somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখানে সেখানে, শহর কুয়ালালামপুরে……

২৪ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহর কুয়ালালামপুর। আমি এখন এ শহরে। ঘুরতে এসেছি, দেখতে এসেছি। দেশে থাকতে কতই না গল্প শুনেছি এ শহরের। কিন্তু এবার নিজের চোখেই দেখছি, ঘুরছি, ফিরছি কুয়ালালামপুর শহর।

রাজধানী শহর হিসেবে কুয়ালালামপুরকে ছোটই বলা যায়। অন্তত আমাদের ঢাকার তুলনায় তো বটেই। এই শহরটি পূর্ব-পশ্চিমে বেশ লম্বা কিন্তু উত্তর-দক্ষিণে সামান্যই বিস্তৃত। শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যায় উত্তর-দক্ষিণে।

নতুন এ শহরটি বেশ সাজানো-গোছানো। তবে পুরোনো কুয়ালালামপুর এখনো অগোছানো। সেখানে আমি ভাঙ্গা বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে বস্তি পর্যন্ত দেখেছি। কুয়ালালামপুরের পাসার সেনি নামক এলাকাটি এবং এর আশেপাশের আর কিছু এলাকাকে বলা হয় পুরোনো কুয়ালালামপুর। পুরোনো হলেও এলাকাটি যে যথেষ্ঠ গুরুত্বপুর্ণ তা বোঝা যায় শহরটির পরিবহন ব্যবস্থা দেখে। শহরের সকল রুটের বাসের শেষ গন্তব্য স্থল এই পাসার সেনি। এছাড়াও ট্রেন এবং মনোরেলও পাসার সেনির সংগে সংযুক্ত। অনেকটা আমাদের দেশের গুলিস্তানের মত। তবে এখানে গুলিস্তানের মত অত ভিড়ভাট্টা বা হইচই নেই। অনেক শান্ত এলাকা এটি।

কুয়ালালামপুর বলতে আমরা যা বুঝি তা হল আসলে নতুন কুয়ালালামপুর। আগেই বলেছি শহরটি বেশি বড় নয়। শহরের নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। সারা শহর জুরে অসংখ্য ভবনের চলমান নির্মাণ কাজ চোখে পড়ে। সব উঠছে আকাশকে ছোয়ার লক্ষ নিয়ে। এখানকার প্রায় সব ভবনই গড়ে ৩০তলা সমান উচু।ভবনগুলো যে শুধু উচু তাই নয়, এগুলো যেমন উচু তেমনি দৃষ্টি নন্দন। সারা শহরে নির্মাণ কাজ চললেও কোথাও এতটুকু ময়লা পড়ে থাকতে দেখলাম না। রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখার দৃশ্যও চোখে পড়ল না কোথাও। অথচ ঢাকায় কি অবস্থা!

কুয়ালালামপুর শহর বেড়ে উঠছে পরিকল্পনা মত। ঢাকার মত এলোমেলো ভাবে নয়। গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে নতুন কুয়ালালামপুর তৈরীর যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, সে মতই বেড়ে উঠছে এ শহরটি। প্রতি দু-তিনটি ভবনের পরপরই একটি করে নির্মাধীন ভবন চোখে পড়ে। দ্রুত গতিতে বেড়ে উঠছে কুয়ালালামপুর। অধিকাংশ নির্মাণাধীন ভবনেই বাংলাদেশি শ্রমিক ভাইদের কাজ করতে দেখলাম।

শহরে চলাচলের জন্য আছে বাস, ট্রেন আর মনোরেল। ট্রেন বলতে এল আর টি। এটি শহর এবং শহরের বাইরে চলাচল করে। মনোরেল চলে কে এল সেন্ট্রাল থেকে শহরের পূর্ব দিকের শেষ মাথা পর্যন্ত। এখানকার মনোরেলের ট্রেন গুলোতে মাত্র দু থেকে তিনটি বগি আছে। লন্ডনের টিউব ট্রেনের মত অত লম্বা নয়। মনোরেল চলে কখনো আকাশ দিয়ে,কখনো মাটির নিচ দিয়ে আবার কখনো মাটির উপর দিয়ে। বাসের চেয়ে মনোরেলের ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও এটা অত্যন্ত দ্রুত গতির বলে সবাই এটাই ব্যবহার করে। প্রচন্ড ভিড় হয় মনোরেলে। আমাদের দেশের ৯ নম্বর বাসের মত।

কুয়ালালামপুর শহরের রাস্তাঘাট আমাদের ঢাকার মতই চওড়া। তবে ঢাকার মত গাড়ির অত প্রচন্ড চাপ নেই এখানে। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা খুবই উন্নত। রাস্তায় যদিও মাঝেমাঝে জ্যাম লাগে, তবে তা কখনই দু-এক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। আর জ্যাম লাগে রাস্তায় কেবল লাল বাতি জ্বললে। যখন যেদিকে লাল বাতি জ্বলে তখন সেদিকে কিছুটা জ্যামের সৃষ্টি হয়। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা প্রচুর। এখানে সবাই নিজের গাড়ি ব্যবহার করে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিবহণ স্থানীয় লোক খুব কমই ব্যবহার করে। মূলত, পর্যটকরাই এসবের যাত্রী।

খুবই ব্যয় বহুল শহর কুয়ালালামপুর। সব কিছুর দাম এখানে বেশি। তবে অনেক আইটেম পাওয়া যায় এখানে। শহরে শপিংমল আছে অসংখ্য। শহরের আশেপাশেও শপিওংমলের অভাব নাই। দাম আকাশ ছোয়া মনে হয় আমার কাছে। তবে শপিওংমল গুলো দেখার মত। এত বিশাল বিশাল সব শপিওংমল, যে ঘুরে দেখতে পা ব্যাথা হয়ে যায়।

এসব শপিংমলে বিনোদনেরও যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে। সিনেমা থেকে শুরু করে সব ধরনের ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা আছে। চাইলে আইস স্কি ও করতে পারবেন। আমি আইস স্কি করতে গিয়ে পা ভাংতে বসেছিলাম।

ঘুরতে গিয়েছিলাম মালেশিয়ার বৃহত্তম আইটি মার্কেট লো ইয়াট – এ। সেখান থেকে আমি আমার ল্যাপটপের জন্য একটা পোর্টাবল স্পীকার আর একটা কি-বোর্ড প্রোটেক্টর কিনেছি। মার্কেটটি কুয়ালালামপুরের ইম্বি এলাকায় অবস্থিত।

শহর জুরে র্য়ে ছে অসংখ্য খাবারের দোকান। এখানকার খাবার খুবই সুস্বাদু লেগেছে আমার কাছে। স্থানীয় খাবার ছাড়াও আন্তর্জাতিক খাবারও পাওয়া যায় সবখানেই। খাবারের দাম আমাদের দেশের রেস্টুরেন্ট গুলোর মতই। পিৎজা হাট, কে এফ সি, ম্যাকডোনাল্ডস সহ সব ব্রান্ডের খাবারই পাওয়া যায় হাতের কাছেই।

কুয়ালালামপুর শহরের মূল যে আকর্ষণ, সেই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারেও গিয়েছিলাম বেশ কয়েকদিন। টুইন টাওয়ারের বর্ণনা সম্পুর্ণ আলাদাভাবে পরের পোস্টে দেব। কেননা এখন এই বর্ণনা দিলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। তাতে পড়তে গিয়ে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন। তাই পরের পোস্টে দেব। আশাকরি আপনাদের ভাল লাগবে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×