান হবে। আর মুল দায়িত্ব এসে চাপল আমার উপর। আপরাধ - “হেড়ে গলায় যখন তখন গুন গুন করা!”
একধাক্কায় আমার ’ইনসোমনিয়া’ হয়ে গেল!
রাত জেগে মাথায় গরম পানি ঢালতাম(আমাদের বাথরুমের ঠান্ডা পানির ট্যাপটা খারাপ ছিল) আর গানের গুস্টি উদ্ধার করতাম। আশ্চর্য কোন গানেরই দু-চার লাইনের বেশী স্বরনে নেই। তাও রবীন্দ্র সংগীত না হয় হিন্দি কিংবা ইংরেজী। শেষ মেষ গীটারিস্ট শিশিরের সাহায্য চাইলাম। ও স্মীত হেসে আমাকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গীটার থাবড়ে ’ওয়্যার ফেজের ’ এমন এক গান ধরল -সে গান শুনে রফিকতো মা -মা করে ছুটল খোলা দরজা দিয়ে আর বাকরুদ্ধ সোয়েবকে মিনিট দশেক চড় থাপ্পর মেরে কথা বলাতে হোল।
হতাশ হয়ে সবাই যখন কাঁদো কাঁদো মুখে বসে আছি ঠিক তুখুনি ক্লাসের সবচেয়ে লাজুক ও সল্পবাক হ্যাপি বলল,-জাতীয় সঙ্গীত গাইলে কেমন হয়?
আর যায় কোথায় বাহবা’র অত্যাচারে বেচারার চোখে জল আসার উপক্রম। কি গাইব সেটাতো ঠিক হোল কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে?
‘প্রথমে গান পুরোটা লিখতে হবে।’ ।কিন্তু শান্তি নেই- দু লাইনে তিনটে ভুল।গানরে লরিক্সি ‘ নিয়ে শুরু হোল হট্টোগোল। শেষমেষ কেউ একজন তার পুরাতন বাংলা ডায়েরী খুলে সে তর্কের আবসান ঘটাল।
বাকী রইল রিহার্সেল। হা ইশ্বর - মধ্যরাতে দশ/পনের জন বঙ্গ যুবক ততোধিক ভিন্ন ধরনের সুরের সে গান শুনলে, নির্ঘাত ‘রবীন্দ্রনাথ কালির দোয়াত মাথায় নিয়ে হতেন কুপোকাৎ’(অঞ্জন
দত্ত)। কেউবা গায় ভাটিয়ালীর সুরে কেউবা উচ্চাঙ্গ (রুপক অর্থে)।
কিন্তু এগুলো পিছনে ফেলে শিশিরের সুর আরো মারাত্মক- যেনো সে র্যা প গাইছে!
সুরের চেয়ে ভৌতিক ব্যাপার লাইনের গড়মিল ’প্রথম লাইন শেষ করার আগেই অন্যজন বাকি দু-লাইন টপকে চতুর্থ লাইনে চলে যাচ্ছে সেই সঙ্গে আঞ্চলিক টানতো আছেই!’
অতঃপর রনে ভঙ্গ!
ভাগ্যিস স্টেজে উঠে গান গাওয়ার দুঃসাহস দেখাইনি কেননা রুশ ছাত্র ছাত্রীদের পারফমেন্স দেখে আমাদেরই তাক লেগে যাবার যোগাড়।

ভুলে গিয়েছিলাম সেই বৃদ্ধা মহিলার কথা। মাস কয়েক বাদে একদিন কিভাবে যেন আমার টেলিফোন নাম্বার যোগাড় করে আমাকে টেলিফোন করলেন। টেলিফোনে হাতে পায় ধরে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। কথা দিলাম পরদিন সন্ধ্যেয় আসব।
বিকেল হতেই সেজেগুজে ক’খানা ক্যাসেট বগলদাবা করে ছুটলাম তাঁর গৃহে। ভদ্র মহিলা হয়তো আমার অপেক্ষায় বসে ছিলেন।
ডোর বেল বাজাতেই হাট করে খুলে গেল সদর দরজা। স্মিত হাস্যে আমার পোষাক-আষাক ছাড়ার সুযোগ নাদিয়েই টেনে নিয়ে চললেন ড্রইং রুমের দিকে।ড্রইং রুমের ঠিক মধ্যিখানে একমাথা ধবধবে সাদা চুল নিয়ে হুইল চেয়ারে যে, বৃদ্ধ বসে আছেন-তার উজ্জল চোখের সেই দৃস্টি আমি কখনই ভুলবনা।
বাস্তবিকই তিনি আমাকে দেখে দারুন খুশি হলেন।
আমাকে দু-চার পাঁচটা প্রশ্ন শেষে নিজের কথা বললেন,তিনি স্থানিয় কলেজের গনিতের অধ্যাপক ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে অবসর নিয়েছেন। ছেলেমেয়ে নেই। কথায় কথায় জানালেন তার ভারত প্রীতি বিশেষ করে ভারতীয় গান তাকে দারুন আকৃস্ট করে। হাটাচলার শক্তি নেই কিন্তু আশেপাশের হলে কোন হিন্দি ছবি চললে তিনি দেখবেনই। কিন্তু দুভাগ্য যে আজ পর্যন্ত কোন ভারতীয়কে সামনা সামনি দেখেননি।
আমাকে দেখে তার অনেক দিনের বাসনা পুরন হল।
-কিন্তু আমিতো ভারতীয় নই। আমি বাঙ্গালী বাংলাদেশী।
-ওই একই কথা। তোমরাতো আলাদা হয়েছ অল্প ক’বছর আগে।
-তাও চল্লিশ বছরের অধিককাল।
ভদ্রলোক স্মিত হেসে বললেন,-এর মধ্যে কি তোমাদের চেহারা আচরনে কি বড় ধরনের কোন পরিবর্তন হয়েছে। রবিনদ্রনাথ ঠাকুরতো তোমাদেরই কবি কিনা? তিনিতো ভারতীয়?
