somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্ভাবনার অপমৃত্যু !

২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শামীম মাহবুব যখন সংবাদটি পড়ছিল তখন তার কন্ঠ থেমে যাচ্ছিল।যিনি ভিডিও করছিলেন ,তার এক চোখ ক্যামেরায় অপর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে।তাকে পেছন থেকে ধরে একজন কাদছে।যখন সম্প্রচার বন্ধ করা হচ্ছে,তখন সবাই কাদছে।সব ডেস্কে সাংবাদিক আছে নিশ্চল নিথর। সিনিয়র রিপোর্টার কেরামত উল্লাহ বিপ্লব কথা বলছেন মিডিয়ার সামনে।মাঝে মাঝে কথা আটকে যাচ্ছে।নিয়মিত রিপোটিংয়ে যা কোনদিন হয়নি আজ তাই হচ্ছে।বিপ্লব কাদছেন,পেছন থেকে একজন তার পিঠে হাত বুলাচ্ছেন।যিনি সান্তনা দিচ্ছেন তার চোখে পানি।অন্য মিডিয়ার সহকর্মীরা যারা নিউজ কাভার করতে গুলশান উদয় টাওয়ারে এসেছেন,তারা ও সান্তনার ভাষা মনে হয় ভুলে গেছেন। মুখে কোন কথা নেই। সবাই নিজেদের অপমৃত্যুর শোকে শোকাহত।এতদিন যারা অন্যের সংবাদ প্রচার করতো,আজ তারাই সংবাদের বিষয়বস্তু।যারা নিয়মিত রিপোর্ট দিয়ে অন্যের খবর জানাতো,আজ তারাই রিপোর্টের শিরোনাম।

নিউজ প্রেজেন্টার যা পড়ছিলেন-সম্ভাবনার কথা বলে এই শ্লোগানে এদেশের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারী যাত্রা শুরু করে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল -চ্যানেল ওয়ান।দীর্ঘ এপথ পরিক্রমায় দেশে বিদেশে দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চ্যানেলটি।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে সরকারের টেলিকমিউনিকেশন অথরিটির নির্দেশে এখন থেকে চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হচ্ছে।এজন্য দর্শক, ক্যাবল অপারেটর ,কলাকুশলী ,ও বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আশাকরি শিগগিরই আমরা অমাদের সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে ফিরে আসবো।

কান্নাজড়িত কন্ঠে কেরামত উল্লাহ বিপ্লব বলছিলেন-চার শতাধিক সাংবাদিক কর্মকর্তা এ চ্যানেলে কর্মরত।চ্যানেল ওয়ানের বিষয়ে কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী,তথ্যমন্ত্রী,এবং বিটিআরসি মানবিক দিকটি বিবেচনা করবেন আশাকরি।

মন্ত্রী বলেছেন-চ্যানেল ওয়ান একটি পরিচ্ছন্ন বিনোদনমুলক নিরপেক্ষ চ্যানেল।টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ ভঙ্গের অভিযোগে চ্যানেলটি বন্ধ করা হয়।কারন ব্রডকাস্টিং ইকুইপমেন্ট ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা যায়না।এটি নিলামে উঠতে পারেনা।পুরো বিষয়টি আইনের লঙ্ঘন।

২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬.৪১ মিনিট একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু।

২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর পরীক্ষামুলক সম্প্রচার শুরু করেছিল ২৪ ঘন্টার সংবাদভিত্তিক চ্যানেল যমুনা টেলিভিশন।ঠুনকো অভিযোগে ৩৫ দিনের মাথায় ১৯ নভেম্বর রাত ১০ টায় বিটিআরসির কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা যমুনা টিভি বন্ধ করে দেয়।তারা শুধু চ্যানেলটি বন্ধই করেনি, টিভি কর্মকর্তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে,এবং অনেক মুল্যবান যন্ত্রপাতি ভাংচুর করে।সম্প্রচার যন্ত্রাদি জব্দ করে বিটিআরসি।তরঙ্গ বরাদ্ধ ,ও যন্ত্রপাতির আমদানির অনুমতি সত্ত্বেও তাদের লাইসেন্স বাতিল করে সরকার।
একঝাক তরুন মেধাবী অভিজ্ঞ প্রতিশ্রুতিশীল তরুনদের সমন্বয়ে গড়া হয়েছিল যমুনা নিউজ টিম।আজ আইনি জটিলতায় আটকে আছে অত্যাধুনিক যমুনা টিভি।জম্মের পর থেকেই আইনকে সঙ্গী করে পথ চলছে চ্যানেলটি।একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু।
২০০২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী যমুনা টিভির অনুমোদন পান যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল।

২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘন্টার নিউজ চ্যানেল সিএসবি বন্ধ করে দেয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।নিউজ চ্যানেল হওয়ার কারনে চ্যানেলটি অল্পদিনেই দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।যাত্রা শুরুর কয়েক মাসের মাথায় যথাযথ ছাড়পত্র না থাকার অভিযোগে সিএসবি নিউজ বন্ধ করা হয়।
আরেকটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু।

২০০২ সালের ২৯ আগস্ট দেশের প্রথম প্রাইভেট টেরেস্টিয়াল টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন কে আদালতের রায়ে বন্ধ করে দেয় সরকার।দেশের একমাত্র জনপ্রিয় চ্যানেল তখন ইটিভি।আদালতের রায় নিয়ে ফিরে আসলে ও চ্যানেল তার অতীত জনপ্রিয়তার অবস্থানে এখনো যেতে পারেনি।কারন একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অন্য চ্যানেল ইটিভির স্থান দখল করে নিয়েছে।

আদালতের রায়ে হয়তো একদিন ফিরে আসবে সিএসবি,যমুনা,ও চ্যানেল ওয়ান।তারা আবার তাদের সম্ভাবনার কথা বলবে।আমরা মনেকরি পথ চলতে মানুষের ভুলত্রুটি হবেই।সরকারের সাথে আমাদের মিডিয়া কর্মীদের দ্বিমত থাকবেই।সম্প্রচার বন্ধ করাটাই একমাত্র সমাধানের পথ নয়। গ্রহনযোগ্য গঠনমুলক সমাধান আমাদের স্বার্থেই আমাদের করে নিতে হবে।আমরা চাইনা আর কোন চ্যানেল বন্ধ হোক।আর কোন সংবাদকর্মী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ুক।সম্ভাবনাময় আগামী গড়তে উদ্যমী সিএসবি ,যমুনা,চ্যানেল ওয়ান ফিরে আসুক।

সুঘ্রাণ কাদের
লন্ডন.
[email protected]




৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×