somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাওর ভর্তি পানি কৃষকের চোখ ভর্তি জল,কৃষকবান্ধব সরকার কার স্বার্থ রক্ষা করলো ?

০৬ ই মে, ২০১০ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিগত চারদলীয় জোট সরকার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতি কমাতে গ্রহণ করে কার্যকর ও ফলপ্রসু পিআইসি বিভিন্ন হাওরের স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মাণ করার ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি অনেকটাই হ্রাসপায় ও রক্ষা পায় জেলার একমাত্র বোরো ফসল। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঠিকাদারী পদ্ধতিতে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কারণে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছেন অপর দিকে ঠিকাদারা লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন। পিআইসি পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মাণে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়। পিআসি পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃত কম টাকা খরচ করে ফলপ্রসু বাঁধনির্মিত হয়। কারণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় জড়িতদের সবাই সংশ্লিষ্ট হাওরের পাড়ের কৃষক,শ্রমিক,জনপ্রতিনিধি। তাই কাজে ইচ্ছে করলেও অবহেলা,অনিয়ম,দুর্নীতি করার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এছাড়া ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়লে সংশ্লিষ্টদের পালিয়ে যাওয়ার কোন পথ থাকে না কারণ যিনি প্রকল্পের চেয়ারম্যান তার বসত বাড়ি ঐ হাওরের কোন এক গ্রামে তাই দরদটাও অন্যদের চেয়ে বেশী থাকে। বর্তমানে দরপত্রের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকার ঠিকাদারগণ লটারীতে অংশগ্রহণ করে বাঁধ নির্মানের কাজ পায়। তারা কোন মতে কাজ শেষ করে সাইট ছেড়ে চলে আসেন বিল তুলতে। যেহেতু ঐ ঠিকাদারের এখানে কোন জমিজামা নেই এজন্য তার কাজের প্রতি তার দ্বায়বদ্ধতাও কম থাকে। ফলে যা হবার তাই হয় পানি আসার আগেই ঠিকাদার উধাও। পরে জনসাধারণ নিজেদের স্বার্থে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বাঁধে মাটি ফেলে। আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের সময় মাঠে সেনাবাহিনী থাকায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিয়ে ছিলো। সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রত্যেক সেনা সদস্য বাঁধ রক্ষার কাজে তৎপর ছিলেন। সেই সাথে তারা নিজেরা কারও অপেক্ষায় না থেকে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে যেতেন এজন্য হাওরের ফসল রক্ষা পায়। দলীয়করণ, ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোনবছরই পরিপুর্ন কাজ হয় না বাঁধের। ২০০৫ সালে পিআইসি পদ্ধতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ে ভালো কাজ করেছে। ফলে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পেরেছে কৃষক। সুনামগঞ্জের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পর্বত,দক্ষিণে ত্রিপুরা পাহাড়, পূর্বদিকে মণিপুর রাজ্যের সুউচ্চ ভুমি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পাহাড়ীঢলের পানি এসে জমা হয় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদনদী ও হাওরে। প্রকৃতিগত ভাবে মার্চ মাসের শেষ দিকে ও এপ্রিল মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। হওরাঞ্চলের নদী গুলোর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বৃষ্টির পানি দুকুল ছাপিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন ফসলী হাওরে কিন্তু এ পানি আটকে রাখার জন্য প্রতিবছর ঘটা করে নির্মাণ করা হয় ফসল রক্ষাবাঁধ। তবে সময় মতো বরাদ্ধ না পাওয়া, প্রক্রিয়াগত কারণে দীর্ঘসুত্রিতা সহ নানাবিদ কারণে সঠিক সময়ে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু ও শেষ করা যায় না। ফলে হাওরপাড়ের মানুষ পিআইসি পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মাণ কে ভালো ভাবে গ্রহণ করে ছিলো। ২০০৫ সালে এ পদ্ধতিতে কাজ করার বেশ সফলতা অর্জন করেছিলো। ফসল তলিয়ে গেলে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের গদবাধা দোষ দিয়ে পার পেয়ে যায় সবাই পার পায় না শুধু কৃষক। তাঁকে দেনার টাকা ঘর,গরু, জমি বিক্রী করে ঠিকই পরিশোধ করতে হয়। আগাম বন্যার পদধ্বনি শুনামাত্রই ঠিকাদার নিখোঁজ হয়ে যান। বাঁধ নিমার্ণের ক্ষেত্রে ৩০% কাদা,৪০% পলি,৩০% বেলে মাটি ব্যবহারের কথা থাকলেও তা সম্পুর্ণভাবে মানেন না ঠিকাদার। মাটিয়ান,শনি,হালী,নলুয়া,কানলার হাওরের অসংখ্য কৃষক ও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বিষয়টি নিয়ে বললে তারা এক বাক্যে পিআইসি পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মাণের পক্ষে কথা বলেছেন। তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ও পিআইসি পদ্ধতিতে ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গেঁ বলেছিলেন, পিআইসি একটি কার্যকর,সাশ্রয়ী ও ফলপ্রসু পদ্ধতি বলে মন্তব্য করে ছিলেন। সে সময় সুনামগঞ্জে কর্মরত জেলা প্রশাসক মোঃ জাফর সিদ্দিক,অকাল প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান মমিনূল মউজদীন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পিআইসি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবের কথা বলে ছিলেন। বর্তমান সরকারের কাছে কৃষক বান্ধব সরকার ফসলহারানো কৃষকের দাবি পিআইসি পদ্ধতিতে ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণের। সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওর কে সাপের মতো পেঁচিয়ে রেখেছে অসংখ্য নদী,খাল-বিল। নদীগুলো হাওরের প্রাণ। শুধুমাত্র হাওরের ফসল রক্ষা পেলে দেশের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের ৩ ভাগের ১ ভাগ পুরন হয়। হাওরে অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ নির্মাণ ও পাউবোর অব্যবস্থাপনার জন্য কোটি কোটি টাকার খাদ্যশস্য পানিতে ভেসে যায়। ফসল তলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষকের সুখ স্বপ্নের চারাগাছটিও মৃত্যু মুখে পতিত হয়। সেই সাথে পসল রক্ষাবাঁধের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধও বানের জলে ভেসে যায় মধ্যভাগে লাভ হয় ঠিকাদার ও পাউবোর একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীর। কৃষকের জন্য পড়ে থাকে পাহাড়সম হাহাকার। সুনামগঞ্জ পানিউন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, পিআইসি পদ্ধতির মাধ্যমে ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হলে মানুষের উপকার হবে। পাউবো নিজেও অনেকটা শান্তি পাবে। তাই হাওরাঞ্চলের নদীখনন করে নব্যতা ফিরিয়ে আনা ও আগামবন্যার হাত থেকে একমাত্র বোরো ফসলরক্ষা একান্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন হতভাগা সুনামগঞ্জবাসী।






৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×