হে সভ্যতা! তোমার পদাচারণে
নদী স্তব্দ হয়ে গেছে।
সময় বয়ে চলেছে; হলো কতদিন।
এদিকে তাকায় না আর ফিরে কেউ;
ভোরের মোরগের বানে, অথবা
নদীর স্রোতের গর্জনে ভাঙ্গে না ঘুম কৃষানীর।
ছেলেরা আর খেলা করে না নদীর দু’তীরে;
উপভোগ করে না, পাকা ধানের সোনালী সুষমা।
ধানের শীষ আর হেলে-দুলে দেখায়না বেঁেচ থাকার স্বপ্ন।
তুমি এলে বলে-,
অবোধ ছেলের দল কাটে না সাতাঁর নদীতে..
স্নান শেষে সিক্ত বসন নিযে ঘরে ফিরে না কিশোরীর দল;
বধূ আর যায় না কলসী কাখেঁ করে পানি আনতে;
জেলের জালে ও আর উঠেনা রূপালী মাছ।
তুমি এলে বলে-,
কোথায় যেন হারিয়ে গেল....
মাঝি মাল্লার ভাটিয়ালি গান, বাউলের একতারার টুং টুং শব্দ,
রাখালী বাশির সুমধুর সুর, পাখির কিচির মিচির শব্দ-
আর কাকতালিয় কলতান।
তুমি এলে বলে-,
রাত্রিতে আর বসে না পুথি পাঠের আসর..,
বৃক্ষ আর দিতে পারে না স্নেহের ছায়া....,
রাত্রিতে জোনাকীও দেখায় না পথিককে পথ;
দিনান্তে ফিরেনা লাঙ্গল নিয়ে শ্রান্ত কৃষক;
রাখালও ফিরেনা গরু নিয়ে গোধুলী লগ্নে।
তুমি এলে বলে-,
থেমে গেছে সাইবেরিয়ান অতিথি পাখির আগমন।
গরুর গাড়ীর গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে পথ চলা;
আর বঞ্চিত হয়েছি -
মা-খাকীর পবিত্র স্পর্শ না পাওয়া।
হে সভ্যতা!
তুমি এলে বলে-,
পল্লী গায়ের মলিনতায়, অথবা উগ্র আধুনিকতার
হাইহিল জুতার খট্-খট্ শব্দের বদান্যতায়
থেমে গেছে গ্রাম্য বধূর ঘোমটা দিয়ে পথ চলা।
তুমি এলে বলে-,
কিশোরীর নিরাপত্তাহীনতায় কাটে তটস্ত সময়;
সে আর দেখেনা রঙীন স্বপ্ন।
হে সভ্যতার অধিবাসী ! ফিরে তাকাও
যে স্রোতস্বিনী নদী চির চঞ্চলা নটীর ন্যায়
লীলায়িত ভঙ্গিতে ছুটে চলতো অবিরাম
সে আজ জুবু থুবু হয়ে পড়ে রয়েছে;
ভরা যৌবনেও যেন রস নেই।
ফিরে তাকাও-,
যে পল্লীর প্রান্তর অবারিত স্নিগ্ধ শষ্য শ্যামলে ভরা ছিল
পিক মুখরিত ছিল আম্রকানন, বনকুমুমের সুমিষ্ট সুগন্ধে-
মন উত্তলা হয়ে উঠতো;
সেই পল্লীর প্রান্তর আর চিত্তকে আকর্ষণ করে না;
ভাবুক কবির মনেও জাগায়না সামান্যতম অনুভূতি।
হে সভ্যতা!
এ তুমি কোথায় নিয়ে এলে-,
যেন মনে হয়
সংকীর্ণ চারিদেওয়ালের মাঝে জীবনামৃত একজন।
প্রশ্ন একটিই মুক্তি কি পাব না কোন দিন।