রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Published : 25 Aug 2013, 05:27 PM
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জিহাদের’ মাধ্যমে সরকারকে হঠানোর লক্ষ্যে এই সংগঠনের কর্মীরা থানা থেকে অস্ত্র লুট ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, সাভার, সেন্ট্রাল রোড ও এলিফেন্ট রোডে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার নয়জন হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম (২১), আবু হানিফ (২৩), আমিনুল ইসলাম (২৫), জাহিদুল ইসলাম (২৭), আলি আজাদ (২৮), মো. পিয়াস ওরফে আসাদুল্লাহ (২৯), মো. জুন্নুন শিকদার (২৭), কাজী মো. রেজোয়ান (৩০) ও নাইমুল হাসান (২৮)।
তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ; দুটি কম্পিউটার; বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র, গ্রেলেড ও রকেট লঞ্চার ব্যবহারের বিষয়ে হাতে লেখা ও আঁকা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল; বাংলা, আরবি ও উর্দু ভাষার ম্যাগাজিনের ২৫০টি পৃষ্ঠা, ধর্মীয় ব্যাখ্যার বই, নয়টি মডেম, ২৫টি সিডি, একটি চাকু, একটি হাতকড়া, ভিডিও ক্যামেরা, আইফোন ও একটি হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দুটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় সংগঠনের প্রধান জসীম উদ্দিন রাহমানিকেও আসামি করা হয়েছে।
মহানগর পুলিশের যুগ্ন কমিশনার মুনিরুল ইসলাম রোববার এক সংবাদ সন্মেলনে বলেন, “জিহাদের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে ইসলামী শাসন কায়েম করাই তাদের লক্ষ্য ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে।”
এই দলটি থানা দখল করে অস্ত্র ও গোলাবরুদ লুটপাট এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা পরিকল্পনা করেছিল বলেও মনিরুল জানান।
সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, আল কায়েদার আদর্শ অনুসরণ করেই কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। সংগঠনের ‘অপারেশন প্রধান’ দিদার হোসেন পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন বলেও দাবি করেছে তারা।
পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, এই সংগঠনের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানিকে বর্তমানে ঢাকায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে গত শুক্রবার বরগুনা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
গত ১২ অগাস্ট বরগুনা থেকে জসীম উদ্দিনসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে জসীমের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিডিসহ উস্কানিমূলক বই উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জসীমের কার্যালয়ে দুই মন্ত্রীসহ ১২ জনের নামের একটি তালিকা পাওয়া গেছে, যাদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এর আগে জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে দণ্ডিত বাংলাদেশি তরুণ নাফিসের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের যোগাযোগের প্রমাণ তারা পেয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা রোববার সংবাদ সম্মেলনে জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা চারটি ধাপে সাংগঠনিক কাজ চালানোর পরিকল্পনা করে, যার প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘দাওয়াহ’।
এই ধাপে তারা ইসলামের বিভিন্ন মতবাদকে ‘নিজেদের মতো’ করে ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে চায়। এজন্য তারা লিফলেট বিতরণ এবং ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে প্রচার চালায়।
দ্বিতীয় ধাপ হলো ইদাদ। এই পর্যায়ে দীর্ঘ মেয়াদী ‘জিহাদ’ পরিচালনার জন্য উৎসাহীদের ‘উগ্রবাদী’ মতবাদে বিশ্বাসী করে গড়ে তোলা হয়। আর ‘দীক্ষাপ্রাপ্ত’ এই সহযোগীদের তারা বলে ‘আনসার’।
সংগঠনের নেতাদের প্রত্যাশা, জিহাদ পরিচালনায় এই আনসার সদস্যরা তাদের আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতা দেবে, জিহাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংগঠন পরিচালনার তৃতীয় ধাপ হলো রিবাত। এ পর্যায়ে সংগঠনের কর্মীরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোকে তারা ইসলামপরিপন্থী বলে মনে করবে সেখানে হামলা চালাবে। এসব হামলার দায়ও সংগঠন স্বীকার করবে বলে তাদের পরিকল্পনা ছিল।
আর চতুর্থ ধাপের পরিকল্পনায় ছিল ‘কতল’ বা হত্যা।
মনিরুল ইসলাম বলেন, “জিহাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে না পারলে দেশজুড়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনাও করেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা।”