আজ মে দিবস। ঘুমটা ভেঙে গেল খুব সকালে। পত্রিকার হকারের কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙেছে। ব্যাটাকে ধরার জন্য কাল থেকেই তক্কে তক্কে ছিলাম। কিন্তু পারলাম না। কাল ব্যাটা আমার পত্রিকা দেয়নি। ও দেয়নি নাকি কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে সেটা নিয়েও সংশয়ে আছি। তাই ব্যাপারটা পরীক্ষা করতেই এত সকালে ওঠা।
এমনিতেই সাত-সকালে চাইলেই উঠতে পারিনা। আমাদের যে কাজ, তাতে রাত জাগাটা অবধারিত। আর লেট নাইট ডিউটি থাকলে তো ফিরতে ফিরতে রাত দুটো। খেয়ে দেয়ে ঘুমুতে ঘুমুতে তিনটা সাড়ে তিনটা।
মে দিবসে শ্রমিকের দুঃখ সুখের গল্প কাহিনী পত্রিকার পাতায় এতক্ষণ পড়ছিলাম। কাহিনীগুলো আমরাই লিখি। কিন্তু আমাদের কাহিনীগুলো কোথাও ছাপা হয় না। নিজেকে ওই গার্মেন্ট শ্রমিকের চেয়ে আলাদা কিছু মনে হয় না। আমার মনে আছে যখন আমি ভার্সিটিতে পড়তাম, অনেক রাতে টিউশানি শেষ করে যখন রাস্তায় কোনো গার্মেন্ট কর্মীদের সঙ্গে হেঁটে যেতাম তখন নিজেকে ওদের কাতারের একজন বলেই মনে হত। এখনও সেটাই মনে হয়। আমাদের ওয়ার্কিং আওয়ার (কর্মঘন্টা) বলে কিছু নেই। কাগজে কলমে একটা আছে। অফিসে গিয়ে হাতের আঙুলে পাঞ্চ করা লাগে। কিন্তু সেটা নিজের উপস্থিতি জানান দিতেই। অন্য কিছু নয়।
কাজ শুরু হয় সকাল থেকেই বলতে পারেন। প্ল্যানিং, অ্যাসাইনমেন্ট, এরপর কাজ শেষে রিপোর্ট লেখা। পত্রিকার সিটিপি প্রেসে না যাওয়া পর্যন্ত কাজ শেষ হচ্ছে না। আবার বাসায় এসেও ফোনে ইনস্ট্রাকশন, ভুল সংশোধন ইত্যাদি। খেয়ে দেয়ে ঘুম। সকালে উঠে আবার সেই কাজ। ছুটির দিন আর ডে অফ এবার একই দিনে পড়ে গেল। কি আর করা! এমনিতেই ছুটি মেলে না। এটাকেই তাই হাসিমুখে মেনে নিলাম।
আমরাও শ্রমিক। তবে পার্থক্য আমরা `শিক্ষিত -শ্রমিক' এই যা!