somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি অতি বিপদজনক শহর।

০৭ ই মে, ২০১০ ভোর ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরাধ পরিসংখ্যান বলে যে বিশ্বের এই শহরগুলোতে অপরাধের মাত্রা অন্যসব শহরের তুলনায় অত্যন্ত উচ্চ। হত্যা, ডাকাতি, রাহাজানির মতো অপরাধসমূহের উচ্চ মাত্রার কারণে এই শহরগুলোকে খুব সহজেই ‘খুন ও বিশৃঙ্খলার নগরী’ বলে আখ্যায়িত করা যায়। তবে অপরাধের উচ্চ মাত্রা থাকা সত্বেও এই শহরগুলোর কোন কোনটা এখনও পর্যটকদের তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

১) মোগাদিশু, সোমালিয়া:



সোমালিয়ায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারী হুশিয়ারির যথার্থতা এক্ষেত্রে খুবই পরিষ্কার। সন্ত্রাস, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক জাতিগত সহিংসতা, অপহরণ ও উপকূলীয় জলদস্যুতার কারণে আফ্রিকার এই দেশটি অত্যন্ত বিপদজনক। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশু উল্লেখিত অপরাধগুলোর কেন্দ্রভূমিও বটে। জাতিগত যুদ্ধের কারণে নগরীটি ইতোমধ্যে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের হিসাবমতে যুদ্ধক্ষেত্ররূপ নগরীটির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (৫ লক্ষ) ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছে। পুনঃপুনঃ বোমা হামলার কারণে প্রতিদিন শহরে কয়েক ডজন মানুষ আহত হয় এবং তাদের অনেকেই মারা যায়।
সেই ১৯৯১ সালে যখন প্রেসিডেন্ট সিয়াদ বারের পতন হয় তখন থেকে সর্বনেশে গৃহযুদ্ধের কারণে আজ অবধি সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোগাদিশু যে আজ বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক একটি শহর এই ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ এখন আর নেই।

২) সিউদাদ জুয়ারেজ, মেক্সিকো:



মনোমুগ্ধকর ইতিহাস এবং চমকপ্রদ দৃশ্যাবলির কারণে যদিও মেক্সিকো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন তীর্থ তারপরেও মেক্সিকোকে আজ ডাকাতি, অপহরণ, যৌন হয়রানি এবং মাদকদ্রব্যের মতো সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। চিহুয়াহুয়া প্রদেশ এতে সবচেয়ে খারাপভাবে আক্রান্ত এবং সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সিউদাদ জুয়ারেজ শহর।
সিউদাদ জুয়ারেজ শহরটি মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এর জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ কিন্তু অতি মাত্রার সংঘাতের কারণে শহরটি সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কুখ্যাতি অর্জন করেছে। মাদক সরবরাহকারী গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘাতপূর্ণ সহিংসতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে যা স্থানীয় জনসাধারণ এবং পর্যটকদের জন্য এক চরম হুমকি।
২০০৭ সালের জানুয়ারী থেকে আজ অবধি মেক্সিকোতে প্রায় ৮৩০০ টি মাদকদ্রব্য সম্পর্কিত হত্যাকান্ড রেকর্ডকৃত হয়েছে যার শতকরা ৫০ ভাগই সিউদাদ জুয়ারেজে সংঘটিত হয়। পরিসংখ্যানমতে শহরের প্রতি ১ লক্ষ অধিবাসীর বিপরীতে খুনের সংখ্যা প্রায় ১৩০ এবং এটিই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম খুনের মাত্রা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাদেশিক বিভাগের ভাষ্যমতে ২০০৮ সালের জানুয়ারী থেকে আজ অবধি শহরটিতে প্রায় ১৮০০ টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে।

৩) কারাকাস, ভেনিজুয়েলা:



ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাস বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিন একে ‘বিশ্বের খুনের রাজধানী’ বলে আখ্যায়িত করেছে। দাপ্তরিক হিসাবমতে ২০০৮ সালে শহরের প্রতি ১ লক্ষ জন অধিবাসীর বিপরীতে খুনের হার ছিল ১৩০।
সি.এন.এন. রিপোর্ট অনুযায়ী কেবল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরেই শহরটিতে খুন হয়েছে ৫১০ জন। শুধুমাত্র মাদক ব্যবসা এবং অপরাধী চক্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতই খুনের এমন উচ্চমাত্রার উত্থানের একমাত্র কারণ নয়, সেই সাথে শহরের ৪০ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দরিদ্রও এর অন্যতম প্রধান কারণ। বেশির ভাগ খুনই শহরের দরিদ্রতর অঞ্চলগুলিতে সংঘটিত হয়। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে এই শহরের দারিদ্রের হার ৬৫% থেকে ৩০০% এ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও তেল ক্ষেত্রের সম্প্রসারণের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে তারপরেও দেশটিতে দরিদ্রের হার এখনও অনেক উচ্চ।

৪) নিউ অরলিন্স, যুক্তরাষ্ট্র:



যুক্তরাষ্ট্রের অন্যন্য শহরগুলোর তুলনায় নিউ অরলিন্সে খুনের হার অত্যধিক যার কারণে অনেক সময় নিউ অরলিন্সকে যুক্তরাষ্ট্রের খুনের রাজধানী বলেও অভিহিত করা হয়। এই শহরের প্রতি ৩ লক্ষ জন অধিবাসীর বিপরীতে খুনের হার ১৭৯ জন। তবে ২০০৭ সালের তুলনায় ২০০৮ সালে ১৫% খুন কম হয়েছে বলে পরিসংখ্যান প্রদর্শন করে।
এফ.বি.আই. এর তথ্য ও উপাত্তমতে সেখানে প্রতি ১ লক্ষ জন অধিবাসীর বিপরীতে খুনের সংখ্যা ৯৫ জন যেখানে নিউ অরলিন্স পুলিশ অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে প্রতি ১ লক্ষ জন অধিবাসীর বিপরীতে খুনের হার ৬৭ জন। প্রখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ইরাকের বাগদাদ নগরী এবং নিউ অরলিন্সের মধ্যে একটু তুলনামূলক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে বাগদাদে প্রতি ১ লক্ষ জন অধিবাসীর বিপরীতে খুনের হার ৪৮ জন। যা এটাই প্রমান করে যে নিউ অরলিন্সের তুলনায় বাগদাদ নগরী অধিকতর নিরাপদ।

৫) কেপ টাউন, দক্ষিন আফ্রিকা:



অনেক কাল আগে থেকেই দক্ষিন আফ্রিকার স্থানীয় অধিবাসী এবং পর্যটকদের জন্য অপরাধ অনেক বড় একটা সমস্যা হিসেবে মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে। সেখানকার বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় হত্যাকান্ড এবং ডাকাতি মাত্রা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়ে গেছে।
দক্ষিন আফ্রিকায় এখনও গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ টির মতো খুন হয় যদিও এটা খুনের হার ৩.৪% এ হ্রাস পেয়েছে বলে প্রদর্শন করে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তমতে সেখানে ৭১,৫০০ টি যৌন অপরাধ (১০% বৃদ্ধি), ১৮,৪০০ টি সিঁধ কেটে চুরি (২৭% বৃদ্ধি), ১৩,৯০০ টি ব্যবসায়িক ডাকাতি (৪১% বৃদ্ধি) সংঘটিত হয়েছে।
যদিও কেপ টাউনের একটি চমৎকার ভৌগলিক অবস্থান আছে তারপরেও ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যাকান্ডের উচ্চমাত্রার কারণে এটি দক্ষিন আফ্রিকার অন্যতম শীর্ষ বিপদজনক শহর হিসেবে পরিচিত। সেখানে প্রতি ১ লক্ষ জন অধিবাসীর বিপরীতে খুনের হার ৬২ জন।
পুলিশের হিসাবমতে বেশিরভাগ খুনের ঘটনাগুলো শহরের দরিদ্রতর এলাকাগুলোতে সংঘটিত হয়। যার কারণে সেখানে একা একা ভ্রমণ করা কিংবা রাতের বেলা এ.টি.এম. কার্ড ব্যবহার করাকে সব সময় নিরুৎসাহিত করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:৫১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×