somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ কবিতা

০৫ ই মে, ২০১০ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল: ফেদেরিকো গার্থিয়া লোরকা
অনুবাদ: জুয়েল মাজহার
ইগনাসিও সানচেস মেহিয়াসের জন্য বিলাপ
(Llanto Por Ignacio Sanchez Mejias)

১. জখম ও মৃত্যু
(La Cogida y la Muerte)

ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা।
কাঁটায় কাঁটায় বিকেল পাঁচটা।
এনেছে ছেলেটা শাদা এক থান
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
রয়েছে সাজানো লেবুর ঝুড়ি একখানা
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
বাকিটা মৃত্যু এবং কেবলই মৃত্যু সে।

বাতাস উড়িয়ে নিয়েছে উল কার্পাসের
যখন ঘড়িতে বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
আর অক্সাইড-গুঁড়ো-ছিটানো
উড়লো কাচ আর নিকেল
ঘড়িতে যখন বাজলো বিকেল পাঁচটা।
লড়াইয়ে এখন মেতেছে ঘুঘু ও চিতাবাঘে
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
গুঁতোগুঁতি করে ঊরুতে একটি একাকী শিঙ
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
আর উদারায় বাজলো তার
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
বিষের ঘণ্টা বাজলো আর উঠলো ধোঁয়া
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
কোনায় কোনায় জমাট নীরবতা
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
আর এলো ওই তুঙ্গ-হৃদয় একাকী ষাঁড়!
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
বরফ তখন অতিরিক্ত ঝরালো ঘাম
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা,
ষাঁড়-লড়াইয়ের বৃত্ত যখন আয়োডিনে ছয়লাপ
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
জখমের ’পর মৃত্যু তার পাড়লো ডিম
বিকেল পাঁচটায়।
বিকেল পাঁচটায়।
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা ।

চাকায় বসানো শবাধার এক শয্যা তার
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
কানে বাজে ওই বাঁশি ও হাড়ের অনুরণন
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
এখন তার কপাল ফুঁড়ে হাম্বা হাম্বা ডাকছে ষাঁড়
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
সারা ঘর করে যাতনায় ঝিলমিল
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
পচা-ক্ষত এক আসছে এখন দূর থেকে
ঘড়িতে যখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
সবুজাভ ওই কুঁচকি ফুঁড়ে জাগে পদ্মের একটি শুঁড়
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
ক্ষতেরা যখন সূর্যের মতো জ্বলছে, আর
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
ঘড়িতে তখন বেজেছে বিকেল পাঁচটা।
আহা, নিদারুণ সেই বিকেলের পাঁচটা!
[সকল ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা!]
গাঢ় বিকেলের ছায়ায় তখন পাঁচটা!

২. ঝরে-পড়া রক্ত
(La Sangre Derramada)

আমি তা দেখবো না!

চাঁদকে বোলো, আসুক সে,
ইগনাসিওর রক্ত আমি
দেখতে চাই না বালির ’পর।

আমি তা দেখবো না!

হাঁ-খোলা চাঁদ।
অনড় মেঘমালার ঘোড়া, আর
উইলোর বেড়া-ঘেরা
স্বপ্নের ধুধু ষাঁড়-লড়াইয়ের বৃত্তটা।

আমি তা দেখবো না!

স্মৃতি আমার উঠুক জ্বলে!
অমল ধবল হাস্নুহেনায়
ছড়াক তার উষ্ণতা!

আমি তা দেখবো না!

আদি পৃথিবীর সেই গাভীটা
বালিতে গড়ানো লোহু-ভেজা সেই নাকে
বোলালো তার বিষাদমাখা জিভ,
আর যতো ষাঁড় গিসান্দোর
মৃত্যু তারা অংশত, পাথর তারা অংশত,
যেন তারা তুলছে ঢেঁকুর দু’শো বছর ধরে
এই দুনিয়ার চ’রে বেড়ানোর সুখে
না,
আমি তা দেখবো না!

