somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘরে-বাইরে তোপের মুখে এমপি মেনন : দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ

০২ রা মে, ২০১০ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাত্রজীবন এবং যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় তিনি ব্যয় করেছেন নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে। স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তার অতীতের এ উজ্জ্বল অবদানকে ম্লান করে দিয়েছে। এখন নিজ দলের নেতাকর্মীসহ দেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও বিতর্কিত। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাজোট সরকারের ১৫ মাসে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের পাহাড় জমেছে। বিশেষ করে রাজধানীর দুটি সেরা স্কুল ভিকারুননিসা ও আইডিয়ালে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক সময়কার আদর্শিক নেতা হিসেবে সুপরিচিত বাম ঘরানার অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক আদর্শ ও মূলনীতি থেকে সরে গিয়েছেন বলে তার দলের ভেতর থেকে অভিযোগ উঠেছে। নিজ দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন বলে জানা গেছে। এমনকি নিজ দল থেকেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ চলছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার বিষয়ে আদালতে মামলা থাকায় আপাতত কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। এ মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরই দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ডেকে সব কথা বলা হবে।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠেছে। দুটি সেরা স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্য, বহির্ভূতভাবে গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক নিয়োগ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে অন্যায়ভাবে অপসারণের চেষ্টা, সভাপতি পদে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকেও গুরুত্ব সহকারে ছাপাও হয়েছে।
তবে রহস্যজনক বিষয় হলো এতসব অভিযোগ উঠার পরও রাশেদ খান মেনন একেবারেই নিশ্চুপ। এসব অভিযোগের কোনো প্রতিবাদ করেননি। একটি সংবাদ সম্মেলন করেও অভিযোগের কোনো ধরনের জবাব দেননি তিনি। এসব কারণে দলীয়ভাবেও ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।
এতসব অভিযোগ উঠার পরও কেন চুপচাপ আছেন জানতে চাইলে এমপি রাশেদ খান মেনন আমার দেশকে বলেন, সময় হলেই সব বলব। এখন কোনো কিছু বলব না। ভিকারুননিসা নূনের অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা চলছে। মামলা শেষ হলেই এ বিষয়ে কথা বলব। এর আগে না।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ দিন আমেরিকা থাকার পর ১৭ এপ্রিল দেশে ফেরেন তিনি। এর পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাকে তলব করা হয়। তার বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চান এবং তাকে সতর্ক করে দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পরে তিনি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গেও তার সচিবালয় কার্যালয়ে দেখা করেন।
রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন। আমার দেশকে তিনি বলেন, আমাকে ডেকে পাঠানো হয়নি। অনেকদিন বিদেশে ছিলাম। তাই দেশে এসে সৌজন্য সাক্ষাত্ করতে নিজ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছি। সেখানে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
দলীয় এক সূত্রে জানা যায়, ভিকারুননিসা নূনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগম যদি দায়িত্বে থাকেন তাহলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর চিন্তা করছেন এমপি রাশেদ খান মেনন।
ভর্তি-বাণিজ্য : রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে রাজধানীর অন্যতম সেরা দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ থেকে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো। স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি। আর সে সুযোগে ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল স্কুলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকাণ্ডে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী-সাথী, স্ত্রী এবং ছেলেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভিকারুননিসার নূনের অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগম সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে আমার দেশ-এর কাছে এ অবৈধ ভর্তির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ বছর স্কুলে নতুন ভর্তির শতকরা ৩৫ ভাগই সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি এ হার বাড়িয়ে ৫০ ভাগ করতে বলেছিল বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষার আগে সভাপতি ১৫টি এবং শিক্ষক প্রতিনিধিসহ সব সদস্য প্রত্যেকে সাতটি করে মোট ৭১টি ফরম স্কুল থেকে স্বাক্ষর করে বাড়িতে নিয়ে গেছেন, যে ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। সেই ৭১ ফরমে আবেদন করা সবাইকে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর সভাপতি রাশেদ খান মেনন কোনো স্বাক্ষর ছাড়া আরও ১৫০ ছাত্রীর তালিকা তৈরি করে পাঠান। এদেরও ভর্তি করা হয়। এর বাইরে টেলিফোনে সুপারিশের ভিত্তিতেও অনেক ছাত্রী ভর্তি করাতে বাধ্য হন তিনি। এসব ভর্তি বাবদ জনপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে এমন কথা অধ্যক্ষ শুনেছেন বলে আমার দেশকে জানান।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের অভিযোগ অনুযায়ী স্কুলের বর্তমান এডহক কমিটি গত ৭ ফেব্রুয়ারি বনশ্রী শাখায় ৪০০ ও মতিঝিল শাখায় ৬০০ জনসহ মোট ১ হাজার শিক্ষার্থী অবৈধভাবে ভর্তি করেছে। আর শিক্ষার্থী প্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ওইদিন আমার দেশ-এর সরেজমিন পর্যবেক্ষণেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে ১৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বর্তমান এডহক কমিটির পদত্যাগও দাবি করা হয়।
