somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ আমার মেঘে মেঘে আনন্দের রঙধনু

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪শে এপ্রিল

আমার জন্মদিনের সৌরভ আজি ঠের পাচ্ছি। বাহির থেকে তারি সুবাস নিয়ে বাসাই ঢুকলাম। তাড়াহুড়া করে সেগুলোই লিখতে বসছিলাম। অনলাইন হতেই দেখি তুমি লগিন করলে। আমার আনন্দের মুকুটে পালক লাগানো যদি কিছুতে হয় তবে সেটি এই এখন তোমাকে অনলাইনে পাওয়া।

তাড়াহুড়ো করে লিখতে বসতে চাইছিলাম কারণ ভয় হচ্ছিল পাছে শব্দগুলো ধরা দিতে দিতেই অধরা থেকে যায়। বার কয়েকবার এমন হওয়াতে মনে হল আজ আরেকবার ওমনটি করা যাবে না। কিন্তু স্বপ্নচারিনী নিজে থেকেই যখন আভির্ভূত হলেন তখন শব্দদের খোওয়ানোর ভয় আজ আর নেই। আমার শব্দরা আজ নিজেরাই কীর্তন গাইতে গাইতে ধরা দিবে। হৃদয় ফোয়ারায় আজ আনন্দের ফেনিল ধারা উপছে উপছে পড়ছে। আমার আজিকের আনন্দোচ্ছ্বাসের সীমা পরিসীমা নির্ধারণ করে সে আজ কার সাধ্য। শব্দদের নিয়ে আজ আমি স্বর্গ মর্ত্য পরিভ্রমণ করব। অযুথ নিযুত নক্ষত্রের মাঝে উড়ে উড়ে বেড়াবো। ধূমকেতুর লেজে চড়ে যাবো যুগ থেকে যুগান্তরে। আমার মেঘের রথে লাগাবো রঙধনুর সব কটি পালক। আজ আমার মেঘে মেঘে থাকবে শুধুই আনন্দের রঙধনু।

: অগ্রীম জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো নাআআআ :P
: আচ্ছা। আমিও নিলাম না :)
: দেইতো নাই। নিবে কিভাবে :P
: আনন্দে থেকো...যাও এইবার
: না যাবো না
: হাহাহা
: ঘুমাবো
: ঘুম সুন্দর এবং স্বপ্নময় হোক
: ওইইই
: কইইই :P
: তোমারও দিন সুন্দর কাটুক
: থ্যাংকুশ :)
: একটা উপহার দিতে চাচ্ছিলাম। যদি কাল কথা না হয় তাই এখনই দিতে চাচ্ছিলাম
: আজই দিয়ে দাও :)। এমন আনন্দের দিন কাল না থাকতেও পারে
: ঠিক আছে। যেমনটি তোমার ইচ্ছা
: :)
: এই নাও জন্মদিনের উপহার। ইয়ায়ায়া ঢিশুমমমমমমমম। হাহাহাহাহহাহা :P
: হাহাহাহা। আন্দাজ করছিলাম এমনি কিছু হবে
: পছন্দ হয়েছে? হাহাহাহা
: ভীষন নাআআআআ।

নানান কথার মাঝে তাকে এই কথাটাও বললাম যে তাকে অনলাইনে পাওয়াটায় আমার জন্মদিনের উপহার। আর কথায় কথায় সেই উপহার আমি ষোল আনায় আদায় করে নিয়েছি :)

...

কাল একজন বলছিল যখন তুমি একাগ্রচিত্তে কোন কিছুর কথা ভাববে তবে দেখবে তার অস্তিত্ব তুমি তোমার আশে পাশেই ঠের পাচ্ছো। রবি ঠাকুরের নৌকাডুবি পড়তে পড়তে আমি তাই একটা সুগন্ধি গোলাপ আমার কল্পনায় রেখে তার সুগন্ধ আমার ধ্যানে পাওয়ার চেষ্টায় রথ ছিলাম। বেশীক্ষণ সাধনা করতে হয়নি। গোলাপ তার সমস্ত রঙ আর সুগন্ধ নিয়ে আমার চারপাশেই মৌ মৌ করছে এখন।

"সেই নিস্তব্ধ ঘরের বাতায়নের আরক্ত সন্ধ্যার সঙ্গে গোলাপের গন্ধ মিশিয়া নলিনাক্ষের মনকে কেমন যেন উতলা করিয়া তুলিল। এতদিন তাহার বিশ্বের চারি দিকে সংযমের শান্তি, জ্ঞ্যানের গম্ভীরতা ছিল, আজ সেখানে হঠাৎ এমন নানা সুরের নহবত বাজিয়া উঠিল কোথা হইতে--কোন্‌ অদৃশ্য নৃত্যের চরণক্ষেপে ও নূপুরঝংকারে আজ আকাশতল এমন চঞ্চল হইয়া উঠিতে লাগিল।

...

