somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার বাড়িই আমার বাড়ি, আমার বাড়ি নেই.....!!

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘরের সংজ্ঞা কি... বাড়ি বা বাসা কাকে বলে!!

ঠিক কেমন হলে একটি দালান কাঠামো কে বাসা বা গৃহ বলা যায়, নিজের বাড়ি বলা যায়!!!


আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের বিশাল হৃদয়ের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র হলেও সাধারনের তুলনায় সুবিশাল তাঁর বাসা...

বাসা না বলে ৬৬,০০০ বর্গফুটের এই স্থাপনাকে প্রাসাদও বলা যেতে পারে।
পাহাড়ের পাদদেশের স্বচ্ছ লেক ঘেঁষে বিলাসবহুল এই বাড়িটি শুধু আয়তনে বড় নয় বরং স্থাপত্যকলা, প্রযুক্তি ও আধুনিকতায় বিশ্বসেরা, এক অদ্ভুত বিস্ময়!!



ছবি: বাড়িটির রিসেপশন বা প্রবেশদ্বার!

প্রাসাদোপম বাড়িটির বিস্ময়কর আধুনিকতা বা প্রযুক্তির সামান্য কিছু উদাহরন; এই বাড়িটির যেকোন কক্ষে প্রবেশ করলে সে কক্ষের তাপমাত্রা, আলো এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে চলা লো ভলিউমের মিউজিক প্রবেশকারীর রুচী অনুযায়ী এডজাস্ট হয়ে যাবে। বাড়ির সদস্যদের সব কিছু প্রোগ্রাম করা যা সেন্সরের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় ডিটেক্ট করে সে অনুযায়ী এডজাস্ট করে নেয়। মজার ব্যাপার হলো, অতিথিরাও এই সুবিধা থেকে বন্চিত নন। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে একটি পিন দেয়া হয়, যার সেন্সরের মাধ্যমে অতিথির প্রেফারেন্স ডিটেক্ট করে তাঁর পছন্দ মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই বিস্ময়কর বাড়িটির আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, কোন কক্ষ শুণ্য করে কেউ অন্য কক্ষে প্রবেশ করা মাত্র ছেড়ে যাওয়া কক্ষের বাতি নিভে নতুন কক্ষের বাতি জ্বলে উঠে!!!
সবচেয়ে মজার এই বাসার রন্ধনশালা, কিচেন বা রান্নাঘর। বেশ কয়েক বছর আগে টিভিতে এই কিচেনের একটি রেপ্লিকা দেখিয়েছিলো...যেকোন সৌখিন পাচক, পাকা রাঁধুনি এমনকি রান্নায় অপটু ব্যক্তির জন্য স্বর্গসম। এই রান্নাঘরটিতেও প্রবেশকারীর রুচীভেদে আলো, মিউজিক ও তাপমাত্রা এডজাস্ট হয়ে যায়.. এবং কিচেন কাউন্টার বা তাকের উপর বাজার বা রান্নার উপকরন রাখা মাত্র কাউন্টার তা ডিটেক্ট করে জানিয়ে দেয় কোন উপকরন, কতো ওজনের রাখা হলো, শুধু তাই নয় – সে উপকরন বা খাবারের পুষ্টিগুন ও জানাতে ভুলে না। চুলোর সামনের বড় স্ক্রীনে এই উপকরন দিয়ে রাধা যায় এমন সব খাবারের রেসিপি ও পুষ্টিগুন ভেসে উঠে!!! রান্নাচলাকালীন সময় নির্দিষ্ট উপকরন কি পরিমানে দেয়া হলো তা জানিয়ে দেয়!!! লবন চিনি তেল মশলার পরিমানে ভুল হবার সম্ভাবনা কম!!



এই বিস্ময়কর বাড়ির বিশাল হৃদয়ের মালিকের নাম উইলিয়াম হেনরী গেটস্, যিনি বিল গেটস্ নামে অধিক পরিচিত!



পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছুটেচলা নদীর পাশে আরেকজন বিশাল হৃদয়ের মানুষের বসতি.. তাঁকে বিশাল হৃদয়ের অধিকারী বলার কারন কিছুটা ভিন্ন....

