somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“সবার সুখে হাসবো মোরা কাঁদব সবার দুখে”- এই ‘সবার’ বলতে কিন্তু ‘সবাই’ না!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘সবার সুখে হাসবো মোরা কাঁদব সবার দুখে...’
সবার দুখে কাঁদতে আমার আপত্তি নেই।
তবে এই ‘সবার’ মধ্যে সবাইকে ফেলতে আমি রাজি না। এমন কিছু লোক আছে যাদের দুঃখে কান্নার পরিবর্তে অটোম্যাটিক হাসি চলে আসে! :-)

‘Mechanical Design of Process Equipment ’ নামে এ সেমিস্টারে আমাদের একটা কোর্স আছে। ওপেন বুক এক্সাম। বই উঠানো এবং সেইসাথে ক্লাসে বই আনা বলতে গেলে বাধ্যতামূলক। বই নাই তো রুমে গিয়ে ডিমে তা দাও! বই থাকলে পাতা উল্টাও... পাতার পর পাতা উল্টাও... এ বই পড়ার চেয়ে পাতা উল্টালেই নাকি বেশী শেখা যায়!

যাহোক, ল্যান্ডিং কার্ড রিনিউ করার মত দুরূহ একটা কাজ সেরে কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম বই উঠাতে। ভীর দেখে মনে হল ঈদে বাসে টিকেট কাটতে এসেছি। তারওপর সেকশন অফিসারের কচ্ছপ মার্কা গতি দেখে বিরক্তিটা চরমে উঠল। দাঁড়িয়ে থাকলাম অনেক্ষণ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল। লাইব্রেরী কার্ডটা এগিয়ে দিলাম। টেবিলে রাখা মাত্র জিএফসি ফ্যানের বাতাস আমার অর্ধছেড়া কার্ডটিকে দু’টুকরো করে ফেলল! সেকশন অফিসার চেঁচিয়ে উঠলেন!

-এটা কার কার্ড?
-আমার। বাতাসে ছিড়ে গেল। স্কচ টেপ লাগাতে হবে।
-হবে না। ছেড়া কার্ডে বই ইস্যু হয় না। নতুন কার্ড নিয়া আসেন।
-নতুন কার্ড কই পাব? এইটাটেই ইস্যু করে দেন। বইটা খুব জরুরী।
-বললাম তো ছেড়া কার্ডে আমি বই ইস্যু করিনা!
-করবেন না কেন? আপনার সামনেই তো ছিড়ে গেল! ইস্যু করেন। টেপ লাগিয়ে নেব।
-আমি ছেড়া কার্ডে বই ইস্যু করব না!

শেষের কথাটা অনেকটা জমিদার স্টাইলে বললেন। অবুঝদের বুঝানো যায় কিন্তু বেবুঝদের বুঝানো যায় না। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। শুধু লোকটার নাক ফাটানোর ইচ্ছেটা দমাতে পারছিলাম না!

ছেড়া কার্ডটা জমা দিলাম। এখানেও সেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা! না, কার্ড এ সপ্তাহেই হবে না! অপেক্ষা করতে হবে সোমবার পর্যন্ত!

আজ রবিবার। লাইব্রেরীতে গিয়ে একটু অবাকই হলাম। আমার কার্ড হয়ে গেছে! এবার ঝকঝকে নতুন কার্ড নিয়ে হাজির হলাম ল্যান্ডিং শাখায়। ভীর নেই। অবস্থা অনুকূলে। কার্ড বাড়িয়ে দিলাম। ভদ্রলোকের নজর অন্যদিকে। দু’টি মেয়ে এসেছে। উনি আগে আপামণিদের বিদায় করবেন। ভদ্রলোক এতটাই এক্সাইটেড ছিলেন যে, আপামণিদের লাইব্রেরী কার্ড রিনিউ করা নেই উনি সেটি খেয়ালি করেন নি! ব্যাপারটা ইগনোর করলাম।

আমার ঝকঝকে নতুন লাইব্রেরী কার্ডটি জমিদার বাবুর হাতে। লাইব্রেরী কার্ডে ছবি ছিল না বলে প্রথমে আপত্তি উঠলেও আইডি কার্ড দেখাতেই তা দেবে গেছে। জমিদার বাবু হন্য হয়ে আমার ল্যান্ডিং কার্ড খুঁজছেন। কার্ডটি যেখানে থাকার কথা সেখানে নেই! বুড়ো মানুষ! কাজের চাপে ভুলে কই যে রেখেছেন কে জানে?(!)

তাতে আমার কি? আমি বই নিতে এসেছি বই নিয়েই যাব। কার্ড তো আমার ছেড়া না যে ছাড় দেব! জমিদার বাবু খুঁজেই যাচ্ছেন। এক ঘন্টা পেড়িয়ে গেল। ভদ্রলোক মোটামুটি বিপদেই পড়েছেন। এই প্রথম কারো বিপদ দেখে হাসি চলে এল! খুব মজা পাচ্ছিলাম। থেকে থেকে বইটার গুরুত্ব এবং বই না থাকার অসুবিধা সম্পর্কে জমিদার বাবুকে নসিহত করছিলাম। ভদ্রলোক কাহিল হয়ে পড়লেন!
-আপনি কালকে আসেন।
-কাল কেন? আমার তো বইটা লাগবে!
-না। কালকে একবার আসেন। আসলে কাজের অনেক চাপ তো! কোথায় যে রাখছি!
-তো কি করব? বইটা নিয়ে যাব? খুব দরকার। কাল ৯ টায় ক্লাস আছে।
-আমি তো বুঝতে পারছি। কিন্তু...

ফাইজলামী করার ইচ্ছে থাকলেও বাদ দিলাম। যদিও বিনোদনের অভাব হচ্ছিল না তারপরও জমিদারের করুণ মুখটা দেখে মায়া হল। আজকের মত ছেড়ে দিলাম। বেচারা... ‘আমি ছেড়া কার্ডে বই ইস্যু করি না!’

জমিদার বাবুর শাস্তিটা একেবারে মন্দ হয়নি। খোঁজো বাবা খোঁজো! রাতভর খোঁজো...
আমি বরং একটু হেসে নেই! :D :D :D
কাল আবার আসছি...
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×