somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা , চতুর্থ পর্ব ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অসমাপিকা , তৃতীয় পর্ব Click This Link

মোবাইলে চার্জ আছে কিনা দেখে রাখে লীনা । সন্ধ্যার পর হতে বার বার মোবাইলের দিকে চোখ চলে যেতে থাকে । কেন ফোন আসছে না , মিজান কথা বলতে পেরেছে কিনা দীপুর সাথে নানান কথা ঘুরপাক খায় মাথায় ।

রাতের খাবার খেতে বসে বার বার আনমনা হয়ে পড়ে সে । মা খেয়াল করে বলে , ' অনিয়ম করো না লীনা , খাওয়া - ঘুম এ সব শরীরের জন্য '।
হু হা করে টেবিল ছাড়ে লীনা । খাওয়ার টেবিল থেকে আচার আর চাটনী ফ্রীজে ঢুকিয়ে রাখতে গিয়ে শোনে তার মোবাইলে রিং হচ্ছে । ফোনটা ধরতে শেষ হয়ে যায় রিং টোন , জ্বলজ্বল করে আজ দুপুরে সেইভ করা নাম 'দীপু' । কোনদিন যা হয়নি আজ টের পায় তার অস্থির লাগছে ভেতরে ভেতরে , দীপুর ফোনের জন্য অপেক্ষা ছিল বিকেল থেকে । অথচ এখন দীপুর ফোন পেয়ে মনে হচ্ছে কি বলবে , কি ভাবে কথা বলবে , কি করে শুরু করবে । ফোনটা অফ করে দিল । বাসায় এখন পরিবেশও নেই কথা বলবার ।
এক একবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ছে , আবার কেমন সংকোচ । সব কিছু তার নিয়ন্ত্রের বাইরে চলে যাচ্ছে , সে নিজেও কি নিজের নিয়ন্ত্রনে আছে ?

ঘুমুতে গেল অন্যরাতের চেয়ে খানিক আগে । বিছানায় শুয়ে এপাশ -ওপাশ করতে করতে ঘুম এলো অনেক রাতে । ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে যার কথা প্রথম মনে পড়ল সে হল দীপু । না জানি ফোন বন্ধ দেখে কেমন রিয়েক্ট করল ! আজ একটা বিশেষ দিন লীনার জীবনে । ও কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চায় না । যেভাবে ভাবতে চাইছে পারছে না , কোথায় যেন তাল কেটে যায় বার বার । দীপুকে ও কষ্ট দিতে পারবে না আজ এতটুকুই মনে পড়ছে তার , তারপর সব কিছু অস্বচ্ছ ।

সব দিন যেমন করে ইউনিভার্সিটিতে যায় বাড়ীর লোকে হাসে , বন্ধুরা অবাক হয় তার পোষাকের উদাসীনতায় । ওর মনেই হয় না কখনো সেজে সুন্দর করে যাবার কথা ক্লাসে । পরিপাটি ভাবে গেলেই হয় ! আজ ইচ্ছে করছে সাজতে । অনেকক্ষন আয়নার সামনে বসে থেকে লজ্জা পেয়ে বসে তাকে । কাজল দিয়ে সময় নিয়ে চোখকে সাজায় , হালকা লিপস্টিক বরাবরের মত । টের পায় সব কিছুতেই তার তালগোল পাকিয়ে যাওয়া ।

নয়টার ক্লাস শেষ করে দশটায় থাকবার কথা ক্যান্টিনে দীপুর । লীনা নিজেই আর নয়টার ক্লাসে ঢোকে না । কি যেন একটা লুকোবার ছল , কেন তার মনে হচ্ছে সবাই সব জানে আশে পাশের । সবাই কি জানে আজকে লীনা দীপুর মন খারাপ উড়িয়ে দেবে । লীনা নিজে কিছু কি জানে সে কেন এসেছে , কতটুকু প্রস্তুতি তার আছে !

