somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার পাড়াতো ভাই আশরাফুল সম্পর্কে নষ্ট্রাডমাসের আত্মীয় জেমি সিডন্সের ভবিষ্যৎবাণী, সাংবাদিকগণের বিরুদ্ধে অভিযোগ (!) এবং প্রাসঙ্গিক একান্ত প্যাঁচালগাঁথা

০৬ ই মে, ২০১০ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালকের ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও, কোচ জেমি সিডন্স কিন্তু জিতেছেন! ভদ্রলোকের সঙ্গে নষ্ট্রাডমাসের কোনো বংশগত সম্পর্ক আছে কী না জানা নেই। হয়তো থাকতেও পারে। নইলে আর এমন ভবিষ্যৎবাণী করলেন কী করে?

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হারে দুঃখ পাওয়া ভুলেছি বহু আগেই। ডাকসাইটে কিংবা এলেবেলে- প্রতিপক্ষ যেমনই হোক, বাংলাদেশ হারবে- এটাই বুঝি অমোঘ নিয়তি। অস্বাভাবিক ঘটনা তো মাঝেমধ্যে ঘটেই, সে হিসাবে বাংলাদেশ জিতে যায়। কিন্তু তা তো গোণার মধ্যে ধরা যায়না। তাই বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই নতুন একটা হারের তিক্ত স্বাদ আস্বাদন।

আমাদের দেশে আশাবাদী মানুষের অভাব নেই। তাই এই হারগুলোকেও অনেকে আগামীতে উন্নয়নের সোপান হিসেবে বিবেচনা করতে চান। আমি ব্যাক্তিগতভাবে হতাশাবাদী মানুষ। মনে করি, যে পারে সে শুরু থেকেই পারে। ‘লড়াই করে হারা’ জাতীয় সান্ত্বনায় সন্তুষ্ট হাতে পারিনা তাই। আমার কাছে হেরে যাওয়া মানে স্রেফ হেরে যাওয়া, সেটা লড়াই করেই হোক আর লড়াই না করেই হোক। পরাজিতরা ইতিহাসে পরাজিত হিসেবেই টিকে থাকে, বীর হিসেবে না।

পাকিস্তানের বিপরেক্ষ ম্যাচটাতে বাংলাদেশের ‘লড়াই করে হেরে যাওয়া’টা তাই আমাকে আপ্লুত করেনি। তবে আশরাফুলের পারফরমেন্স আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। সাকিবও ভালো খেলেছেন, তবে সেটা নিয়ে তেমন উদ্বলিত হই নি; কারণ সাকিব নিয়মিতই এমন পারফরমেন্স করে চলেছেন। বরং হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারায় বিরক্ত হয়েছি তার ওপর। বিরক্ত হয়েছি মাশরাফির কর্মকান্ডেও। মাশরাফি অনেক ভালো খেলোয়াড়, আমার অন্যতম প্রিয় খেলোয়াড় এবং তাকে ইনজুরি থেকে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া উচিত-সব মানলাম। কিন্তু বিশ্বকাপের মত গূরত্বপূর্ণ একটা আসরে মাশরাফি বিষয়ক নীরিক্ষাটা কী না চালালেই কী হতো না! আশরাফুলের ইনিংসের মুগ্ধতায় বাকিদের নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ হয়নি। পুরনো আশরাফুলকে ফিরে পাওয়ার আনন্দটা একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই প্রকট ছিল, কারণ আশরাফুল এখন বনশ্রীতে থাকেন! পাড়াতো ভাইয়ের সাফল্যে আনন্দিত হওয়ায় নিশ্চয় দোষের কিছু নেই।

