somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কবিতা - ফেলে আসা অতীত, বিস্মৃতির পাতায় স্মৃতির আলোড়ন........

০৪ ঠা মে, ২০১০ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[Don't waste ur valuable time reading this worthless writing if u r busy. Just my mind wished, so i wrote it some days ago]

সেই '৯৭ এর কথা ।আমি তখন অনেক বড় পা .....চঁ (০০০০৫) বছর বয়স। আমি কি ছোট ছিলাম কোনদিন? মনে তো হয়না ।এই আমিতো চিরদিন এমনই ছিলাম। আর ভাইয়ার বয়স তখন ৯ বছর, আফনান তো তখন ছিলইনা ।হয়তো সপ্ত আসমান উপর থেকে দেখতো আমাদের কর্মকাণ্ড। যাই হোক সে সময়টা ঢাকায় আব্বুর মাদ্রাসায় পড়তাম আমি আর ভাইয়া(মারছুছ)। আমি class 1 এ ভাইয়া class 4 এ। বাবা টিচার হেতু একটু সুবিধা বেশিই পেতাম। আমাদের চির সংগ্রামী মা তখন গোপালগঞ্জ থেকে যতদূর সম্ভব অনার্স পরীক্ষা দিচ্ছিল। ফলে আমরা ২ ভাইবোন নানাবাড়িই কাটিয়েছি শৈশবের সিংহভাগ তখন final exam এর marks দিয়েই রোল নির্ধারিত হতো । বাবার খাতিরে বছর শেষে final exam টা ঢাকায় এসে দিয়ে যেতাম। ওই 1st এই রোল হয়ে যেত ১।

