somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ট্রেলিয়া - ৫

০৩ রা মে, ২০১০ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা কালগোর্লির পথে রাওনা দিলাম সকাল ৮টায়। ৮/৯ ঘন্টা ড্রাইভের পথ। ঠিক করেছি আমি আর ক্লিফ পালা করে ড্রাইভ করব। প্রথম পালা ক্লিফের।

শহরের সীমানা পেরোবার পর শুরু হলো ফার্ম ল্যান্ড।


পথের দুপাশে দিগন্ত জুরে শুধু চোখে পরে খড়ের খেত। শুকনো খর গুলো বেইল করা। গরু, ছাগল, ভেড়া আর ঘোড়ার ফার্ম। ওরা মাঠের পর মাঠ ঘাসের চাষ করে। আর ওগুলো শুকিয়ে বেইল করে রাখে পশুদের খাওয়াবার জন্য। বিশাল ঘাসের দিগন্তে এক কোনায় ছোট্ট ছোট্ট ফার্ম হাউজ। কি যে চমৎকার দৃশ্য!!




ফার্ম ল্যান্ড পেরোতেই পাহাড়ি উচুনিচু পথে শুর হলো দুপাশে বুশ আর কয়েক কিলোমিটার পর পর ছোট্ট ছোট্ট শহর দু একটা দোকান, একটা ফিউয়েল স্টেশন আর কয়েকটা বাড়ি নিয়ে।




প্রতিটি শহরের আগে পথে সাইন আছে কত দুরে শহরটি আর ওখানে কি পাওয়া যাবে। যেমন বেড - ফুড - ফিউয়েল অথবা শুধু ফিউয়েল অথবা বেড & ফুড।






সকাল দশটার দিকে তেমনই এক সাইন বেড - ফুড - ফিউয়েল দেখে ছোট্ট একটা শহরে থামলাম আমরা গাড়িকে আর আমাদের খাওয়াবার জন্য :)


প্রচন্ড রোদের তাপ! যেন চামড়া, মাংস সব শুধ্য সিদ্ধ হয়ে গলে যাবে। একটা ফিউয়েল স্টেশন, দুরে দুরে দুএকটা বাড়ি বাগানে ভরা আর কিছু পাম্প হাউজ আর শুকনো বুশ এই হলো শহর।


মানুষজন চোখে পরেনা একবারেই।

ফিউয়েল স্টেশনের স্টোর থেকে স্যান্ডউইচ আর কিছু ড্রিংক কিনলাম আর গাড়ির পেটটাকেও ভড়ানো হলো। কয়েক ব্লক পরে নিড়িবিলিতে একটা গাছের ছায়ায় আমরা থামলাম খাওয়ার জন্য।


আহ!! পাশের একটা গাছে অনেক গুলো কাকাতূয়া বসে এই গরমে বিশ্রাম নিচ্ছিল। কি যে চমৎকার তাদের পালকের রং!!


হাত দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে!!

আবারো পথ চলা শুরু। দুপাশে বুনো ঝোপ আর পাহাড়ি উচু নিচু পথের পাশ দিয়ে সেই বিখ্যাত পানির পাইপ আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে।


এই পানির পাইপ দিয়েই পার্থ থেকে কালগোর্লি পর্যন্ত পানি টানা হয়েছে, আর সেই পানিই বাচিয়ে রেখেছে দুপাশের ছোট ছোট শহর আর শত শত জীবন সেই ৮০০শ কিলোমিটার দুরের কালগোর্লি পর্যন্ত ও তার পরের শহর গুলোকে। চোখে পানি চলে এলো সেই আইরিশ এন্জিনিয়ার সি. ওয়াই. ও'কনোরের কথা মনে হয়ে আর উনার এই মহান কাজ নিজের চোখে দেখে.....শুধু উনিই দেখলেন না জানলেন না কি বিশাল সাহায্য উনি করে গেছেন ভবিশ্যতের মানুষ গুলোর জন্য সভ্যতা গড়ার জন্য।


আমাদের পাশে পাশে পাহাড়ি উচু নিচু পথ বেয়ে চলেছে রেল লাইন। যেন সঙ্গ দিচ্ছে কনোরের সাদা বিশাল পানির পাইপটিকে।

এর মাঝে আমার কল্পনা বিলাস ও এডভ্যন্ঞ্চারাস মন খুজছে উল্ফ ক্রিক এর মত সাসপিশাস ও পরিত্যাক্ত কোন বাড়ি অথবা মানুষ। ;) অথবা গল্প!!!