তবে আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোকে দোষারোপ করায় বেশ মেজাজ খারাপ হয়েছিল জেমি সিডন্সের ওপর। তারচেয়েও বেশি মেজাজ খারাপ হয়েছে ‘আশরাফুল আগামী ম্যাচেই শূণ্য রানে আউট হবে’, বলে ভিনদেশী এই কোচ যে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন তা শুনে। স্বাভাবিকভাবেই আমার চেয়েও বেশি ক্ষেপেছে সংবাদমাধ্যমগুলোই। কেবল নীতিবিরোধী এবং অভদ্রস্থ হয়ে যায় বলে সিডন্স খাঁটি বাংলা গালির হাত থেকে বেঁচে গেলেন। তারপরও খুব কম লেখেনি পত্রিকাগুলো। কম বলেনি চ্যানেলগুলোও। বলতে গেলে ভদ্রভাবেই তাকে একপ্রস্থ বাঁশ প্রদান করা হয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও দেখলাম একটা পত্রিকায় কোচের এই বক্তব্যের বিপক্ষে বেশ জ্বালাময়ী একটি লেখা লিখেছেন। লিখতেই পারেন। একটা ম্যাচে সবচেয়ে ভালো পারফরমেন্স করা খেলোয়াড়টি সম্পর্কে কোচ যদি বলেন আগামী ম্যাচেই সে শূণ্য রানে আউট হবেন-তবে তো ভক্তদের রেগে ওঠার যথাযথ কারণ থাকেই। ফারুকী অবশ্য অনেক বেশি ক্ষেপেছিলেন, তাই একেবারে কোচের পদত্যাগই দাবি করে ফেলেছিলেন। তবে তার লেখাটা অত্যন্ত উপাদেয় হয়েছিল বলে স্বীকার করতেই হবে।

কাকতালীয়ই হোক বা অন্যকিছু(!)-কালকের ম্যাচে যেন কোচের কথা রাখলেন আশরাফুল। আউট হলেন শূণ্য রানেই। আগের ম্যাচের সবচেয়ে ভালো পারফরমার করলেন সবচেয়ে খারাপ পারফরমেন্স। তাতে তারওপর আমার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই। একজন খেলোয়াড় ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরমেন্স না করতেই পারেন। বিরক্তি নেই জেমি সিডন্সের ওপরও।

তবে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর বিরক্ত হওয়ার বিশেষ কারণ খুঁজে পাচ্ছি। আশরাফুলের বিরুদ্ধে কোচের ভবিষ্যৎবাণী শুনে সব সংবাদমাধ্যই সিডন্সের সমালোচনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কাল যখন সিডন্সের কথাটাই ফলে গেল, তখন আশ্চর্য নীরবতায় পুরো সংবাদমাধ্যম। প্রতিদিনের মত আজ সকালেও দেশের শীর্ষস্থানীয় ছয়টি পত্রিকা খুলে মোটামুটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কোত্থাও নেই আশরাফুলের ব্যর্থতার কাহিনী। সবাই সযত্নে পাশ কাটিয়ে গেছে বিষয়টাকে!

সিডন্সের ওপরের রাগটা তাই আজ সকালেই উধাও হয়ে গেছে। যে দেশের সংবাদমাধ্যম এমন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এভাবে চেপে যায়, সে দেশের সাংবাদিকদের বিপক্ষে একজন ভিনদেশী মানুষের অভিমতটা তো নিশ্চয় সম্মানজনক কিছুই হতে পারেন না। আবেগকে মূল্য দিতে গিয়ে নিজেদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি আমরা, অন্যদেশের মানুষও তাই অনায়াসেই চরম অপমানজনক মন্তব্য করতে পারে আমাদের দেশ, আমাদের সংবাদমাধ্যম, আমাদের দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি আমাদের বিপক্ষে। নীরব শ্রোতা হয়ে সেসব মন্তব্য হজম করা ছাড়া আমাদের করার আর কিছুই থাকে না। কারণ ওসব মন্তব্য করার উপলক্ষ এবং সাহসের যোগানদাতা তো আমরা নিজেরাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১০ রাত ১০:৩৭
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×