somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকা মানব এবং মানবীদের গল্প

০৭ ই মে, ২০১০ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাসা থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে ছেলেটা ভাবছিল কোন বাসটা ধরলে ভাল হবে। যাবে গুলশান দুই। একটা Interview আছে তাই মোটামুটি ফিটফাট হয়ে বের হইছে।মানি ব্যাগের অবস্তা তেমনি যেমন একজন সদ্য পাশকরা নব্য চাকরিরত ব্যচেলর এর মাসের শেষে হয়।তাই এই গরমে এই ভীড়ের বাসে উঠলে ভাঙ্গাচুরা চেহারারে যাও একটু মেরামত করসিল তা যে আবার আগের রুপে ফিরে যাবে জেনেও সে নিরুপায়।বাসের অপেক্ষায় সাঁই সাঁই করে ছুটে যাওয়া লাল নীল গাড়ীগুলো দেখছিল সে আর উদাসী থেকে উদাসীতর হচ্ছিল।হঠাৎ নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারাল সে। ধুর কি হবে Interview দিয়ে। আর কয়টা টাকা বেশী হয়ত ৫ টার জায়গায় ১০ টা সিগারেট কিনতে পারা,মাসে দুইবারের জায়গায় ৪ বার আলো আঁধারীতে বসে অমৃত গলাধঃকরন করে নিজের সমস্ত দুঃখ,যন্ত্রনা,অসহায়ত্ত ভোলার বৃথা চেষ্টা।ব্যাস এর বেশী কিছুনা।ধুর!বাদ!

(পাঠক/পাঠিকা,কি বলবেন একে?দায়িত্তজ্ঞানহীন একটা পাগলের উল্টাপাল্টা চিন্তা আর কার্যকলাপ)।

সিদ্ধান্তটা নিয়ে সে খুশী মনে এইবার সে তাকাল আকাশের দিকে।মাথার উপর অবারিত মুক্ত নীল আকাশ।আকাশটা আজ অদ্ভুত নীল।

(আসুন এখান থেকে আমরা গল্পটাকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলি। Fantasy & Reality.

Fantasy
হঠাৎ করেই এক খন্ড মেঘ এসে ঢেকে দিল সুর্যটাকে।অদ্ভুত এক আলো ছায়ার খেলা।পুরো আকাশটা ঝকঝকে নীল শুধু সুর্যটা ঢাকা পড়ে আছে।ছেলেটা আনমনা।তখনই বেজে উঠল মোবাইলটা।নীলার ফোন।কেনযে মেয়েটা তাকে এত ভালবাসে।
-হ্যালো।
-এই তুমি কই?
-শাহবাগের মোড়ে।
-দাঁড়িয়ে থাক ওখানে।আমি এখনি আসছি।খবরদার কোথাও যাবেনা বলছি।
-যাবোনা।
-শোন তুমি কি আমার জন্যে ঠান্ডা আখের রস কিনবে সাথে শসা।গলা শুকিয়ে আছে।
-কিনব।

লাইন কেটে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল সে।সম্বিৎ ফিরল রহমান এর ডাকে।এই ব্যাটা নীলার মায়ের চ্যালা।ব্যাটা চালায় গাড়ী কিন্তু কাজ করে spy এর।ভদ্রমহিলা নীলা কই যায় কি করে সব খবর এর কাছ থেকেই নেয়।তাতে নীলার থোড়াই কেয়ার আর ও কোনকিছু লুকিয়ে করার মত মেয়েই নয়।মাকে বেশ কয়েকবার বলেছিল, মা যা জানতে চাও আমাকে জিজ্ঞেস করলেই পার।রহমানকে বেত্ন দাও একজনের আর কাজ করাও দুইজনের।এটা কি ঠিক?
-মানে কি?
-এইযে ওর কাজ গাড়ী চালানো আবার ওকে দিয়ে তুমি spying করাও।
-এইসব তুই কি বলিস?
-এইটা জুলুম মা।হয় তুমি ওর বেতন বাড়াও না হয় একটা Report Book খোল তাতে আমি আমার প্রতিদিনের কার্যকলাপ লিখে তোমাকে দিব।
-তোর বাবা আসুক এইবার।ব্যবসা ব্যবসা করে পুরা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে আর এইদিকে মেয়ে যে গোল্লায় যাছে তার খবর নাই।
-বাবাকে আমি ফোন দিচ্ছি।তুমি এখনই জানাও আমার কান্ডকীর্তি।দেরি করা বোধহয় ঠিক হবেনা।
-তুই যা এখান থেকে আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দে।

আবার ফিরে আসি শাহবাগ।

-ভাইজান কি করেন?
-তারা গুনি।তারার হিসাব মিলছে না।
-হে হে হে।ভাইজান যে কি কন।দিনের বেলায় তারা দেখবেন ক্যামনে!
-এইদিকে আসো।তোমারে দুইটা থাবড়া দেই তুমিও দেখবা।
-ভাইজান তারা দেখতে চাইনা।আফায় আপনারে ডাকে।

