somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই সোনালী দিনগুলি

৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মের পর থেকে ঢাকায় বড় হওয়ার সুবাদে ঢাকার আর দশটা বাচ্চার মতই বড় হয়েছি। খেলা-ধুলার তেমন সুযোগ পাইনি। তার পরেও যা পেয়েছি কম না। এই-ই বা ক'জনে পায়। ইদানিং বসে বসে বুড়ো মানুষের মত স্মৃতির পাতা হাতড়াতে থাকি। তো আজকে সেই ছোটবেলার কিছু খেলা শেয়ার করি আপনাদের সাথে যা বেশ মজা করে খেলেছি।

হাড়ি-পাতিল: মেয়েদের কমন একটা খেলা এটা :D। পিচ্চিবেলায় হাড়ি-পাতিল খেলেনি এমন মেয়ে পাওয়া যাবে না মনে হয়। বেশ মজাই হত। আমি, জুঁই,বেলী তাসনুভা আপু মিলে খেলতাম। ঘাসের বিচি দিয়ে ভাত, গোল গোল ঘাসের ফুল/বিচি দিয়ে ডিম আর লম্বা ঘাস সাইজ করে কেটে মাছ রান্না হতো। আহ! দিন গুলো দারুন ছিল। :D

পুতুল: পুতুল বেশী দিন খেলিনি। অন্যদের তুলনায় আমার পুতুল কম থাকাতে তেমন মজা পেতাম না। আর ঝগড়াটাই বেশী হত। /:) তার পরও খারাপ ছিল না।

কুতকুত: গ্রামের মেয়েরা এটা বেশী খেলে। খেলাটা দুই ভাবে খেলা যায়। একটা হল ছয় ঘরের আর একটা নয় ঘরের। গ্রামে গেলে ছয় ঘরেরটা খেললেও ঢাকায় যখন সবার সাথে খেলতাম তখন নয় ঘরেরটা-ই খেলতাম। আবার আমি ঘরে একা খেললে তখন ছয় ঘরেরটা খেলতাম। ফ্লোরে চক ভিজিয়ে দাগ দিয়ে ঘর আঁকতাম। :D
আমাদের পরের জেনারেশন কে দেখেছি এই কুতকুত ওরা অনেক দিন ছাদে খেলেছে।:)

এলন্ডি লন্ডন: এটা ছিল বেশ মজার একটা খেলা। চোর হলে বাকী সবাইকে বেশ নাজেহাল করা যেতো। :P নিয়ম ছিল এলন্ডি লন্ডন, ঘড়িবাজে টন্টন, এক দুই তিন বলে পরে পেছনে তাকানো। এর মাঝেই সবাই যতটা পারে আগাবে। কিন্তু তিন বলার আগেই তাকিয়ে ফেলতাম। কোন কোন সময় এটা নিয়েও চলত ঝগড়া :P আর নড়ার অপরাধে চোর তার পাশে দাড় করালে রেডী থাকতআম কখন চোরের পিঠে চড় পরবে। পারলে তার আগেই ঝেড়ে দৌড় :P

মাংস চোর: ঢাকায় এটাকে মাংস চোর বললেও গ্রামে মনে হয় ছোট বৌ চি বলে। যাই হোক জীবনে সবচেয়ে বেশী এনজয় করে খেলেছি মনে হয় এই খেলাটা, যদিও ছাই-পাশও পারতাম না। তাতে কি, চালাকী করে যারা এক্সপার্ট ছিল তাদের দলে চলে যেতাম :P নাইন/টেন এ থাকতে একজন ম্যাডামের পর পর দুইটা ক্লাশ ছিল। ম্যাডাম আবার অসাধারন ভাল ছিলেন। আমরা বলতাম, "ম্যাডাম আপনার আসার দরকার নাই আমরা পড়ে নিবো।" ক্লাসের বেশীর ভাগই ভাল ছিলাম তাই ম্যাডামও কিছু বলতেন না। বরং বলতেন, "বাসায় ত খেলার সুযোগ পাওনা এখানে খেলে নাও, এই বয়সে খেলার দরকার আছে।"(বোঝেন কি পরিমান ভাল ছিলেন। এই জন্যই এত্ত পছন্দ করি ম্যাডামকে :P)
তাসলিমা, পারভীন, নাসিমা আর নাদিরা ছিল বেশ ভাল। ওরাই সব সময় চি দিয়ে মাংস আনার দ্বায়িত্ব পালন করত। সবচেয়ে ভাল ছিল তাসলিমা। ও ঘর থেকে বের হলে সবাই বেশ এলার্ট থাকত যাতে ওকে আউট করা যায় কিন্তু প্রথম বারেই মাংস নিয়ে খেলা শেষ করে দিত। চি দেওয়ার সময় বেশ মজার একটা ছড়া বলত। ছড়া ছিল এরকম, চি কুতকুতাইয়্যা, বাবুলের মাইয়্যা, বাবুলে কান্দে কাঁচা কলা খাইয়্যা...কাঁচা কলা খাইয়্যা.....। খুব দ্রুত বলে যেতো। আমি সব সময় চেষ্টা করতাম ওর দলে যেতে B-)। কারন ওর দলে গেলে হারার কোন চান্সই নাই :P
পারভীনের চি দেওয়ার স্টাইলটা ছিল অন্য রকম। একটু টেনে টেনে সুর করে বলত। ও যে ছড়া টা বলতো সেটা ছিল এরকম, ঐ বাড়ী গেসিলাম খেলাইতেএএএ...পথে ধরল ডাকাইতেএএএ....ডাকাইতের নাম কি? কালাচান...ছোট ছোট পোলাপা...ন...ছোট ছোট পোলাপা....ননননন.....

নাসিমা ছিল সবার থেকে খাটো। ও চেষ্টা করত মাংস নেওয়ার সাথে সাথে সবাইকে আউট করার। আর নাদিরা ছিল সবার থেকে বেশি লম্বা। হাত বাড়িয়েই সবাইকে আউট করে দিত। জায়গা কম থাকায় সরারও সুক্সোগ ছিল না। পরে নিয়ম করা হয়েছিল হাত বাড়িয়ে আউট করা যাবে না।
উফ কিযে মজা করেছি এই খেলাটার সময় তা বলে/লিখে বোঝানো সম্ভব না। এখন সবাই একেক জন একেক দিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নাসিমার দাখিলের পরেই বিয়ে হয়ে যায়। বছর খানেক পরে মনে হয় একটা ছেলের মা ও হয়ে যায়। নাদিরাও এখন এক ছেলের মা। প্রায় সবাই এক এলাকায় থাকলেও দেখা-সাক্ষাত হয় কদাচিত।
==================================

দোস্তরা যে যেখানেই থাক সবার জন্যে রইল অনেক অনেক শুভকামনা

বিশেষ করে নাদিরা তোর জন্যে, কারন তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো কি না..... :P:P
৪৯টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×