আমার লুকাইবার কিছুই নাই, কী যে বলিবার আছে, তাও খুঁজিয়ে পাই না। রাত পোহাইতেই সকালে উঠিয়া মনে হইল আমার জীবনটা সার্থক-আমার সমস্ত দিনটা এমন মিষ্ট, আমার সমস্ত কাজ এমন হালকা হইয়া গেছে, তাহা আমি বলিতে পারি না।"

রবি ঠাকুরের এই শব্দগুলোই আমার মনের এখনকার অবস্থা পরিষ্কার জানান দিচ্ছে। ভোর থেকেই মনে হচ্ছে আমার জীবনটা আজ তার রুপের সব মাধুরী নিয়ে ধরা দিয়েছে।

সাবওয়ে থেকে হেটে ফিরতে ফিরতে প্রাণেশ্বরকে মনে মনে প্রণতি জানাচ্ছিলাম এমন একটা ধরণীতে আমার জন্ম হয়েছে বলে। এমন একটা সুন্দর দিন দেখার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে। পৃথিবীর এমন সব রুপ এমন করে আমার সামনে মেলে দিয়েছেন বলে। আশে পাশে যেদিকেই তাকাচ্ছিলাম সুখ যেন সব দিক থেকেই তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল। চলার পথে দেখি দুটো কবুতর আমার সামনে সামনে নিজের মনে হাটছে। কারো দিকে ভ্রুক্ষেপই নেয়। দূরে তাদের ঝাঁক আনন্দে ডানা ঝাপ্টাচ্ছে অথচ এই দুটো দলছাড়া পাখি বীরদর্পে পথের মাঝখানেই হেটে বেড়াচ্ছে। কোন ভয়ঢর নেয়। আমি যে তাদের ঠিক পেছনেই সেই ভয়টাও তাদের নেই। হঠাৎ কি যে হল পাখী দুটোকে এবং তাদের এমন ভাবলেশহীন হেটে বেড়ানো দেখে বুকের মাঝে আনন্দের একটা ঢেউ খেলে গেল। প্রাণ থেকে স্নিগ্ধ একটা হাসি বেড়িয়ে এল। আমি নিজেই তাদের জন্য পথ ছেড়ে দিয়ে ঘুরে নিজের পথে চলে গেলাম। একটু দূরে দেখি একটা দরজা দিয়ে হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে ফুরে বেড়িয়ে এল। পেছন পেছন ছুটটে ছুটটে এল তার মা। বাচ্চাটাকে দেখেই হাসি আবার আমার বাধ ছাড়লো। এমন মিষ্টি পিচ্চিকে দেখে হাসি বাধ মানে না। পিচ্চিটা নিজের মনেই একদিক দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তার মা পেছন পেছন হাসতে হাসতে ছুটে তাকে ঝড়িয়ে ধরে বললো, না বাবা অন্যদিকে। আমার বিধাতাকে প্রণতি জানানোর আরেকটা কারণ যোগ হল। আরেকটু হাটটেই দেখি গাছ গাছালি সব দখিনা হাওয়ার দোলায় চেপে আনন্দনৃত্য করছে। তাল লয় না মেনে ইচ্ছে মতন এদিক সেদিক নিজেদের শাখাপল্লব দোলাচ্ছে। তাদের আনন্দ দেখে আমার আনন্দ আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেলো। এক জায়গায় বাতাসের কারণে গাছ থেকে কিছু সুন্দর ফুল ঝরে ঝরে পড়ছিল। সেই গাছের নীচ দিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল স্বর্গ থেকে আজ দেবতারা আমার জন্য পুষ্পবৃষ্টি ঝড়াচ্ছে।

বাসায় ফিরে দেখি মা আমার জন্য আমার পছন্দের ইলিশ রেঁধে রেখেছেন। ঠিক ঠিক আমি যেমনটা পছন্দ করি। প্রাণ ভরে, স্ফূর্তির সাথে পেটপূজো সেরে নিলাম।

একবার এমনি এক আনন্দের দিনে আমি লিখে রেখেছিলাম, আজিকের আনন্দের সব রঙ হৃদি সিন্দুকে পুরে মহাকালের স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছি। হে আমার উত্তরকাল, অবসাদের মেঘ যখন তোমার হৃদয় আকাশকে ঢেকে দিবে তখন এই সিন্দুক থেকে কিছু আনন্দ তুমি তুলে নিওয়ো।

উত্তরকালের কাছে আজও আমার তেমনি নিবেদন রইলো।

২৫শে এপ্রিল

আজ বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকেই। বৃষ্টিস্নাত জন্মদিন আমার। লক্ষ্য করে দেখেছি এই দিনটাতেই বিগত কবছর থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিও বুঝি জেনে বসে আছে আজ মেঘের দূতের জন্মদিন :)



ছবির কৃতিত্বটা পাবে সুপ্তি আপুটা। কি যে দারুণ হয়েছে!! :)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:০৮
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×