somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনসার্ট কি শ্লীলতাহানির হাতিয়ার?

০৩ রা মে, ২০১০ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কনসার্ট কি শ্লীলতাহানির হাতিয়ার?


শ্লীলতাহানি অতীতেও ছিল বর্তমানেও আছে, দিনদিন এর প্রকোপ মহামারী আকারে বাড়ছে। খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে শ্লীলতাহানি ঘটছে দেশের সবচেয়ে নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে, ঘটছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাঁধনের শ্লীলতাহানি মিডিয়ায় যে তুমুল ঝড় তুলেছিল তার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ধরণের অপকর্ম চীরতরে বিলুপ্ত হওয়াটাই সচেতন মানুষের আকাঙ্খা ছিল, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের সম্ভ্রম লুটের মহোৎসব বেড়েই চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে প্রভাতফেরী থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসিমউদ্দিন হল শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান জীবনের অনুসারীরা সবার সামনেই ওড়না টানে, অভিবাবকসহ ছাত্রীকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সেই আবদুর রহমান জীবনের সংগঠন ‘মুক্তবাণ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ’ আয়োজিত নববর্ষ কনসার্টে আবারো নারীরা লাঞ্ছিত হলো, কমপক্ষে ১৫ টি মেয়েকে পুলিশ উদ্ধার করে বাড়ীতে পৌছে দেয়। শিক্ষার্থীসহ অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কনসার্ট চলাকালে পুরো এলাকার হাজার হাজার মানুষের ভিড়ের মধ্যে মেয়েরা এসে পড়লে বখাটেরা তাদের লাঞ্ছিত করে। অবস্থা দেখে মনে হয় নারীদের শ্লীলতাহানির হাতিয়ার হিসেবেই হয়তো ঘটা করে রাতবিরাতে কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

সমাজে একদল মানুষ থাকে সুযোগ সন্ধানী। এরা কখনো অন্ধকারে ঘাপটি মেরে থাকে, কখনো বা জনসমুদ্রের মাঝে লুকিয়ে থাকে, সব সময়েই এদের উদ্দেশ্য নারীদের কৌমার্য হরণ। বৈশাখী উৎসব, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, বিভিন্ন কনসার্ট, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, বিয়ে বাড়ী সব খানেই নারীদেহ ছুঁয়ে দিতে এদের বিচরণ। যেখানেই ভীরবাট্টা, সেখানেই চলে আসে এরা, কখনো একাকী, কখনো বা সদলবলে। এদের বিচরণ পাবলিক পরীক্ষার গেটে শিক্ষার্থীদের ভীরে, এদের বিচরণ পাবলিক পরিবহণে, মোট কথা যেখানেই ভিড় আছে, আছে হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি, সেখানেই এরা নিঃশব্দে ঢুকে পরে। সকাল বেলা কিংবা গভীর রাতে যখন বাসগুলো ভরে ওঠে গার্মেন্টের নারী কর্মীদের ভীরে, এরা ঠিকই ঠেলে ঠুলে জায়গা করে নেয় তাদের মাঝে, চলে সুযোগের ব্যবহার, চলে হাতাহাতি।

অতীতেও এমনটি ছিল, তবে এ সম্পর্কে অভিভাবকদের ছিল সতর্ক দৃষ্টি। এ কারণে যেখানে ভিড় বেশী সেখানে মেয়েদের ভিড়তে দিতে নারাজ ছিলেন আগের যুগের মা-বাবারা। প্রায়শঃই দেখা যায় বিয়ে বাড়ীতে বর কনের বাসর যাপনের আগেই বেয়াই বেয়াইনদের বেআইনী ক্রিয়াকর্মে বিয়ে বাড়ী অশুচি হয়ে ওঠে। এ কারণে আগেকার দিনে বিয়ে বাড়ীতে মেয়েরা থাকতো অভিভাবকদের কড়া নজরে। মেলা-উৎসবে মেয়েদের যাওয়া রীতিমতো নিষিদ্ধ ছিল। সে কারনেই আগেকার দিনে নারীদের শ্লীলতাহানির সংবাদ খুবই কম শোনা যেত।

কিন্তু ইদানিং দিন বদলেছে, নারীদেরকে তাদের স্বাধীনতার কথা বলে টেনে আনা হয়েছে পুরুষের মিছিলে। অথচ যে পুরুষেরা তাদেরকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে পুরুষের প্রতিদ্বন্দী করে তুলেছে সেসব পুরুষেরা নারীকে নিছক যৌনসামগ্রী ছাড়া অন্যকিছুই কি ভাবে? একবার ভেবে দেখা উচিত। নারীরা যদি অন্তঃপুরে অভিভাবকদের নজরদারিতে থাকে তবে বিয়ের আগে কোন পুরুষের পক্ষেই সহজে নারীদের শিকার করা সম্ভব হয় না, তাই নারী শিকারী পুরুষেরা নারীদেরকে অন্যায়ভাবে, অনৈতিকভাবে ভোগের জন্যই মূলত রাস্তায় নামিয়ে আনে। নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের শুধুমাত্র ব্যবসায়ে পন্যের খদ্দের ধরার টোপ হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ইদানিং যত বিজ্ঞাপন দেখা যায় তাতে পণ্যের গুণগাণের চেয়ে নারীদের বিশেষ কোন অঙ্গের প্রদর্শনীই বেশী গুরুত্ব পায়। সবকিছুই নারীরা দেখেন, নারীদেরকে যে সুন্দর সুন্দর কথার আড়ালে পুরুষরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে হয়তো নারীরা ঠিকই বুঝেন, তবু্ও তারা জেনেশুনে বিষপান করতেই পছন্দ করেন কিনা আমার বোধগম্য নয়।

আমরা যারা এ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি তাদের সবারই উচিত এ সময় থেকে শিক্ষা নেয়া। এ সময়ের পুরুষদের নৈতিকতাবিরোধী অশ্লীল কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী আমরা সবাই। আমাদের সবার উচিত আমাদের এ সময় এবং আমাদের বাপ-দাদাদের সময়ের মাঝে নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ করা। আমরা যারা বাবা হয়েছি, হয়েছেন যারা সন্তানের মা, সবার উচিত উদারতা, স্বাধীনতা আর সমানঅধিকারের নামে গো ধরে বসে না থেকে সুন্দর একটা সমাজ গঠনে নারীদেরকে তাদের যোগ্য মর্যাদা দেয়া। শিশুদের আমরা সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি, তবুও তাদেরকে এমন স্বাধীনতা দেয়া পছন্দ করি না যার ফলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে গনগনে চুলোর আগুনে গিয়ে পরে, ঠিক তেমনি এমন স্বাধীনতাও আমাদের ছেলে মেয়েদের দেয়া উচিত নয় যাতে তারা মানুষরূপী হায়েনাদের শিকারে পরিণত হয়। আর যদি সন্তানদেরকে পূর্ণ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিতে চাই তবে অবশ্যই এসব হায়েনাদের গলে শরীয়াহ আইনের শেকল পড়াতে হবে, প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন হায়েনার পক্ষেই দন্ত নখর বের করে হামলে পড়ার সাহস কখনো না হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×