somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত (১ম পর্ব)

৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জীবনের স্রোতোধারার অনিবার্য সঙ্গী হলো মানবজাতি ৷ 'নর' এবং 'নারী' মানবজাতির এই জীবনধারাকে প্রবাহমান গতি দিয়েছে সেই সৃষ্টির আদি মানব আদমের যুগ থেকে ৷ বর্তমান বিশ্বের ৬১০ কোটি মানুষ যুগ-যুগান্তের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার এখন ৷ মানুষ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ একটি বক্তব্য প্রায় সবারই জানা, তাহলো-‘মানুষ হলো বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী' ৷ সত্যিই এই বিচারবোধই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তুলেছে ৷ সেজন্যে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মত জীবন যাপন না করে আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গড়ে তুলেছে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ৷ যুগে যুগে আল্লাহ প্রেরিত রাসূলগণই এই পরিবার গঠনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ৷ সুশৃঙ্খল এই পারিবারিক কাঠামো থেকেই মানুষ পেয়েছে সভ্যতার আলো ৷ পরিবার কাঠামোর সাথে সভ্যতা যেন নিত্যসঙ্গী ৷ যেখানে পরিবার কাঠামো নেই, সেখানে সভ্যতা বলতে যা বোঝায়, তার সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলের জীবনযাপন পদ্ধতির খুব বেশী পার্থক্য নেই ৷ নারী এবং পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে পরিবার ৷ এই 'সম্মিলিত' শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নারী-পুরুষের পারস্পরিক অবদান এবং অধিকারের সূক্ষ্ম বিষয় ৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নারী-পুরুষের অধিকার এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শগত মতবাদ বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছে ৷ সেসব দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী একমাত্র ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদই নারীকে কখনো ভোগ্যপণ্যে কিংবা কখনো পুরুষ দেবতার সেবাদাসীতে পরিণত করেছে ৷ সভ্যতার এই স্বর্ণযুগেও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার নিয়ে এখনো চলছে বিচিত্র কৌণিক মতামত ৷
পশ্চিমা সমাজে পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় সেখানে বিবাহ-বহির্ভূত লিভিং টুগেদার বা নারী-পুরুষের একত্রবাস প্রথা চালু রয়েছে ৷ এছাড়া বিয়ের প্রচলন সেখানে যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার প্রশ্নে মতবিরোধের জের ধরে ডিভোর্সের মাত্রাই ব্যাপক ৷ যে সমাজে লিভ-টুগেদারের জন্যে বিয়েরই প্রয়োজন নেই, সে সমাজে ডিভোর্স বা তালাক প্রদানের মাত্রা যে কতো মামুলি ও ভয়াবহ, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায় ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মানদন্ডে পশ্চিমা জগত আধুনিক সভ্যতার দাবীদার হলেও ক্ষয়িষ্ণু পরিবার কাঠামোর ফলে পাশ্চাত্য সভ্যতা বিশ্বব্যাপী অকল্যাণই বয়ে এনেছে ৷ তাদের ঐ কু-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাবে মুসলিম জাতির মধ্যেও তা এখন সংক্রমিত হচ্ছে ৷ এরফলে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ব্যাপক বেড়ে গেছে ৷ অথচ পরিবারের প্রধান যে দুটি স্তম্ভ অর্থাৎ বাবা-মা বা স্বামী-স্ত্রী-তাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক কর্তব্যবোধ স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকতো, তাহলে এই সমস্যা হয়তো দেখাই দিত না ৷ বহু শিক্ষিত পরিবারেও যথার্থ ইসলামী শিক্ষার অভাবে এ ধরণের সমস্যা বিরাজ করছে ৷ শিক্ষিত এইসব পরিবার তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে চিন্তা করে থাকে পাশ্চাত্যের মানদন্ডে, যেখানে নারী-পুরুষ স্বাধীনভাবে যাপন করছে পশুর মত জীবন ৷ তাই মুসলিম দম্পতিদের উচিৎ তাদের নিজস্ব ধর্মাদর্শ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পারস্পরিক কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং যথাযথভাবে তা মেনে চলা ৷ তাহলেই দেখা যাবে সংসার হয়ে উঠেছে শান্তির সোনালী নীড়।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন এবং পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ স্থাপন করেছে ৷ ইসলাম পূর্বকালে নারীকে মানুষই মনে করা হতো না ৷ গ্রীকরা তাদেরকে মনে করতো শয়তানের চর ৷ জৈবিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই তাদের ব্যবহার করা হতো ৷ রোমানদের অবস্থাও ছিল তাই ৷ সেখানে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করা হতো ৷ জাহেলিয়াতের যুগে আরবে কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলার ইতিহাস সর্বজনবিদিত ৷ পারস্য সভ্যতায়ও কন্যাসন্তানকে ভীষণরকম অকল্যাণকর বলে মনে করা হতো ৷ চীনের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোন পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা দুঃখ ও সহানুভূতি জানাতো ৷ অর্থাৎ নারী ছিল একটা ভোগ্যপণ্য ৷ তাদের ব্যক্তিগত কোন মানবিক সত্ত্বাই স্বীকার হতো না ৷ আর হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা মৃত ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকেও জীবন্ত পুড়ে মারতো ৷ এরকম করুণ একটা ঘটনাকে তারা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও ত্যাগের নিদর্শন বলে মনে করতো ৷ কী আশ্চর্য, বিধবাকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, দিয়েছিল চিতার আগুনে জীবন্ত পোড়াবার নির্দেশ ! এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিচিত্র উপায়ে নারীদের সত্ত্বাকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল ৷ ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের ফলে নারী পেল তার মৌলিক মানবিক অধিকার । নবী করিম (সাঃ) ঘোষণা করেন, হে মুসলমানেরা! তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তাদের উপরও তোমাদের অধিকার রয়েছে ৷" আল্লাহ রাববুল আলামীন বললেন, নারীরা তোমাদের পোষাক এবং পুরুষরাও নারীদের পোষাকস্বরূপ ৷ যুগান্তকারী এইসব ঘোষণার মাধ্যমে নারী ফিরে পেল তাদের অধিকার, ফিরে পেল মানুষ হিসাবে তাদের অস্তিত্ব, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারাও হয়ে উঠলো সভ্যতা সৃষ্টির প্রশংসিত স্রষ্টাদের গর্বিত অংশীদার ৷ কবি নজরুলের ভাষায়-

পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর

ইসলাম নারী এবং পুরুষকে তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি পরিবারের শৃঙ্খলা বিধানের জন্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে একটা আদর্শ সমাজ বিনির্মানকে সুনিশ্চিত করেছে ৷ পরিবারের মূল হলো স্বামী-স্ত্রী বা বাবা-মা৷ স্বামী-স্ত্রীর জীবনে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার অনুশীলন যদি না থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনেও তা আশা করা যায় না ৷ আর স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের বংশধরের সামষ্টিক রূপই হলো সমাজ ৷ আর সমাজ কাঠামোর বৃহত্তর সংগঠনই রাষ্ট্র ৷ তাই বলা যায় একটা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও আদর্শের মূল ভিত্তিই হলো পরিবার ৷ ইসলাম তাই পরিবার তথা বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের মধ্যকার পারস্পরিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা বিধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একের প্রতি অপরের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে যথাযথ রূপরেখা দিয়ে দিয়েছে ৷ কারণ স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধনই উত্তর প্রজন্মের নৈতিক শৃঙ্খলা বিধানের একমাত্র উপায় ৷ সমাজের প্রতি একটু সচেতন দৃষ্টি দিলে লক্ষ্য করা যাবে, যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ রয়েছে, সে পরিবারে শান্তিতো নেই-ই বরং পরবর্তী প্রজন্মও বিশৃঙখল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে ৷ সামাজিক অনাচার, মাদকাশক্তিসহ মানবিক মূল্যবোধ বর্জিত কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে এই পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ৷ অথচ পরিবারে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সাধারণত খুবই ছোটখাট ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দানা বেঁধে ওঠে ৷ ঘটনাগুলোর জন্য পারস্পরিক অহমবোধ, অশ্রদ্ধা, সম্মানহীনতা এবং নিজ নিজ কর্তব্যের ব্যাপারে ইসলামের বেধে দেয়া মানদন্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকাই দায়ী ৷ আমাদের সমাজে এখনও অজ্ঞানতাবশত স্বামীদের অনেকেই মনে করেন যে, স্ত্রী হলেন তাদের দাসীর মতো ৷ স্ত্রীর কাজ হলো স্বামীর সকল আদেশ মেনে চলা ৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন স্ত্রী এ ধরনের স্বৈরাচারী স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে নেয় না ৷ সেজন্যেই শুরু হয় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ৷ স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ওপর যেরকম অধিকার চর্চা করার চেষ্টা চালায়, স্ত্রীদেরও যে স্বামীর ওপর সেরকম আধিকার চর্চার সুযোগ রয়েছে এ কথাটা স্বামীরা ভুলে যান এবং পুরুষতান্ত্রীক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেন ৷ সেজন্যে স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তব্য এবং স্বামীর ওপর স্ত্রীর কর্তব্য সংক্রান্ত ইসলামী নীতিমালা নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব ৷ প্রথমেই আমরা স্ত্রীর ওপর স্বামীর কী কী কর্তব্য রয়েছে সেগুলো তুলে ধরবো ৷ একজন পুরুষ ইসলামের এই নীতিমালার মানদন্ডে নিজেকে বিচার করবেন এবং পারিবারিক শৃঙ্খলা ও দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন এটাই প্রত্যাশা ৷

৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×