somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুতৃপ্ত ভাঙন ( গল্প )

০২ রা মে, ২০১০ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ পূর্ণিমা রাত। সুন্দর চাঁদটা মায়াবী আলো ছড়াচ্ছে চারদিকে। সে আলোয় ভাসতে অনাবিল আনন্দ, অন্যরকম অনুভূতি। আগে পূর্ণিমার রাত যে কখন আসত কখন যেত তার টের পেত না রিয়াদ। তবে যখন থেকে প্রেম করা শুরু করে তখন থেকে প্রতিটি পূর্ণিমার রাতই উপভোগ করে অন্যভাবে। পূর্ণিমার রাত উপভোগ করা শিখিয়েছে তরু। এমন হয়েছে পূর্ণিমা রাতের অপেক্ষায় থাকত।

যেদিন পূর্ণিমার রাত সেদিন রাত জেগে কথা বলত দুজন। তরুই ফোন দিত।

: সুন্দর চাঁদটা দেখেছো?
: হ্যা দেখেছি। অনেক সুন্দর।
: ব্যালকনিতে যাও। আমিও ব্যালকনিতে আছি।
রিয়াদ ব্যালকনিতে যায়। আস্তে আস্তে কথা বলে। ঘুম যাচ্ছে টের পেলে মা খবর করবেন। মায়ের মতে, রাতে ঘুম না গেলে স্বাস্থ্য খারাপ করবে। রাতের ঘুম অত্যাবশ্যক। তাই রিয়াদ ফিসফিস করে কথা বলে। যাতে অন্য রুম থেকে শুনা না যায়।
: হুম আসলাম।
: আচ্ছা চাঁদটাকে তোমার কেমন মনে হচ্ছে?
: ঠিক তোমার মত। তোমার মত সুন্দর ঐ চাঁদ।
তরু হেসে উঠে।
: চাঁদের মত হলে তো কথাই ছিল। চাঁদটা সারাজীবন তরূণীই রয়ে যাবে। অথচ আমি বুড়ি হয়ে যাবো। চুল পাকবে, দাঁত সব উঠে যাবে। চামড়া কুঁচকাবে। তখন তো আর বলবে না আমি চাঁদের মত।
: মন খারাপ করা কথা বলো না তো। তোমাকে অনেক ভাল লাগে আমার। এজন্যই বললাম।
: ঠিক আছে মন খারাপ করা কথা রাখলাম। আচ্ছা আমি যে বললাম চাঁদ তরুণী। তুমি কিছু বললে না কেন? চাঁদ মেয়ে এটা কি তুমিও কি ভাবো?
: সুন্দরের কথা উঠলে প্রথমেই মেয়েদের সৌন্দর্যের কথা কল্পনায় আসে। চাঁদ যেহেতু সুন্দর তাই তাকে মেয়ে হিসাবে ধরে নিলে সমস্যা নেই। সূর্যকে পুরুষ ভাবা যায়।
: আরে তুমি দেখি ভালোই কথা শিখছো। তা সূর্যকে পুরুষ ভাবলে কেন? সূর্য বুঝি সুন্দর না?
প্রশ্ন রাখে তরু।
: আরে সুন্দর হবে না কেন? তবে সুন্দরের চেয়ে সূর্যের প্রয়োজন বেশি। এজন্যই সূর্যকে পুরুষ বলেছি।
তা শুনে একটু রাগ করে তরু। একটু গম্ভীর গলায় বলে, তার মানে মেয়েদের প্রয়োজনীয়তা নেই।
তা শুনে হেসে দেয় রিয়াদ।
: তোমার সাথে কথায় পারবো না। এ প্রসঙ্গ বাদ। হার মানছি।
: থ্যাঙ্কু। আমারো এই সুন্দর পূর্ণিমার রাতে কথা কাটাকাটি করতে ইচ্ছা করছে না।

চাঁদটা একটু মেঘের আড়াল হয়। কিছু মেঘ চাঁদটার উপর দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায়। মেঘগুলো যেন লজ্জা পাচ্ছে মেঘের উপর দিয়ে যেতে। এজন্যই হয়ত এত দ্রুত যাওয়া।
দুজনে দুই বাসা থেকে এই সুন্দর দৃশ্য দেখে।

তরু কথা বলে উঠে, আচ্ছা একটা জিনিষ খেয়াল করেছো?
: কি?
: এই যে আমি আর তুমি চাঁদ দেখছি। এই পৃথিবীতে অনেক জুটিই তো রোমান্টিক মন নিয়ে চাঁদ দেখছে। একটা চাঁদই সবাই দেখছে। কত্ত ভালোবাসা এই একটা চাঁদ থেকে এসেছে কল্পনা করছো?
: আসলে একই চাঁদ। অথচ জুটি ভিন্ন। ভালোবাসা ভিন্ন।
: আমি একটা জিনিষ ভেবেছি। আমাদের মেয়ে হলে তার নাম রাখবো চন্দ্রিহা।
রিয়াদ তা শুনে একটু লজ্জা পায়। চুপ থাকে।
: কি লজ্জা পাচ্ছো তাই না! তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল না।

বিয়ের আগে পূর্ণিমার রাতে অনেক কথা হতো। দুজনই ব্যস্ত বিধায় সারা রাত জাগা সম্ভব ছিল না। তরুর এক বান্ধবী নাকি কোন পূর্ণিমার রাত ঘুমায় না। ওর যুক্তি এত সুন্দর রাত ঘুমিয়ে নষ্ট করার মানে হয় না। সারা রাত ব্যালকনিতে বসে থাকে। আর একটু পর পর চা খায়। ওদের ইচ্ছা হয় সারা রাত জেগে থাকার। কিন্তু তা অসম্ভব।

০২
এখন পূর্ণিমার রাত। তবে তা যথেষ্ট বিরক্তিকর রিয়াদের কাছে। সুন্দর কিছুও যখন খারাপ কিছু মনে করিয়ে দেয় তখন তাকে অসহ্য লাগে। অসহ্য লাগছে পূর্ণিমার চাঁদটি। রিয়াদ ব্যালকনির দরজাটা বন্ধ করে দেয়। যাতে পূর্ণিমার চাঁদ ঢুকতে না পারে।

বিছানায় শুয়ে আছে চন্দ্রিহা। দুই বছর হলো ওর। এরই মধ্যে অনেক পাকনামি। পৃথিবীর যত কৌতুহল সব ওর। ঘুমাচ্ছে।

রিয়াদ দেখে জানালার পর্দার ফাঁক গলিয়ে কিছু চাঁদের আলো রুমে ঢুকেছে। সে আলো গিয়ে পড়েছে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার উপর। অন্যরকম। কিন্তু রিয়াদের অসহ্য লাগে তা। জানালার পুরা বন্ধই করে দেয় ও।

চলবে
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×