somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরমে গরম খবর (রিপোস্ট)

০৫ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্করের ফুট ওভার ব্রিজের গোড়ায় পলিথিনের চাটাই বিছিয়ে দৈনিক, সাপ্তাহিক, ত্রৈয় মাসিক, মাসিক সহ দেশ বিদেশের হরেক রকম পত্রিকা ম্যাগাজিন আর ট্যাবলয়েড বিছিয়ে বসে আছেন এক বয়স্ক হকার- স্টলের পাশ দিয়ে হাটতে গিয়ে তার একটু অন্যরকম কথা শুনে গতি স্লথ করলাম।
-‘ভাইরা এই গরমে পয়সা খরচ করে গরম গরম খবরের পত্রিকা কিনে আর আর গরম বাড়াবেন না গাটের পয়সা খরচ করে অযথা কেন এই গরমে আর ক্লান্ত হবেন তার থেকে সেই পয়সায় এক কাপ গরম চা কিনে খান- গরমে গরমে কাটাকাটি। সাস্থ্যও ভাল হবে মনটা হবে ফুরফুরে চাঙ্গা! আপনাগো দোহাই লাগে পত্রিকা কিনেন না।‘
কি বলে এই লোক! কেন তার এই নেগেটিভ প্রচারনা?’ -এই গরমে মনে হয় লোকটার মাথাটাই গ্যাছে!
ঘন ঘন লোড শেডিং – ইলেকট্রিসিটির(নাকি শাসকদের) ভানুমতির খেলে নাগরিক জীবন দিশেহারা!
মাথার উপর সূর্যদেবের অকৃপন হাতে তাপ ও আলো বন্টন-আছে ঘেন্না ধরা জ্যাম। গাড়ির গড় গড় ঘরঘর ঘ্যা ঘ্যা ট্যা ট্যা পো পো ভো ভো শব্দ! ধুলা বালির মচ্ছব। প্যাচ প্যাচা ঘাম আর প্রকৃতির যত বিটকেলে পতঙ্গ কুলের উৎসব মুখর বিনোদন।
যাবো কোথায়? সব খানেই অশান্তি!লোড শেডিং এর উৎপাতে ফ্রিজে নেই ঠান্ডা পানি-গরম খাবার দু ঘন্টাতেই উৎকট সুগন্ধ ছড়ায়।
রাস্তায় সিজনাল হকাররা সুবিধে মত তাদের পেশা বদল করেছে। ফালি করে কাটা আধপচা তরমুজ আনারস বিক্রি হচ্ছে দেদারসে সঙ্গে শশা আর গাজরের বিক্রি বাট্টাও কম না। কাচা আমের ভর্তার পাশে অপুস্ট জাম-ও গাদা মেরে বসে আছে মুখ ভার করে। আবার কারখানার রঙ মেশানো শরবত আর আখের রসের কাটতিও মন্দনা।
আমরা ভদ্দনোকেরা ওদিকে হাত বাড়াই কম- এমনিতেই ভেজাল খেয়ে হাজারো রকমের পেটের সমস্যা তার উপরে এই নোংড়া খেয়ে দ্বীগুন উদ্যমে ছোট ঘরে ছুটি আরকি!
ডাবটা মোটামুটি ভদ্রস্থ পানীয়। কিন্তু অজ্ঞান পার্টির ভয় আর দামের কারনে হাত বাড়াতে গিয়েও থমকে যাই।দোকানে গিয়ে এক বোতল ঠান্ডা পানি চাইলে দোকানী মুখ ব্যাজার করে বলে- পানি ফ্রিজে রাখি না। অগত্য একটা আইসক্রিম-ই চলবে। সেটাও থাকে আধগলা। ফ্রিজে ঠান্ডা হয়ে জমার সুযোগ পায়নি বলে।
রিক্সা ওয়ালাদের মেজাজ খারাপ –গন্তব্য না চিনে ভাড়া চায় উল্টা পাল্টা। মেজাজ না খিচড়ে উপায় আছে?
আর অটো রিক্সা চালকেরাতো ভিন গ্রহের কোন যান নিয়ে বসে আছেন। অতি মোলায়েম সুরে ভাই চাচা বলে গন্তব্যের কথা বললেই হাত নেড়ে বলে যাবনা। কেউ কেউ আবার হাত নাড়তোও দ্বীধাবোধ করে টু শব্দ না করে গুম মেরে বসে থাকে। অতি দয়া পরবশত কেউবা রাজি হলেও ভাড়া শুনে সারাদিনের বাজেট মেলাতে হিম সিম খাই। কি আর করার এই অভাগা শেষ মেষ বাসে যেতেই মনস্থির করে।
কলেজ গেটের সিগন্যালে মওকামত এক পত্রিকার হকার চড়ে বসল।
দুপুর বেলায় এরা আর দামি পত্রিকা বিক্রি করে না। দুই টাকার পত্রিকায় খবর আর মনোরঞ্জনের অভাব নেই। কার দায় ঠেকেছ অত দামী পত্রিকা কিনে পাশের যাত্রীকে মুফতে পড়াবেন।
‘আহেমেদিজানের মার্কিন শাসকদের উদ্দশ্য করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা।
বিরোধীদলের নির্বাচন বয়কটের হুমকি,বিদ্যুৎ গ্যাস পানি নিয়ে বড় আন্দোলনের পূর্বাভাস এই সব গরম গরম হেডিং বলে হকার ব্যাবসার কথায় আসল, বসুন্ধরা গ্রুপের নতুন পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন’ মাত্র দুই টাকা মাত্র দুই টাকা। কেউ নেবেন ভাই?
‘পুরা পেপার ভর্তি গরম খবর- মাত্র দুই টাকা!
কেউ একজন পিছন থেকে ডাকল’এই এইদিকে আয়’
হকার পত্রিকা বিক্রির আসায় এগিয়ে গেল সেই যাত্রীর উদ্দশ্যে ‘কি পত্রিকা নিবেন?’
‘না- তোরে জিগাই এই গরমে এত গরম খবরের দরকার কি-পাবলিকে শুনতে চায় তরমুজ আম বাঙ্গীর দাম কমল কিনা।যা খাইলে প্রানটা জুড়ায়। পত্রিকা আলাগো কইতে পারস না এই খবর গুলা যেন হেডিঙ এ দেয়।‘
কথা শুনে হকারের মেজাজ সপ্তমে। খোলা পত্রিকা গুটিয়ে নেমে যেতে যেতে ভীষন আক্রোশে বলতে শুনলাম, ওই গুলা ছাপাইলে একখান পেপারও কিনব না কেই-পেপারে আম জামের খবর ছাপায় আর আমরা সেইগুলা দিয়া ভাত রাইন্ধ্যা খাই।‘
বাস তখনো থেমে আছে সেই সিগন্যালে – আচমকা হৈ হুল্লোড়ে বা দিকে তাকিয়ে দেখি আরেক বাসে দমাদম কিল ঘুষি চলছে হেল্পার আর যাত্রীর মধ্যে।
এই গরমে মেজাজ খিচড়ে থাকে সারাক্ষন -এইরকম মার পিট হওয়াটাইতো স্বাভাবিক।



১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×