somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদ্যুৎ

০৪ ঠা মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি সই করেছে। আরও প্রায় ৩০০ মেগাওয়াটের চুক্তি হবে শিগগিরই। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে চুক্তি স্বাক্ষর ও প্রতিবছর চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
তবে সূত্রগুলো জানায়, প্রয়োজনীয় গ্যাস না থাকায় এবং কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রই করা হচ্ছে ডিজেল অথবা ফার্নেস তেলভিত্তিক। ফলে বিদ্যুতের দাম পড়বে অনেক বেশি। এই বাড়তি দাম জোগাতে সরকারি কোষাগারের ওপর অনেক চাপ পড়বে। অথবা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, সরকার বেশি দামের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ খুব বেশি দিন কিনবে না। ‘কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎ কিনবে বছরখানেক। অন্যান্য ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কিছু তিন বছর, কিছু পাঁচ বছর কিনবে। এর মধ্যে বড় কেন্দ্রগুলো স্থাপিত হবে, তখন আর সমস্যা হবে না। দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অদক্ষ পরিচালনায় বিদ্যুৎ খাতের এমনই নাজুক অবস্থা হয়েছে যে এখন রাতারাতি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অসম্ভব ব্যাপার।
ঘাটতি কমছে: চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন এখনো কম হলেও ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। এ বছর ভরা সেচ মৌসুমেও বিদ্যুৎ উৎপাদন চার হাজার মেগাওয়াটের নিচে ছিল। এখন প্রায় মৌসুম শেষে উৎপাদিত হচ্ছে চার হাজার ৩০০ থেকে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। সার কারখানা বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো এবং নতুন কিছু ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ায় এই উৎপাদন বেড়েছে।
অন্যদিকে সেচের জন্য এখন আর তেমন চাহিদা না থাকায় সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমেছে। আর সেচের জন্য ব্যবহূত বাড়তি বিদ্যুৎ এখন অন্যান্য ক্ষেত্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে লোডশেডিং কমেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ঢাকাসহ কয়েকটি এলাকার গ্রাহক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
পিডিবির সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা পাঁচ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো। গত রোববার সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল চার হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। গতকাল সোমবার সর্বোচ্চ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল চার হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট। আর এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ৮৭ থেকে ৮৯ কোটি ঘনফুট। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো গেছে। লোডশেডিংও ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে, যা সরকারি হিসাবেই প্রায় ১২০০ মেগাওয়াট ছিল।
বিদ্যুৎসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যে দেশকে লোডশেডিংমুক্ত করার সব চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
নতুন ৭০০ মেগাওয়াট: গত বছরের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত ৫৩১ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ২২টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো হচ্ছে: ফেনী ২২ মেগাওয়াট, বাড়বকুণ্ড ২২, জাঙ্গালিয়া ৩৩, উল্লাপাড়া ১১, রূপগঞ্জ ৩৩, হবিগঞ্জ ১১, মাওনা ৩৩, মহীপাল (ফেনী) ১১, শাহজীবাজার ৮৬, ভোলা ৩৩, কুমারগাঁও ১০, ফেঞ্চুগঞ্জ ৫১ এবং শিকলবাহা ৫৫ মেগাওয়াট। এগুলো বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্প।
সরকার দাবি করছে, এ ছাড়া এই সময়ে আরও দেড় শতাধিক মেগাওয়াট উৎপাদন বেড়েছে পুরোনো কেন্দ্র মেরামত ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে মোট প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট। ফলে বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯২৮ মেগাওয়াট, যা এই উৎপাদন বৃদ্ধির আগে ছিল পাঁচ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য উৎপাদন ক্ষমতাও (ফার্ম ক্যাপাসিটি) আগের সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে বেড়ে প্রায় চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট হয়েছে।
এ বছর আরও ১১০০ মেগাওয়াট: বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং বর্তমান সরকারের সময়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরই আরও প্রায় এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যে রয়েছে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ‘কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র; আশুগঞ্জ ৬২ মেগাওয়াট, ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০, বগুড়া ২০, ভেড়ামারা ১০০, ঠাকুরগাঁও ৫০, যশোরের নোয়াপাড়া ১০০, বরিশাল ৫০ মেগাওয়াটের ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র। সরকারি খাতের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিদ্ধিরগঞ্জ ১২০ মেগাওয়াট এবং ফেঞ্চুগঞ্জ ৯০ মেগাওয়াট কেন্দ্র।
এ ছাড়া আরও একাধিক ‘কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হতে পারে। হলে সেগুলোর কোনো কোনোটিও চলতি বছরের মধ্যে চালু হবে। এ সম্পর্কে বিদ্যুৎ-সচিব বলেন, ‘আমরা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ‘কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎ নেব। এই বিদ্যুৎ আগামী জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে। ফলে আগামী সেচ মৌসুমে আর এবারের মতো খারাপ অবস্থা হবে না।’
আগামী বছর ১২৫০: আগামী বছরের মধ্যে (২০১১ সাল) অন্তত এক হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে মোট ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলাদা পাঁচটি পিকিং (সর্বোচ্চ চাহিদার সময় চালানোর জন্য স্থাপিত) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে কয়েক দিন আগে। তারও কিছুদিন আগে চুক্তি করা হয়েছে সিলেটে ১৫০ ও চাঁদপুরে ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র দুটি স্থাপনের। এ দুটি কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে গেছে। মোট ৩০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি কেন্দ্র (খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ১০৫ মেগাওয়াট, সামিট পাওয়ারের মদনগঞ্জ ১০৩ ও ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ারের ১০০ মেগাওয়াট) স্থাপনের প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তি শিগগিরই হবে। এ ছাড়া বাঘাবাড়ি, দাউদকান্দি, কাঁটাখালী ও শান্তাহারে আরও ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি আলাদা কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হবে।
ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট: ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের সরকারের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তার ভিত্তিতে চুক্তি হয় পিডিবি ও ভারতের এনটিপিসির মধ্যে। এই চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ আনা-নেওয়ার জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার কথা সরকার ভেবেছিল। এখন তা ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ২০১২ সালে।
দুই সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে।
চার বছরে ৭৭১৩ মেগাওয়াট: ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৭১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ মে আশুগঞ্জে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে কেন্দ্রগুলো স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, এটি সেগুলোর একটি। এরপর চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রীর শিকলবাহা ১৫০ ও সিদ্ধিরগঞ্জ ১২০ মেগাওয়াট কেন্দ্র দুটি উদ্বোধন করার কথা। আগামী ২২ জুন উৎপাদনে আসবে এগ্রিকোর কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০০ মেগাওয়াট। আগামী ২৮ জুলাই একই কোম্পানির আরও ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×