somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্র-প্রেম

০৮ ই মে, ২০১০ সকাল ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল: তামান্না খান ।
অনুবাদ: ইমন জুবায়ের।

বেশ কিছুদিন আমাকে বাংলাদেশের সবচে জঘন্য একটি জায়গায় কাজ করতে হয়েছিল -ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ওই দুঃসময়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতাই ছিল আমার একমাত্র সান্ত্বনার উৎস। সে সময় আমি বারবার সৃষ্টিকর্তাকে বলতাম, ‘এই আগুনের পরশমনি ছোঁওয়াও প্রাণে/ এ জীবন পূর্ণ কর।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল সম্ভবত আমাদের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমেই, তবে আমার ছোটবেলার স্কুলের সেইসব অ্যাসেম্বলি সম্পর্কে আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই। তবে আমার মনে আছে - ছ’ বছরের একটি শিশু হারমোনিয়ামে এই গানটি তুলছে:

আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি
নাচিব ঘিরি ঘিরি গাহিব গান ...

সেই বয়েসটা ছিল গান শেখার বয়েস। সিলেবাসে সারেগামাপাধানিসা, একটা যে কোনও রাগ, একটা ছড়াগান, আর একটা রবীন্দ্রসংগীত অনিবার্য ছিল। অনেক কঠিন বলেই সেইসব দিনে আমি সচেতনভাবেই নজরুল গীতি এড়িয়ে যেতাম। তবে আমি এও বুঝতাম যে -যেহেতু আমি কিছুটা বিদ্রোহ মনোভাবাপন্ন ছিলাম, নজরুল গীতির মতো রবীন্দ্রসংগীত তত উদ্দীপনামূলক নয়, বরং একঘেঁয়ে। তবে বরীন্দ্রসংগীত যে একেবারেই একঘেঁয়ে নয় সেটা বোঝাতে আমার বড় বোন সম্পূর্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমাকে রবীন্দ্রসংগীত শেখাতে শুরু করে। আমিও রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানে ব্যবহৃত শব্দের আরও গভীরে যেতে থাকি। এবং অচিরেই আবিস্কার করি যে ...

তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে ...

প্রথমে ভেবেছিলাম সে রকম প্রেমের গান নয়; তার চেয়েও বেশি কিছু ...যত বড় হচ্ছি, রবীন্দ্রনাথও তাঁর কবিতা ও গান, ছোট গল্প ও উপনাস্যের মাধম্যে আমার কাছে ক্রমশ দীপ্যমান হয়ে উঠছেন। কিশোরী বয়সে ‘গোরা’ পড়ে অবাক হয়ে ভেবেছিলাম সুচরিতা ও ললিতার ভিতর দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে আমার মনের কথা প্রকাশ করেছেন! রবীন্দ্রনাথের নায়িকারা সর্বংসহা আত্মত্যাগী ধরনের নয়, বরং তারা মানবী বলেই ভালোমন্দের মিশ্রণ। তারা ভুল করে, তবে সে ভুল সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য নয়, বরং তারা ভুল করতে চায় প্রাত্যহিক জীবনের নিরানন্দতা কাটাতেই । এভাবে বয়স বাড়লে বিনোদিনীর ঈর্ষাকাতরতা কিংবা চারুলতার অভিসার জাস্টিফাই করতে আমার সমস্যা হয়নি।



... তিরিশের কাছাকাছি বয়স, লম্বা, সুদর্শন, রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে- দু’চোখের দৃষ্টি দূরের দিগন্তের দিকে ছড়ানো ... রবীন্দ্রনাথের এই ছবিটা কেমন যেন টানে ।

আমার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বৃষ্টির এক বিকেলে। হারমোনিয়ামে সামনে বসে বাজাচ্ছিলাম ...

আজি ঝরো ঝরো মূখর বাদল দিনে
জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ...

হঠাৎই আমার সামনে রাখা একটা বইয়ের পিছনের ছবিতে চোখ আটকে গেল। ছবিটা ছিল রবীন্দ্রনাথের ... তিরিশের কাছাকাছি বয়স, লম্বা, সুদর্শন, রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে- দু’চোখের দৃষ্টি দূরের দিগন্তের দিকে ছড়ানো। আমার গালে উষ্ণ রক্তের প্রবাহ টের পেলাম। সেই শুরু, তারপর থেকে মুগ্ধতার আর শেষ নেই। তারপর থেকে রবীন্দ্রনাথ আজ অবধি আমার সুখে-দুঃখে আছেন। যখন বিদেশি আরবি ভাষায় লেখা সুরায় আমি আমার মনের কথা আমার সৃষ্টিকর্তাকে বলতে পারি না, তখন আমি বলি ...

ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভূ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেমে পড়ার জন্য অধীর হয়ে থাকতাম। তখনই জানতাম ... রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,

এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না

হৃদয় ভাঙার পর নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছি ...

ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন মিছে ভালোবাসা ...

আমার মনে হয়েছে যে মানুষের অনুভূতির প্রতি ক্ষণের জন্যই রবীন্দ্রনাথ গান লিখে গেছেন। গভীর ব্যথা কিংবা ভয় কিংবা সুখ প্রকাশে যখন যথার্থ শব্দ ধরা দেয় না - তখন ‘গীতবিতান’ অথবা ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে তুলে নিলে কাউকে নিরাশ হতে হয় না ।

তামান্না খান-এর মূল ইংরেজি লেখাটি ‘ Courting Rabindranath’ শিরোনামে গতকাল অর্থাৎ ৭/৫/২০১০ ডেইলি স্টার এর স্টার ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। লেখাটি পড়ে ভাল্ লাগল বলে অনুবাদ করে শেয়ার করলাম আজকের এই বিশেষ দিনে ...


মূল লেখার লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:০৪
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×