এজীবনে মানুষের চাওয়ার শেষ কোথায়!!! আমদের উচ্চাশার কোন সীমা নেই যেনো, আরো কিছু পাবার আশায় নিরন্তর আমাদের ছুটে চলা। যাঁর ঘর আছে তিনি আরো ভালো ঘরের আশা করেন, যাঁর গাড়ি নেই তিনি একটি গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখেন, আর যাঁর গাড়ি আছে তিনি আরো ভালো একটি গাড়ির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন!!! তাই কখনও আমরা এই ছুটেচলায় ইতি টেনে খুব আয়েশে গা এলিয়ে বলতে পারিনা, “আমার প্রচুর আছে, আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই”। এই বলাটার মাঝে শুধুই পূর্ণতা ও পরিতৃপ্তি নয় বরং একধরনের মাহাত্ম কাজ করে, আমাদের উচ্চাশা ও মানসিক দৈন্যতা, ক্ষুদ্রতার কারনে যা আমরা অধিকাংশ অর্জনে অক্ষম!!!

রিচার্ড জিমারম্যান নামক এই বিস্ময়করা মানুষটি এসব ক্ষুদ্রতা, এমনকি খ্যাতির লোভ অতিক্রম করে একথা বলতে পেরেছেন!!!!!!!!!!
এমন কি ছিলো তাঁর?? জিমারম্যানের ছিলো মানসিক শান্তি ও পরিতৃপ্তি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়েতোলা তাঁর আবাসটিও বিস্ময়কর!! পাহাড়ের গা কেটে স্বহস্তে বানানো গুহার মতো আবাস জিমারম্যানের- যিনি স্থানীয়দের কাছে ডাগআউট ডিক নামে অধিক পরিচিত ছিলেন! শুধু তাই নয়, পাহাড়ের গায়ে পরিত্যক্ত গাড়ির জানালা, লোহার দরজা, পুরনো টায়ার আর কিছু কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস দিয়ে তিনি নিজ আবাসের মতো আরো কয়েকটি গুহা গৃহ বানান, যার কোন কোনটির গুহা ৬০ফুট পর্যন্ত গভীর!!! অর্থের তেমন প্রয়োজন না থাকলেও কৌতুহলি, অতিথি বা এ্যাডভেন্চরাস মানুষদের তিনি এসব গৃহে রাত প্রতি মাত্র ২ ডলার অথবা মাস প্রতি ২৫ ডলার ভাড়ায় থাকতে দিতেন।



“এখানে আমার সব কিছু আছে। আমার কাছে পাথর, রাবারের টায়ার আছে। প্রচুর পরিমান খড়, ফল আর সব্জি আছে। আমার কুকুর, বিড়াল সেই সাথে আমার গিটার আছে। রান্নার জন্য ওয়াইন আমি নিজেই বানাই। আমার আর কোন কিছুর প্রয়োজন বা অভাব নেই।” একথা অদ্ভুত শোনালেও, এ যে উচ্চাশা, নিয়ত সোনার হরিনের পিছে ছুটে চলা আর লোভের হাতছানি অতিক্রম করা এক বিজয়ীর উক্তি তা অনুধাবন করা যায়।।।



ছবি: নিজগৃহে জিমারম্যান


প্রযুক্তি কে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে আদিকালের গুহামানবের জীবন আপন করে নেয়া এই বিজয়ী ৯৪ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানান ২৩ শে এপ্রিল ২০১০। বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে শুশ্রুষা কেন্দ্রে নিয়ে যান, যেখানে টেলিভিশন, বিঙ্গো গেমের মতো বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলেও জিমারম্যানের কাছে এসবের কোন মূল্য ছিলোনা- তাই সদর্পে বেড়িয়ে আসেন বিলাসবহুল শুশ্রুষাকেন্দ্র থেকে, নিজ হাতে গড়া গুহায় জীবনের বাকি কিছু মুহুর্ত কাটিয়ে সেখানেই শেষ নিঃশ্বস ত্যাগ করেন।।

রিচার্ড জিমারম্যানের মৃত্যুর সাথে সাথে একটি অধ্যায়, একটি যুগ, একটি কালের অবসান ঘটে।।


*তথ্যসুত্র: আইড্যাহো স্টেটসম্যান, এই জি টিভি, ইন্টারনেট
*ছবি সুত্র, আইড্যাহো স্টেটসম্যান ও ইন্টারনেট

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১০ সকাল ১০:৫৩
৪৯টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×