জন্মের পর থেকে ঢাকায় বড় হওয়ার সুবাদে ঢাকার আর দশটা বাচ্চার মতই বড় হয়েছি। খেলা-ধুলার তেমন সুযোগ পাইনি। তার পরেও যা পেয়েছি কম না। এই-ই বা ক'জনে পায়। ইদানিং বসে বসে বুড়ো মানুষের মত স্মৃতির পাতা হাতড়াতে থাকি। তো আজকে সেই ছোটবেলার কিছু খেলা শেয়ার করি আপনাদের সাথে যা বেশ মজা করে খেলেছি।
হাড়ি-পাতিল: মেয়েদের কমন একটা খেলা এটা । পিচ্চিবেলায় হাড়ি-পাতিল খেলেনি এমন মেয়ে পাওয়া যাবে না মনে হয়। বেশ মজাই হত। আমি, জুঁই,বেলী তাসনুভা আপু মিলে খেলতাম। ঘাসের বিচি দিয়ে ভাত, গোল গোল ঘাসের ফুল/বিচি দিয়ে ডিম আর লম্বা ঘাস সাইজ করে কেটে মাছ রান্না হতো। আহ! দিন গুলো দারুন ছিল।
পুতুল: পুতুল বেশী দিন খেলিনি। অন্যদের তুলনায় আমার পুতুল কম থাকাতে তেমন মজা পেতাম না। আর ঝগড়াটাই বেশী হত। তার পরও খারাপ ছিল না।
কুতকুত: গ্রামের মেয়েরা এটা বেশী খেলে। খেলাটা দুই ভাবে খেলা যায়। একটা হল ছয় ঘরের আর একটা নয় ঘরের। গ্রামে গেলে ছয় ঘরেরটা খেললেও ঢাকায় যখন সবার সাথে খেলতাম তখন নয় ঘরেরটা-ই খেলতাম। আবার আমি ঘরে একা খেললে তখন ছয় ঘরেরটা খেলতাম। ফ্লোরে চক ভিজিয়ে দাগ দিয়ে ঘর আঁকতাম।
আমাদের পরের জেনারেশন কে দেখেছি এই কুতকুত ওরা অনেক দিন ছাদে খেলেছে।
এলন্ডি লন্ডন: এটা ছিল বেশ মজার একটা খেলা। চোর হলে বাকী সবাইকে বেশ নাজেহাল করা যেতো। নিয়ম ছিল এলন্ডি লন্ডন, ঘড়িবাজে টন্টন, এক দুই তিন বলে পরে পেছনে তাকানো। এর মাঝেই সবাই যতটা পারে আগাবে। কিন্তু তিন বলার আগেই তাকিয়ে ফেলতাম। কোন কোন সময় এটা নিয়েও চলত ঝগড়া আর নড়ার অপরাধে চোর তার পাশে দাড় করালে রেডী থাকতআম কখন চোরের পিঠে চড় পরবে। পারলে তার আগেই ঝেড়ে দৌড়
মাংস চোর: ঢাকায় এটাকে মাংস চোর বললেও গ্রামে মনে হয় ছোট বৌ চি বলে। যাই হোক জীবনে সবচেয়ে বেশী এনজয় করে খেলেছি মনে হয় এই খেলাটা, যদিও ছাই-পাশও পারতাম না। তাতে কি, চালাকী করে যারা এক্সপার্ট ছিল তাদের দলে চলে যেতাম নাইন/টেন এ থাকতে একজন ম্যাডামের পর পর দুইটা ক্লাশ ছিল। ম্যাডাম আবার অসাধারন ভাল ছিলেন। আমরা বলতাম, "ম্যাডাম আপনার আসার দরকার নাই আমরা পড়ে নিবো।" ক্লাসের বেশীর ভাগই ভাল ছিলাম তাই ম্যাডামও কিছু বলতেন না। বরং বলতেন, "বাসায় ত খেলার সুযোগ পাওনা এখানে খেলে নাও, এই বয়সে খেলার দরকার আছে।"(বোঝেন কি পরিমান ভাল ছিলেন। এই জন্যই এত্ত পছন্দ করি ম্যাডামকে )
তাসলিমা, পারভীন, নাসিমা আর নাদিরা ছিল বেশ ভাল। ওরাই সব সময় চি দিয়ে মাংস আনার দ্বায়িত্ব পালন করত। সবচেয়ে ভাল ছিল তাসলিমা। ও ঘর থেকে বের হলে সবাই বেশ এলার্ট থাকত যাতে ওকে আউট করা যায় কিন্তু প্রথম বারেই মাংস নিয়ে খেলা শেষ করে দিত। চি দেওয়ার সময় বেশ মজার একটা ছড়া বলত। ছড়া ছিল এরকম, চি কুতকুতাইয়্যা, বাবুলের মাইয়্যা, বাবুলে কান্দে কাঁচা কলা খাইয়্যা...কাঁচা কলা খাইয়্যা.....। খুব দ্রুত বলে যেতো। আমি সব সময় চেষ্টা করতাম ওর দলে যেতে । কারন ওর দলে গেলে হারার কোন চান্সই নাই
পারভীনের চি দেওয়ার স্টাইলটা ছিল অন্য রকম। একটু টেনে টেনে সুর করে বলত। ও যে ছড়া টা বলতো সেটা ছিল এরকম, ঐ বাড়ী গেসিলাম খেলাইতেএএএ...পথে ধরল ডাকাইতেএএএ....ডাকাইতের নাম কি? কালাচান...ছোট ছোট পোলাপা...ন...ছোট ছোট পোলাপা....ননননন.....
নাসিমা ছিল সবার থেকে খাটো। ও চেষ্টা করত মাংস নেওয়ার সাথে সাথে সবাইকে আউট করার। আর নাদিরা ছিল সবার থেকে বেশি লম্বা। হাত বাড়িয়েই সবাইকে আউট করে দিত। জায়গা কম থাকায় সরারও সুক্সোগ ছিল না। পরে নিয়ম করা হয়েছিল হাত বাড়িয়ে আউট করা যাবে না।
উফ কিযে মজা করেছি এই খেলাটার সময় তা বলে/লিখে বোঝানো সম্ভব না। এখন সবাই একেক জন একেক দিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নাসিমার দাখিলের পরেই বিয়ে হয়ে যায়। বছর খানেক পরে মনে হয় একটা ছেলের মা ও হয়ে যায়। নাদিরাও এখন এক ছেলের মা। প্রায় সবাই এক এলাকায় থাকলেও দেখা-সাক্ষাত হয় কদাচিত।
==================================
দোস্তরা যে যেখানেই থাক সবার জন্যে রইল অনেক অনেক শুভকামনা
বিশেষ করে নাদিরা তোর জন্যে, কারন তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো কি না.....