নিয়মের বাইরে শিক্ষক নিয়োগ : রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে—এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহির্ভূতভাবে একক সিদ্ধান্তে গভর্নিং বডির সদস্য নিয়োগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিকারুননিসা নূন কমিটির চার অভিভাবক প্রতিনিধির মধ্যে দু’জনেরই কোনো সন্তান বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে পড়ে না। একজনের মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রার্থী। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন অভিভাবকের মেয়ে একাদশ শ্রেণীতে উঠায় তার সদস্যপদ ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বাতিল করেছে। কিন্তু তারপরও তারা পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। একই অবস্থা শিক্ষক প্রতিনিধির ক্ষেত্রেও। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) প্রতিনিধির পদে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিজের পিএস নাইমুল আজম খানকে নিয়োগ দিয়েছেন মেনন। একইভাবে তিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি পদেও নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগমও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখায় পিএস নাইমুল আজম খানের স্ত্রীকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০০১ সালের পর এখন পর্যন্ত আইডিয়াল স্কুলে কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন হয়নি। এডহক কমিটির মাধ্যমেই স্কুল পরিচালনা হয়ে আসছে। ভুয়া অভিভাবক প্রতিনিধি, একই শিক্ষককে বারবার শিক্ষক প্রতিনিধি করে এ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ভর্তি-বাণিজ্য, টেন্ডার-বাণিজ্য করার জন্যই স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়মবহির্ভূতভাবে এ কমিটি গঠন করে আসছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্কুলের এডহক কমিটিতে গত বছর জুনে ভুয়া অভিভাবক প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়। যাকে নিয়োগ দেয়া হয় তার কোনো সন্তান তখন এ স্কুলে পড়ত না। তাকে বৈধ করার জন্য এবার জানুয়ারিতে তার এক সন্তানকে স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা হলেও বিধি অনুযায়ী তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। আইডিয়াল স্কুলের গভর্নিং বডির নির্বাচনের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দের ১৬ নভেম্বরের তদন্ত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মার্চ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জাতীয় দৈনিকে গভর্নিং বডির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে বিজ্ঞাপন দেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এক অভিভাবকের মামলার কারণে হাইকোর্ট থেকে নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ আরও ৪ মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর আগেও আরেক দফায় ৩ মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী এডহক কমিটি গঠনের ৬ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা। বারবার নানা অজুহাতে গভর্নিং বডির নির্বাচন না করার পেছনে বর্তমান এডহক কমিটির হাত আছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। তাদের এসব অভিযোগ সত্য বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্রতিষ্ঠানেরই একাধিক শিক্ষক।
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ অপসারণের চেষ্টা : পাঁচ শতাধিক ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তি করার পরও সভাপতির অন্যায় আবদার পূরণ না হওয়ায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগমকে অপসারণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এমপি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে। চাকরির মেয়াদ আরও প্রায় ১০ মাস থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগমকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারপর আরও ৬ বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষককে বাদ দিয়ে তার পছন্দমতো একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে ২৫ মার্চ নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব পালন এবং তাকে সহযোগিতা করার জন্য সব শিক্ষক-কর্মচারীকে নির্দেশ দিয়েছেন মেনন। ২৭ মার্চ এক অফিস আদেশে নতুন অধ্যক্ষাকে সহযোগিতা না করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের দিনই অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগমের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একমাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন। হাইকোর্টের রায় নাকি সভাপতির অফিস আদেশ মানবেন তা নিয়ে সে সময় বিভ্রান্তিতে পড়েন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এইচএসসি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এমন ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগমের অভিযোগ, ভর্তি-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব চাহিদা পূরণ করতে না পারায় হঠাত্ করে তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। নতুন অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়ায় ২৬ মার্চ বিকালে টেলিফোনে তাকে রাশেদ খান মেনন অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকি ‘পুলিশ দিয়ে চুলের মুঠি ধরে কলেজ থেকে বের করে দেব’ এমন মন্তব্যও রাশেদ খান মেনন করেন বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার।
দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টির অভিযোগ : অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগম বলেন, ভর্তি করা ছাড়া গত প্রায় দু’বছরে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করেনি ভিকারুননিসার পরিচালনা কমিটি। তাদের একটাই কাজ ছিল ভর্তি করানো। শিক্ষকদের এখন পর্যন্ত নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়নি। অথচ এ অজুহাতে ছাত্রীদের বেতন বাড়ানো হয়। সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করায় চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ফি, এপ্রিলের শিক্ষকদের বেতন শিট তৈরি, বিদ্যুত্ বিলসহ শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব কাজই বর্তমানে আটকে আছে। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রশ্ন তুলেন নিয়মের বাইরে নিয়োগপ্রাপ্ত অভিভাবক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারলে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আমার সঙ্গে তিনি কেন বৈঠক করতে পারছেন না। তাদের যেমন কোর্টের রায় রয়েছে, আমারও সেই রায় আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছেন সভাপতি মেনন। তিনি অধ্যক্ষকে দিয়ে কোনো ধরনের কাগজপত্রে সই করাতে অফিস সহকারীকে নিষেধ করেছেন বলে অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা, দলাদলিসহ নানা কারণে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের মান যে কমে যাচ্ছে সে বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ সভাপতি হিসেবে রাশেদ খান মেনন নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে।
দলীয়ভাবেও সমালোচিত : নিজের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে মেননের দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীরাও তার কঠোর সমালোচনা করছেন বলে জানা যায়। একাধিক নেতাকর্মী জানান, মহাজোটের পক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় থেকেই দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মানসিক একটি দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তার। সারাদেশের কর্মিসভার ৯০ ভাগ লোকের মতামত উপেক্ষা করে কৌশলে পলিটব্যুরোর অনেক সদস্যের অনুপস্থিতে এক সভায় দলীয় প্রতীক হাতুড়ি মার্কার পরিবর্তে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরবর্তীকালে সংগঠনের আদর্শবিরোধী তার এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের সাবেক পলিটব্যুরো সদস্য হায়দার আকবর খান রণো, আবদুল আজিজ ও কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আবদুল সাত্তারসহ একাধিক নেতা দল ছেড়ে দেন। তাদের অভিযোগ, রাশেদ খান মেনন ওয়ার্কার্স পার্টির আদর্শ থেকে সরে গেছেন। এমনকি মেননের মতের সঙ্গে মিল না হওয়ায় বিমল বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে যেতে হয়। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত অষ্টম কংগ্রেসের সময় দলে নিজের এজেন্ডগুলো বাস্তবায়ন করতে আদর্শিক ও সাংগঠনিক নেতাদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোকজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।
এদিকে সংসদ সদস্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ার পর মেনন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-বাণিজ্যসহ নানা অন্যায় কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েন বলে নিজ দল থেকেও অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে পলিটব্যুরো, জেলা-উপজেলার সবপর্যায়ের কমিটিতে তার কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। ২৫ এপ্রিল ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির এক বৈঠকে তার এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দু’জন সদস্য লিখিত অভিযোগ করে তা নিয়ে আলোচনার অনুরোধ জানান। জানা যায়, ১০ ও ১১ মে অনুষ্ঠিতব্য পলিটব্যুরোর সভায় এবং পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় মূল এজেন্ডা হিসেবে মেননের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা মহানগর কমিটির সভারও মূল আলোচ্য বিষয় এটাই বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। মেননের নির্বাচনী এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের পেছনেও তার যোগসূত্র রয়েছে বলে দল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।নেতাকর্মীরা জানান, দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পার্টির শতকরা ৯৯ ভাগ কর্মীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের দায়-দায়িত্বও দলের কোনো নেতাকর্মী নেবেন না। গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে পার্টির সভাপতি নিয়োজিত হওয়াকে কেন্দ্র করে দলের ভবিষ্যত্ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরা। সভাপতির কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্প্রতি ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির নেতাকর্মীরা সর্বসম্মতভাবে স্থানীয় সংগঠন বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন বলে জানা যা��
প্রথম পাতা
ঘরে-বাইরে তোপের মুখে এমপি মেনন : দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ
ভালো নেই শ্রমজীবী মানুষ
মহান মে দিবস আজ
এমপি লতিফের সঙ্গে মুখোমুখি : মেয়র মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে দলীয় কাউন্সিলরদের দুর্নীতির অভিযোগ
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার তথ্য : যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থার প্রধান ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ছিলেন
বাংলাদেশ মাঠে নামছে আজ প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
হাওরে কৃষকের কান্না : বছরের একমাত্র ফসলও সম্পূর্ণ ধ্বংস
শৈলকূপায় পুলিশের ক্রসফায়ারে চরমপন্থী গিয়াস নিহত : অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার
প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর : অবশেষে বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মোকাররম গ্রেফতার
চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের তাগাদায় জাতি আতঙ্কিত : দেলোয়ার
লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ : উচ্ছৃঙ্খল আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিচারপতিরা ব্যবস্থা নেননি কেন
রাজধানীতে ঝুট ব্যবসায়ী ও সিকিউরিটি গার্ড খুন : স্বামীকে কুপিয়েছে স্ত্রী
আনন্দবাজারের খবর : প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দুই উপদেষ্টাকে ভারত পাঠাচ্ছেন হাসিনা
সাপাহারে পুনর্ভবার তীর সংরক্ষণ করতে দিচ্ছে না বিএসএফ : আ’লীগ নেতারা দেখে যাক ভারত কীভাবে গ্রাস করছে
টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর গাড়িবহরে আ’লীগের হামলা : সাংবাদিকসহ দু’পক্ষের ১০ জন আহত
উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের নাটকীয় জয়
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×