somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ক্ষমতাবানদের স্বপ্নচূড়া, গণমানুষের হাঁটার সড়ক

৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষমতাবানদের স্বপ্নচূড়া , গণমানুষের হাঁটার সড়ক
ফকির ইলিয়াস
------------------------------------------------------------------
ভোলা-৩ আসনে উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করছে। আর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, বলছে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছিলেন। পরাজিত হয়েছিলেন, বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনের অনেকগুলো পরিচয় আছে। তিনি সামরিক বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা। অনেক বিতর্ক আছে তার কর্মকা- নিয়ে। তিনি বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন বিভিন্ন ক্যু তে। তার নেপথ্য মদদ জোগানোর বিভিন্ন কাহিনী পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সর্বশেষ, তিনি ডিগবাজি খান, ওয়ান-ইলেভেনের পরে। নিজ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে অন্য একটি কমিটির মহাসচিব হন তিনি। নিজেকে 'সংস্কারপন্থি' হিসেবে পরিচিত করেন।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে হাফিজ উদ্দিনের বক্তব্য কী ছিল। তা এখনও পত্রপত্রিকা ঘাঁটলে পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, মান্নান ভূঁইয়া, আশরাফ হোসেনসহ দু-চার জনকে ক্ষমা না করলেও মেজর (অব.) হাফিজকে কাছে টেনে নেন। 'সাধারণ ক্ষমা' ঘোষণা করেন তার প্রতি।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক ভরাডুবির পর, বিএনপি উঠে দাঁড়ানোর জন্য এই তরিকা অবলম্বন করে বলে অনেকে মনে করেন। যদিও গেল দেড় বছরে বিএনপি এখনও ঘর গুছিয়ে উঠতে পারেনি।
ভোলা-৩ আসনে উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল বিএনপি। তাদের ধারণা ছিল মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এবং বিএনপি প্রার্থী এই আসনে ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট বেড়েছে।
আসনটি যে বিএনপির ছিল এমনও নয়। তারপরও খোন্দকার দেলোয়ার, ব্যারিস্টার মওদুদ, খন্দকার মোশাররফ প্রমুখ নেতারা কেন এই আসনটির জন্য এত লোভী হয়ে উঠেছিলেন? কারণ তারা মনে করেছিলেন, এসব ধানাই-পানাই বক্তব্য দিলেই জনগণ তাদের পক্ষে দাঁড়াবে। অথবা এটাও হতে পারে তারা এই আসনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে একটা আন্দোলনের পথ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আপাত দৃষ্টিতে দ্বিতীয় কারণটিই বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, কোন ক্ষমতাসীন দলের অধীনে উপনির্বাচনে বিরোধীদল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিততে পারে না। এর কারণ হলো, জনগণ ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য সরকারি দলীয় এমপি চায়। অন্যদিকে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোও সরকারের প্রতি এক ধরনের মৌন সমর্থন দিয়ে যায়।
অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই সরকারি পেশিতন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার কি করেছে বিএনপি। এই সেই বেগম জিয়া যিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কোনদিনই বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। 'শিশু' ও 'পাগল' ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার প্ররোচণায় ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২০০১-এ যখন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বিচারপতি লতিফুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও কোন ছলাকলার আশ্রয় নেয়নি। অষ্টম জাতীয় সংসদে চারদলীয় জোট জিতে।
কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদের শেষ দিনগুলোতে কী দেখল বাংলার মানুষ? হাওয়া ভবনের নেপথ্য নায়করা ক্রীড়নকের দায়িত্ব নিলেন। তারা অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করে শেষ পর্যন্ত 'সাংবিধানিক দোহাই' দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেন। তারপর ঘটে গেল আরও অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। এর নেপথ্য ইচ্ছেটি ছিল, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে স্থায়ী রূপলাভ দেয়া। বাংলাদেশে 'মিস্টার টেন পার্সেন্ট' খ্যাতি পেয়েছিল এই হাওয়া ভবনধারীরা।
ছাত্রদলের একটি সমাবেশে এখনও বেগম জিয়া যেসব দুর্নীতিবাজদের পক্ষে কথা বলেছেন, তা একটি টিভি চ্যানেলে দেখলাম, সরকার দেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন খান মামুনের 'চ্যানেল ওয়ান' বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার বলেছে, চ্যানেল ওয়ান, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি বলেই তা বন্ধ করা হয়েছে। সরকারি ধারাবাহিকতায়, নিয়মানুযায়ী তা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ বেগম জিয়া সরাসরি বলেছেন, চ্যানেল ওয়ান চালু করতে হবে।
বাংলাদেশে ভাল রাজনীতির চর্চার খুবই অভাব। তারপর আবার যদি রাজনীতিকরাই প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সাফাই গাইতে থাকেন, তাহলে জনগণ দাঁড়াবে কোথায়? প্রতিহিংসার রাজনীতি সমাজকে শুধু ধ্বংসই করে না, সমাজের ভিত্তিও ক্রমশ নিঃশেষ করে দেয়। পত্রিকায় দেখলাম, খালেদা জিয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ, জে. (অব.) মইন উ আহমেদের বিচার করার ঘোষণা দিয়েছেন। কেন তার এই ক্ষোভ? ওয়ান ইলেভেন তাদের 'স্বপ্নেরচূড়া' ধ্বংস করে দিয়েছিল বলে?
বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোন স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দু'ধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো।
সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। আর বিরোধীদল আগুনে ঘি ঢালছে। তাদের মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। স্পিকার আবদুল হামিদ নিউইয়র্কে এক সমাবেশে বলে গেছেন, বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! স্বয়ং স্পিকারের মুখে এ কথা কি প্রমাণ করে না, দেশের প্রকৃত অবস্থা কী! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভন্ডত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই।
নিউইয়র্ক , ২৭ এপ্রিল ২০১০
========================================
দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ৩০ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার

ছবি- পিল লিয়েরো
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×