(নাই বা হলো কালজয়ী খ্যাতি তোমার,যায় যদি যাক মুছে তোমার নামের রেখা কালের পটের ক্ষেএ থেকে দুঃখ কিসের?ঘটছে এমন হরহামেশা নানা যুগে,যে সাধনে রইলে সেটাই অটুট থাকুক জীবন জুড়ে।-শামসুর রাহমান)
ঘুম থেকে উঠেই দেখি মা খুব হৈচৈ করছে।
আমার মা এক দারুন দয়ালু মহিলা,খুবই নরম মনের মানুষ।কত লোক যে মিথ্যা কথা বলে মা'র কাছে সাহায্যের জন্য এসে আজ পর্যন্ত কেউ খালি হাতে ফিরে যায়নি।পরে মা যখন জেনেছে মিথ্যা বলে ঠকিয়েছে,তখন মা'র মন খারাপ হয়েছে।মা বলে-যারা মনে করে অন্যকে ঠকিয়ে নিজে খুব জিতেছে তাদের মতো বোকা পৃথিবীতে আর নেই।মানুষ কখনো অন্যকে ঠকাতে পারে না,আসলে তারা নিজেরাই ঠকে।আব্বা'র সঙ্গে আমার সম্পর্ক টা কেমন যেন।একটু দুরের।খুব কম কথা হয়।কখনো কখনো এমনও হয়েছে,অনেকদিন আব্বা'র সাথে দেখা হয় না।হঠাৎ মুখোমুখি দেখা হতেই চমকে গেছি।চেনা বয়স্ক লোক লেখলে আমর বয়সী বিনীত ধরনের ছেলেরা যা করে,সালাম দেওয়ার জন্য ডান হাত উঠে যায় কপালে,আমার তেমন হয়েছে।কিছু কিছু মানুষের জন্মই নেয় এক ধরনের ক্ষমতা নিয়ে।এটা বশ করার ক্ষমতা।সবার এই ক্ষমতা থাকে না।আমার আব্বা'র এই অমূল্য ক্ষমতা আছে।
আজ বাংলা বৈশাখ মাসের ২০ তারিখ।কথায় বলে,কুকুরের কাজ ও নেই আবার অবসরও নেই।আমার হয়েছে এমন অবস্থা।বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছি।আজ হাঁটতে ভালো লাগছে না।ইচ্ছা করছে কারো কাছে যাই।কার কাছে যাবো?আসলে সবাই চায় মাঝে মাঝে কারো কাছে আশ্রয় মাথা পেতে নিতে,কিছু চিরন্তন সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে।কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া বা জড়ানোর ইচ্ছা টাকেই তো প্রেম বলে।সেই আদিকাল থেকেই তো এই কামনা মানুষ কে তাড়িত করছে।মানুষ কারো চেহারা দেখে প্রেমে পড়ে না।আর যখন প্রেমে পড়ে তখন সে বন্যের মতো প্রেমে পড়ে।মানুষ পরস্পরের মাঝে খুঁজে ফেরে এক অনাবিল প্রশান্তি।এর রসায়ন টা কি?ছেলে মেয়ে গুলো আসলে স্রেফ প্রেমে মজতেই ইচ্ছুক।কে চায়
এর জটিল রসায়ন জেনে প্রেমে পড়তে!