অদ্ভুত সুন্দর একটা মেয়ে নীলা। অসাধারন বুদ্ধিমতীও।কোন এক IQ Test এ 138 score করে হইচই ফেলে দিয়েছিল।আর 3 হলেই নাকি অতিমানবীর পর্যায়ে চলে যেত।জিজ্ঞেস করলে বলেছিল শুধু তোমার জন্যই গেলাম না।অতি মানবী হলে তো আর তোমার মত গাধামানব এর সাথে প্রেম করা যেতনা।ওর পক্ষে সবই সম্ভব।
-আমার আখের রস আর শসা কই?
-এসব রাস্তার খাবার Hygienic না।চল তোমাকে আজকে শেরাটন এর Milk Shake আর Fruit Salad খাওয়াব।
-টাকা আছে পকেটে।
-তুমি ধার দিবা।শোধ করে দিব আগামী মাসের বেতন পেলেই।
-বুঝেছি।তাও বলবে না যে ভুলে গেছি।থাক তুমি বসে থাক আমিই নিয়ে আসছি।
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা।বস।দুই মিনিটের ভেতর নিয়ে আসছি।
-হইছে।এখন আর কথা না বাড়িয়ে ঝটপ্ট উঠে পড়।
-কোথায় যাব।
-এক ভদ্রলোকের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব।মায়ের খালাতো বোনের ছেলে।উচ্চশিক্ষিত,ধনী, বড় মাপের ব্যবসায়ী।মায়ের আর তার খালাত বোনের ইচ্ছে তারা বেয়াইন হবেন।ছেলের নাকি মায়ের ইচ্ছেই ইচ্ছে।কিন্তু আমার ইচ্ছার কি হবে বল? তাই আমি আর তুমি যাব এখন ছেলের কাছে।
-আমি গিয়ে কি করব?
-তোমাকে কিছু করতে হবেনা।যা করার আমিই করব।

(ছেলেটার নাম কিন্ত এখনো জানা হয়নি।নীলার নামের সাথে মিলিয়ে ওর একটা সুন্দর নাম আমরা দিতে পারি।ধরে নেই ওর নাম রেযা।খুব একটা খারাপ হয়নি নামটা কি বলেন?)

রেযা উঠে পড়ল আর কথা না বাড়িয়ে।গাড়ী ছাড়ল রহমান।
ঢাকার কোন এক পাঁচতারার পার্কিং এ ঢুকে নীলা ওকে নামতে বলল।
-এইখানেই কি দেখা করবে।
-হ্যা।আজকের লাঞ্চে আমরা উনার অতিথি।চল,চল।দেরি হয়ে গেছে।

মিরাজ় সাহেব বসে ছিলেন লাউঞ্জে নীলার অপেক্ষায়।রেজা দেখল ভদ্রলোক অত্যন্ত মার্জিত আর সুপুরুষ।আন্তরিক হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন দুজনকে।নীলাই শুরু করল আলাপ।
-কেমন আছেন।
-ভালো।আপনাকে দেখার পর খুবই ভাল।আপনি কেমন?
-ভালো না।এর নাম হচ্ছে রেজা।আমার বন্ধু।
-আচ্ছা।কেমন আছেন রেজা?
রেজা কিছু বলার আগেই নীলা বলল মিরাজ সাহেব আমি আর রেজা আজকে বিয়ে করতে যাচ্ছি।আপনার কাছে এসেছি কারন আপনি ওকে এখনই একটা চাকরি দিবেন যাতে গাধাটা আমাকে নিয়ে ঢাকাতে মোটামুটি ভদ্রভাবে সংসার করতে পারে।রেজা হতবাক হয়ে শুনছিল।মিরাজ সাহেব কিন্তু একটুও চমকালেন না।মৃদু হাসিটি একটু মিলিয়ে গিয়েই আবার ফিরে এল ঠোটের কোনে।
-আংকেল কে বলছেন না কেন।
-কারন ও হবু শশুর এর কাছ থেকে কিছু নিতে পারবেনা।গাধাটার যন্রনায় আমি অস্তির।
-কি রেজা সাহেব নীলা কি বলছে শুনছেন তো।আপনি রাজী?

হঠাৎ কোথা থেকে হু হু করে দমকা বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার মত ভালবাসা এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো রেজাকে।অদ্ভুত এক সাহস নিয়ে নীলার হাতটা ধরল।চল নীলা।
-আরে দাঁড়ান দাঁড়ান কোথায় যাচ্ছেন? আজকের এই দিনে আপনারা আমার অতিথি।Please be my guest.
এরপর ঘটনা অতিদ্রুত ঘটল।ঘটল না বলে মিরাজ সাহেব ঘটালেন বললে ভাল হয়।পাঁচতারায় গানা বাজল বাদ্য বাজল নীলা রেজার মা বাবা চাচা খালু সবাই এসে হাজির হলেন।আনন্দ হল হাসি হল খানা হল পিনা হল।
অবশেষে বিয়েও হল।
তারপরে বর কনে হানিমুন এ কোথায় যেন উড়ে গেল।

**আমরা এখন বসে আছি কবে facebook এ তাঁদের আনন্দমুখর দিনের ছবি দেখতে পাব

(পাঠক/পাঠিকা,এটাই বোধহয় Fantasy.সকালে যে ছেলেকে দেখা গেল শাহবাগ থেকে গুলশান যেতে চিন্তা করছে রাতে দেখা গেল সে নীলাকে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে অন্যদেশে।Realityর গল্প না হয় অন্যদিন করব।সবাই ভাল থাকুন।সবার Fantasy Reality তে রুপান্তরিত হোক।ভালো থাকুন।)
৩৬টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×