নিজের মৃত্যু নিজের কাঁধে নিয়ে
ইগনাসিও উঠলো ধাপে ধাপে।
সে করেছে ভোরের সন্ধান
কিন্তু সে-ভোর পেল না খুঁজে আর।
খুঁজলো সে তার দীপ্ত মুখচ্ছবি
স্বপ্ন তাকে করলো বিহ্বল
খুঁজতে নিজের সুন্দর দেহখানি
নিজ রক্তের দেখলো সে উদ্গার।
বোলো না আমায় দেখতে একে আর!
ক্রম-নিস্তেজ ফিনকি সে-রক্তের
চাইনে আমি শুনতে বারবার:
আসনের ধাপ রক্ত-আলোয় হাসে
আর সে-লোহু ছিটকে গিয়ে পড়ে
তর-না-সওয়া হাজার লোকের
পোশাকে ও পাদুকায়।
চেঁচিয়ে কারা আমায় কাছে ডাকে!

বোলো না আমায় দেখতে একে আর !

দেখলো যখন আসছে ধেয়ে শিঙ
তখনো চোখে পড়েনি পলক তার,
সর্বনাশী মায়েরা তবুও সবে
তুললো তাদের মাথা।
আর গোপন স্বরের এক হাওয়া
উঠলো আর পেরলো খামার ষাঁড়ের,
রাখাল যতো হাল্কা কুয়াশার
চেঁচাল দিব্য-ষাঁড়কে লক্ষ্য করে।
ছিলো না এমন রাজার দুলাল কোনো
তুলনীয় তার হতে পারে সেভিয়ায়
তারটির মতো এমন তরবারি
এমন খাঁটি হৃদয় ছিলো না কোনো।
সিংহযুথের মতোন প্রবল ছিল
অবাক করা শৌর্যবীর্য তার,
মার্বেলে গড়া যেনবা ধড় এক
পরিমিত আর ছিল সুনির্ণিত।
আন্দালুসীয় রোমের গরিমা তার
মোহন শিরে করলো ঝলমল;
যেখানে মেধা ও সরস কৌতুকে
হাসিখানি তার হয়েছে সুরভিলতা ।
লড়াই-রিঙে কতো বড়ো মাতাদোর!
পাহাড়ি দেশের সুজন কৃষাণ এক!
কতো না দক্ষ ফসলের গোছা হাতে!
ঘোড়ার পিঠে কেমন অকুতোভয়!
শিশির-ছোঁয়ায় কেমন পরিস্নাত!
কতো ঝলমল আনন্দ উৎসব!
অন্ধকারের বান্দেরিয়া হাতে
কেমন মোহন রূপের বাহার তার!

অথচ এখন দিয়েছে সে কালঘুম।
ধ্রুব আঙুলে শ্যাওলা আর ঘাস
ফোটায় আজ তার করোটির ফুল।
গান গেয়ে তার রক্ত বেরিয়ে আসে;
গায় তৃণভূমি এবং জলার সাথে,
হিমায়িত শিঙে সে-গান গড়িয়ে নামে,
আত্মারা টলে সেই ঘন কুয়াশায়
হাজার খূরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে,
যেন দীঘল, কালো, বিষণ্ন জিভ,
বেদনার এক গড়েছে পুষ্করিণী
পাশে তারাভরা গুয়াদাল্কিভির;
আহা, স্পেনের ধবল প্রাচীরখানি!
আহা, বেদনার কালোবরণ ষাঁড়!
আহা রে, জমাট ইগনাসিওর খুন!
আহা রে, তার ধমনীর বুলবুল !
না।
আমি তা দেখবো না!

একে বুকে ধরে এমন পেয়ালা নেই,
একে পান করে এমন চাতক নেই,
আলোর তুহিন পারে না জুড়াতে একে,
কোনো গান কোনো শাদা লিলির বান,
কোনো কাচ নেই রক্তকে ঢাকে রুপোর আচ্ছাদনে।
না।
আমি তা দেখবো না!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×