"চাই না এমন কোনো নারী,যে মানবে না আমার সমস্ত দাবী,
সে রকম তালা বন্ধ ঘরে লোভ নেই যে ঘরের সব গুলো চাবি
আমার নিকট থাকবে না।
যা চাই তা পুরোপুরি চাই,
আমি চাই দিতে আর নিতে পুরোটাই।"
মেয়েরা কি সব পারে?আমার ধারনা পারে।আমি নারী প্রগতিতে বিশ্বাসী।অবাধ নারী স্বাধীনতাতেও।তবে একটা কথা বিশ্বাস করি না যে,কেবল পুরুষরাই নারীর উপর নির্যাতন চালায়।হাজার বছরের ইতিহাসে দেখা যায়,কোনো পুরুষই সর্বতোভাবে কোনো নারীকে জয় করতে পারেরনি,শৃঙ্গখলিত হয়েও নারী রয়ে গেছে অপরাজিত।পুরুষের কাছে অধরা।(তসলিমা নাসরিনের সাথে আমি একমত।)নারীর পূর্নতার জন্য তো পুরুষদের দরকার ও আছে।তবে কোনো বিশেষ পুরুষের সান্নিধ্য ছাড়াই হয়তো নারীরা ভবিষ্যতে পূর্নতা পাবে।আধুনিক নারীর সংখ্যা আধুনিক পৃথিবীতে হয়তো প্রতিদিন ক্রমশই বাড়তে থাকবে।মানিয়ে নেওয়া,কিছু স্বাধীনতা,ভালো লাগা,রুচি,সাজ-শর্জ্জা ইত্যাদিতে নারীদের এখন প্রবল আপওি প্রতিদিন বাড়তে থাকবে।
অনেকে কাছে ডাকার চেয়ে দুরেই ঠেলে দেয়।তাতে আমি কিছু মনে করি না।মানুষের খারাপ দিকটা আমি মনে রাখি না।আমি মনে রাখি মানুষের ভালো দিকটা।ভালো আচরন টা,ভালো কথাটা,ভালো গুনটা।ইদানিং আমার মাথাটা প্রায়ই এলোমেলো হয়ে যায়।তারপরও আমার মেমোরি খুব সার্ফ।চট করেই মানুষের মনের ভেতরটা আমি কখনো কখনো দেখে ফেলি।কে কী বলবে আগে থেকেই বুজতে পারি,কী জানতে চাইবে তাও বুঝতে পারি।
আমার স্বভাব হচ্ছে কথা চেপে রাখতে পারি না বা লুকাতে পারি না।কোনো একটা ভুল করলেই প্রিয় মানুষের কাছে ধরা পড়ে যাই। যা মেনে নিতে পারিনা তা পরিস্কার ভাবে বলে দেই।প্রতিবাদ করার জায়গায় অবশ্যই প্রতিবাদ করি।তাতে যদি কেউ মনক্ষু ন্ন হয়,হবে।আমার কিছু করার নেই।
একটি দীর্ঘশ্বাস।আমার মনে হয়,ঠিক কি যে মনে হয় তা বর্ননা করে বোঝানো শক্ত-অবর্ননীয় একটা বেদনা আমার সারা বুক জুড়ে টনটন করে বিষ ফোঁড়ার মতো।... এত দুঃখ কেন আমার!সারারাত বিছানায় শুয়ে এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতে ছটফট করি,অস্থির হয়ে পড়ি।চোখ ইষৎ লাল হয়ে পড়ে।কোথায় বা কার কাছে গেলে এই অস্থিরতা কমে যাবে?অস্থিরতা নিয়ে পথে পথে হাঁটি।কিসের এতো অস্থিরতা জানি না।বুকের ভেতর হাজার হাজার অন্য কোনো ভুবনের সব শুন্যতা হাহাকার করে উঠে।নীলা আপা,প্রায়ই বলেন- 'মানুষের জীবনে দুঃখের বড় প্রয়োজন।অনেক দুঃখ অনেক যন্তনা।
মানুষের স্বভাবের সঙ্গে সমুদ্রের অনেক মিল।সমুদ্র কখনো শান্ত কখনো উচ্ছসিত।সমুদ্র এতো বিশাল।কি সাংগাতিক তার আওয়াজ।সব কিছু ভাসিয়ে নেওয়ার মতো তার ভয়ঙ্কর ক্ষমতা।অফুরন্ত পানি।তবু কেউ সেই পানি খেতে পারে না।সমুদ্র তার বিশাল ক্ষমতার জন্য যাতে অহংকার না করতে পারে সে জন্য ইশ্বর তার পানিতে এক চিমটি লবন দিয়ে দিয়েছেন।ইশ্বর!
"Love is not heart of life.Love is only part of life."এই যে বিশাল নীলগিরি পাহাড় তার যেমন মূল্য আছে,তেমনি এক টাকা বা পাঁচ টাকা কয়েন এর মূল্য আছে।প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা মূল্য আছে।কোন মানুষের কোন একটি বিশেষ দিক ভাল লেগে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষটি আমাদের কাছে বড় হয়ে উঠে।আমাদের ভালোবাসাই তাকে বড় করে তুলে!আমাদের জীবনে কিছুদিন আগেও যে ছিলো দশজন মানুষের একজন,সে হঠাৎ 'একাদশ' হয়ে ওঠে।তার পর ....।
যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো জীবনের ভুল গুলি;
যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে মখমল দিন পাবো,
যদি ভালোবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো আর সমুদ্র সাঁতরাবো।
যদি ভালোবাসা পাই আমার আকাশ হবে দ্রুত শরতের নীল।