মেয়েদের জন্য শ্বশুরবাড়ি মধুর হাঁড়ি না হলেও নানাবাড়ি তো সবার জন্য বরাবরই মধুর হাঁড়ি। ফলে পড়াশোনার বালাই ছিলনা বললেই চলে । আম্মুই তো সারাদিন পড়ে আমরা আর কি পড়বো ? গ্রামের আনাচে কানাচে সব জায়গাতেই ছিল আমাদের অবাধ বিচরণ । নানার এলাকা বলে কথা যেখানেই যাই সবাই মামা, খালা, নানা, নানু।
-(কোন বাড়ি থেকে আসছো) কাগে বাড়ির তে আইছো?
-আইয়ুব মিয়ার বাড়ি
-ও তুমি আইয়ুব মিয়ার নাতিন? তুমি জেসমিনির মাইয়ে? মেলা ডাঙ্গর (বড়) হয়ে গেইছ দি ! ভিতরে আইসে বসো।......
এইরূপ সমাদরেই কেটে যেত প্রহর । কোরবানীর ঈদে নানা আমাদের জন্য ৩-৪ হাঁট আগেই ২ টা বলদ গরু কিনে নিয়ে আসত আমাদের পালার সুবিধার্থে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমরা নানা নানুর বড় নাতি নাতনি তাই আদরটা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পেতাম আমরা আমি আর ভাইয়া । তো ২ রাখাল- রাখালনি গরু নিয়ে চলে যেতাম ঘেরে, কখনো বিলের ধারে, সাথে থাকত আশেপাশের সমবয়সী মামাগুলো । ফিরতে ফিরতে কখনো বেলা গড়িয়েও যেত ।
বর্ষায় যখন ঘেরগুলো পানিতে একাকার হয়ে যেত, তখন ঐ পাড়াত মামারা নৌকা নিয়ে আসত ।সবাই মিলে একসাথে নৌকায় উঠতাম ।কখনোবা নিজের চেয়ে বড় বৈঠা নিয়ে চালাবার বৃথা প্রয়াস চালাতাম ।
কি উদ্দাম স্বাধীন ছিল সেই সোনালী দিনগুলো !জীবনের অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি ।এখনো প্রতি বছরই নাড়ীর টানেই নানাবাড়ি যাই ।কিন্তু হারিয়ে গেছে দাড়িঁয়াবাধাঁ, সাতচাড়া খেলার সেই প্রহর ।ওরাও আজ হয়ে উঠেছে অনেকখানি যান্ত্রিক । পাড়াত সেই মামাগুলো আজ ধরেছে সংসারের হাল ।আর পুকুরে একসাথে লাফিয়ে পড়ে সাতাঁর কাটা, দাপাদাপি করার, চাড়াবাটি খেলার, আম কুড়ানোর সেই সমবয়সী পাড়াত খালাগুলো আজ আর সময় দেয়না ।ওরা নিজেরাই এখন এক একটি সংসারের গৃহকর্ত্রী । অনেক কাজ ওদের ।ওদেরকে আজ আর বান্ধবী বলে মনে হয়না ।অনেক বড় মনে হয় ।ওরা অন্য দলের মানুষ, বিবাহিত ।কোথায় হারিয়ে এসেছি সে জীবন ! মনে হয়, সেই মায়াবী ক্ষণগুলো হায় অনেক দূরে.......
কি বলছিলাম, কই চলে গেলাম?
সেই অনাবিল স্বাধীনতার কোন এক প্রভাতে আমি আর ভাইয়া নানাবাড়ির বারান্দায় বসে খিচুড়ি খাচ্ছিলাম । সেই মুহুর্তে নানা নিয়ে এল একটা বকের ছানা -বয়স দিন পাচেঁক হবে । কি একটা কাজে বাশঁ কাটাতে গিয়ে নানা ওকে পেয়ে বলেছিল- 'বকটা আমারে দিয়ে দাও, আমার সাধু (ভাইয়া), তান্নুর (আমি) পেলে খুব খুশি হবে ।'
যথারীতি খাচাঁ কেনা হলো ।শুরু হলো পাখি অভিযান ।নাম রেখেছিলাম টুনি ।আমরা ওই নামে ডাকলেই কোলে চলে আসতো ।ওদের জন্য আমরা প্রতিদিন মাছ মারতে যেতাম ।সে অনেক ইতিহাস ।অবশেষে কোন এক ভয়ঙ্কর দুপুরে অনেকগুলো মাছ ধরে নিয়ে আসলাম । কিন্তু ততক্ষণে ও আর নেই। ঘাতক বিড়াল খাচাঁর দরজা খুলে নিষ্ঠুর দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল ওকে । সহ্য করতে পারিনি আমরা সে দৃশ্য ।কতযে কেদেঁছি আমি আর ভাইয়া ২-৩ দিন ।ভুলিতে পারিনা কোন মতে.....
সেই স্মৃতি বিজড়িত পাখিটিকে নিয়েই লিখেছিলাম আমার জীবনের প্রথম কবিতা ।অবশ্য কবিতা জিনিসটা কি তাও তেমন বুঝতাম না ।৫ বছরের ওয়ান এ পড়া বাচ্চাটি আর কি বুঝে?
মনে চাইল তাই একটা কিছু লিখলাম ।কিন্তু সবাই এত আনন্দিত হয়েছিল যে আমিই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ।আব্বুকে ফোন করে sorry, চিঠি লিখে জানানো হলো সে ইতিহাস ।ফোনতো তখন আকাশের চাঁদ । চিঠিই ছিল একমাত্র বার্তাবাহন ।আজকের দিনে চিঠির কথাতো কল্পনা করতেও অবাক লাগে ।সময়ের কি অদ্ভূত পরিবর্তন! সেই সময়ের যান্ত্রিক হাত ধরে হেঁটে চলেছি আমরা, যুগ থেকে যুগান্তরে, চলে এসেছি বহুদূর । তবুও পেছন ফিরে তাকালে কিছু স্মৃতি, কিছু কথা, কিছু অজানা মুহুর্ত আজও নাড়া দেয় বারে বারে, ক্ষণে ক্ষণে - হয়তো শুধু আমাকেই নয়, অতীতকে পেছনে ফেলে আসা প্রতিটি মানুষকেই...........

এই সে ঐতিহাসিক কবিতা-

'একটি পাখি'
আমার কাছে একটি পাখি আসে,
তাকে সবাই অনেক ভালবাসে।
পুটি মাছ আর চিংড়ি খায়,
পেট ভরে সে আবার চায় ।
...........(ভুলে গেছি)........
...................................
আসলে সে বক,
সে সবাইকে দেয় ঠোঁক ।
তার নামটা হল টুনি,
তাকে সবাই বলে খুনি ।

-তানজিমা জাহিদ (তখন আমার নাম এইটা ছিল, যা পরে change হয়)
-রচনাকাল - ১৯৯৭

সেই থেকে ছুটে চলেছি এ পথে ।যানিনা আর কতদিন পথিক বেশে ছুটে যেতে পারবো এ পথেই ।পথিকের তো কোন গন্তব্য নেই, পথ চলতে চলতেই জীবন সূর্যের ঊদয় -পথ চলতেই চলতেই অস্ত ।হয়তো এরই মাঝে কিছু পথিকের দেখা পাওয়া, কিছু মানুষকে কাছে টেনে নেওয়া, ভুলে যাওয়া, আবারো ছুটে চলা চিরচেনা গন্তব্যের পানে .........

- অচিন পথিক
০৪.০৪.১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×