টয়লেটে যাবার জন্য খুবই ছোট্ট একদম নিরিবিলি জনমানবহীন এক শহরে দুপুরের এই কাঠফাটা গরমে একটা ছোট্ট বারে হাইনেস হিলে থামলাম।


জানালা দরজা গুলো কালো কাঁচে ঢাকা ও ভেতর থেকে বন্ধ। কোথাও কোনো প্রানির সারা নেই। ভেতরে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। টয়লেটে যাওয়াটাও খুবই তখন জরুরি। নেটে ঘেরা কাচের দরজার উপর নক করলাম। কোন সারা নেই। আবারো নক করলাম। এবারও কোন সারা নেই। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ফেরত আসছিলাম হতাশ হয়ে। পেছনে ঘটাং করে দরজা খোলার শব্দ হলো। ফিরে যাবো কি যাবো না ভেবেও ফিরে গেলাম নিজের অসহায় অবস্থার কথা মনে পরে। এক জন রুক্ষ চেহারার দুদিনের দাড়ি না সেভ করা ঘোলাটে চোখের মানুষ দড়জায় দাড়িয়ে। খুবই বিনীত ভাবে বললাম "I am really sorry to bother you, may i use your washroom please" উনি আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বোলালেন। যেন আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে রান্না করলে খেতে কেমন হবে ভাবছেন। বললেন "Go straight at the end and turn left" বাইরের রোদ থেকে ঘরের ভেতরে পা দিতেই চোখে সব অন্ধকার লাগলো। ভেতরের আলো চোখে সয়ে আসতেই চোখে পরল সামনের বেঞ্চে বসা বিশাল মোটা এক মহিলা, বসে বসে এক প্লেট প্যাস্তা খাচ্ছে হাত মুখ ভড়িয়ে। আর তার চার পাশে অসংক্ষ মাছি ভন ভন করছে। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো যেন আমি মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছি। আমার গায়ের মাংস কয় কেজি হবে তা যেন আন্দাজ করার চেস্টা করছেন, কয়টা পেয়াজ রসুন লাগতে পারে। আমার তো ভয়ে আত্বা কাপা কাপি শুরু। আমি কোনদিকে না তাকিয়া দু জেড়া চোখের দৃস্টি পিঠে নিয়ে সাজা রওনা দিলাম পাশের লম্বা রুমটার শেষ প্রান্তে।

আমার যেন হাজার বছর লাগল শেষ মাথায় পৌছাতে। পথে ডান পাশের দেয়াল ঘেষে বিশাল এক মরচে পড়া ফ্রিজ। ভেতরে কয়েকটা গোল টেবিল রেস্টুরেন্টের মত করে সাজান। বাম পাশের দেয়ালে বিশাল দুটো ডিপ ফ্রিজ। ইচ্ছে করল ফ্রিজের ডালাটা খুলে দেখি ভেতরে মানুষে শরীরের অংশ ফ্রোজেন করে রাখা আছে কিনা.....পিঠের উপর চার চোখের দৃষ্টি অনুভব করলাম আবারও। সোজা টয়লেটে ঢুকে গেলাম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন টয়লেট আশা করিনি তবে যা আশা করিনি তাই পেলাম। বেশ পরিষ্কার ঝকঝকে টয়লেট।

টয়লেট থেকে বের হয়ে ঐ চার চোখের সামনে পরার ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হলো কারন ওটাই ওখান থেকে বের হবার এক মাত্র পথ। দড়জার কাছে যেতেই আবারও চার জোড়া চোখ। মনে হলো এবার ওরা আমাকে ধরে বেধে ফেলবে তার পর রান্না করে খাবে। এই যেন ধরল বলে.....।

হাসি মুখে বললাম "Many thanks, have a lovely afternoon" দুজনের একজনও উত্তর দিল না। ভদ্রলোক এগিয়ে আসছেন আমার দিকে!! আমার হার্ট যেন বের হয়ে আসছে বলে মনে হলো ভয়ে - মনে হলো এইবার আমাকে ধরে ফেলবে। আমি বাইরে বের হবার দরজাটা খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু খুলছেনা!! আতঙ্কে আমার অবস্থা তখন বারটা। ভদ্রলোক আরো কাছে চলে এসেছেন!! হাত বাড়িয়ে দড়জার নবটা কেমন করে যেন ঘোরালেন আমনি ওটা খুলে গেল। আমি আরেকবার হাসবার চেষ্টা করে থ্যাংক্স জানিয়ে বের হয়ে গাড়ির দিকে দৌড় দিলাম।

আগের পর্বটি এখানে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১০ দুপুর ২:৫৩
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×