আমি চুপ করে গেলাম। কথা খুজে পেলাম না।
-শুনলাম তুমি দারুন গান গাও। আমাকে একটা গান গেয়ে শোনাবে?
-এই সেরেছে রে! কার মধ্যে কিসের কথা।
রাঙ্গা মুখে মাথা নিচু করে বললাম,-উনি বাড়িয়ে বলেছেন। আমি মোটেই ভাল গান করি না।
আমি আগে থেকেই অনুমান করেছিলাম ওপক্ষ থেকে এমনধারা অনুরোধ আসতে পারে সেকারনেই সাথে করে বয়ে এনেছি একগুচ্ছ ক্যাসেট।
বৃদ্ধ স্নেহের কন্ঠে বললেন,-তুমিতো তাও গাইতে পার-আমিতো তাও পারিনা।’ একটু থেমে বললেন,-ভাল খারাপ নির্ণয়ের দায়িত্ব আমাকে দিলে ভাল হয়না।
ঢোক গিলে বললাম,-তার থেকে আমি আপনাকে দারুন দারুন কিছু গান ক্যাসেট বাজিয়ে শুনাই’।
তিনি আমার দিকে দু’সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হেসে বললেন,-ক্যাসেটতো বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। ঠিক আছে তাই বাজাও।
-আঃ!আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর সারল।
তড়িঘড়ি করে তার খানদানী ‘বেগা’ সেটে রবন্দ্রি সংগীতের একটা ক্যাসেট ঢুকিয়ে চালিয়ে দিলাম।
গানের সাথে সাথে আমি সাধ্য মত অনুবাদ করে দিচ্ছি।
মিনিট তিনেকের করুন সুররে মন উদাস করা' দুরে কোথায় দুরে দুরে আমার মন বেড়ায়গো... গানখানা তিনি চোখ বন্ধ করে গভীর একাগ্রতার সাথে উপভোগ করলেন।
সেটা শেষ হতেই আমাকে ’রি উইন” করতে বললেন। গান শুনিয়ে তাকে অনন্দ দিতে পেরেছি এই খুশিতে দারুন উৎপুল্ল আমি যেই ফের শুরু করেছি,ঠিক তখুনি তিনি অনুরোধ করলেন গায়কের সাথে কন্ঠ মেলাতে ।
কেমনে তাকে বোঝাই যে গান গাওয়া আমার কম্মো না!
তবু তিনি নাছোড় বান্দা(তবে ভদ্রচিত ও আন্তরিকতা পুর্ন)। উপায়ান্তর না দেখে লাইট নেভানোর শর্তে রাজি হলাম।
রবি ঠাকুরের এই গানটা আমার সাংঘাতকি প্রিয়। এর সাথে অল্প বিস্তর কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছ। দেশ থেকে আসার সময়ে রবন্দ্রি সংগীতের যেই ক্যাসেটখানা নিয়ে এসেছলিাম তার শুরুতইে ছিল এই গানটা। মন খারাপ করা বিকেলে কিংবা নির্জন দুপুরে বা গভীর রাতে ওয়াকম্যানে গানটা চালিয়ে একলাফে চলে যেতাম আমার মনের গহীন কোনে নিভৃত অঙ্গন।যেখানে প্রবশোধিকার নেই অন্য কারো। কি যে খারাপ লাগত তখন! কতবার চোখের নোনাজল গন্ড র্স্পশ করছে।
বার বার কত হাজার বার শুনেছিএই গানখানা। মাত্র চার পাচ লাইনরে গানটা আমার ঠোটস্থ হয়ে গেছে অনেক আগইে।কন্ঠ মেলানো হয়তো সম্ভব -কিন্তু সুর! ধ্যাৎ আমিতো আর অডিশন দিতে বসিনি।
- দুরে কোথায় দুরে দুরে.আমার মন বেড়ায়গো ঘুরে ঘুরে। যে বাশিতে বাতাস কাদে সেই বাশটিরি সুরে সুরে...প্রথমে ধীরে ধীরে ছেড়ে ছেড়ে শুরু করলাম ,এক সময় কেমন করে যেন সুরে বেসুরে মিলে কিছু একটা হয়ে গেল।
গান শেষে আলো জালাতেই বৃদ্ধর মুখপানে চাইলাম। ভাবিনি এতবড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল আমার জন্য!
ভদ্রলোক চেয়ে আছেন উর্ধ্বমুখে আর তার দু’গন্ড বেয়ে সর্পিল গতিতে ধীরে বয়ে যাচ্ছে নোনা জলের ধারা!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:০০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×