নয়টার কিছুক্ষন পরে মোবাইলে একটা এসএমএস , ' তুমি কোথায় ? দশটায় থাকতে বলেছিলে '? দীপু পাঠিয়েছে ।

লীনা লিখে দেয় , ' ক্যান্টিনে , নয়টার ক্লাসে আর যাইনি ' ।

দশটা বাজতে এখনো ৪৫ মিনিট , অনেক সময় বাকী । ব্যাগটা চেয়ারের পেছনে ঝুলিয়ে রাখে । ইচ্ছে করে কোনায় বসেছে নিরিবিলিতে । জানালা দিয়ে বাইরে দেখে । ঠিক জানালার পরে পানি ফেলে বোধ হয় । ঘাস , লতা পাতা সব সজীব চকচকে । একটা কুমড়ো গাছ , অনেক পাতার সবুজ বাহার , দুটো সবুজ প্রজাপতি উড়ছে । বসে পড়লে আর আলাদা করা যাচ্ছে না কুমড়ো লতা থেকে পাতা থেকে ।

কার হেটে আসবার শব্দ শোনা যাচ্ছে , ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দীপু আসছে । তার মানে সেও ক্লাসে যায় নি । এত প্রস্তুতি যার জন্য সে এসে পড়ল বলে পালাতে চাইছে এখন ; সেটা আর হল কই ?
উলটো দিকের চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে গিয়ে বসলো না । বলল , ' বসতে পারি '?

কি আশ্চর্য ! এই ছেলেটার সাথে গত চার বছর এক সাথে পড়ছে , অনেক ধরনের কথা কানে এসেছে এমন লাগেনি আগে লীনার । আজকে কি হল ! বসতে চেয়ে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন দীপু তারপর অনুমতির অপেক্ষা না করে বসল । রাতের ফোনের কথা তুলল না কিছু । বলল , ' নাস্তা খাওয়া হয় নি আমার , তোমার জন্যেও বলি ?'
শুধু মাথা নেড়ে না করে দিল লীনা । বাইরে প্রজাপতি দুটো কোথায় গেল , এত সবুজ সবটুকু জায়গায় , মনোযোগ দিয়ে প্রজাপতি খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল ।
দীপু নাস্তার অর্ডার দিয়ে একটা লম্বা মত প‌্যাকেট বের করে এগিয়ে দিল । বলল ' একটা কলম তোমার জন্য ।'
প্রথম কথা বলল বা বলতে পারল লীনা । বলল , ' থ্যাঙ্কস '।
হাতে নিয়ে খুলল প‌্যাকেট লীনা , মেরুন আর সোনালী রঙের সুন্দর একটা কলম । দীপু নিজের নোট খাতাটা এগিয়ে দিল লিখে দেখবার জন্য ।
সে নোট খাতায় দাগ টেনে দেখল ঝকঝকে লেখা ।
কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকল লীনা , তারপর বলল ' দীপু আমি স্যরি । ডলির ব্যাপারে তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা উচিৎ হয় নি আমার । আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম ।'
দীপু , ' শুধু অন্যের জন্য তোমার মায়া হয় , নিজের জন্য হয় না ? নিজেকে কখনো ভালবাসতে শিখবে না তুমি ? তোমাকে সবাই অনেক ভাল বলে আমার রাগ হয় । কেন মানুষ ভাল বলে জানি আমি , কারন তুমি কেবল অন্যের জন্য ভাব । নিজের কথা ভাববে না ? আমার কথা ভাববে না ? আমার জন্য তোমার ফিলিংস গোপন করতে গিয়ে তুমি ধরা পড়ে যাও আমার কাছে , সেটা নিজেকে দিয়ে বুঝি আমি ' ।

কথায় পেয়ে বসেছে দীপুকে আজ । লীনার কানে কথাগুলো ঢুকছে কিনা বুঝতে পারে না দীপু । দেখে লীনা তার নোট খাতার মধ্যে একটা পাতায় নানান ধরনের আঁক কষছে বেখেয়ালে , আঁকছে কাটছে আবার আঁকছে । এক জায়গায় নিজের পুরো নাম লিখলো গোটা গোটা অক্ষরে , আবার কাটল । কথা বলতে বলতে দীপু লক্ষ্য করে লীনার নিজেকে সংযত করবার বিফল চেষ্টা ।

বলে , ' লীনা তোমাকে ভাল দেখাচ্ছে আজ '।
লীনা বলে , ' আর কখনো বলবো না তোমাকে আঘাত দেবার মত কোন কথা , বললেও তুমি শুধরে নিও । তুমি কষ্ট পাও সে আমি চাই না , কোনদিনও না । ' আরো কি কি বলবে ভেবেছিল গুলিয়ে গেছে সব দীপুর সামনে বসে , দীপুর কথায় ।

দীপু বলে , ' আজ বিকেলে আসবে সেন্ট্রালে ? '
লীনা বাইরে তাকায় জবাব খোঁজে । সবুজ আর সবুজ চোখে তার । সবুজ সংকেতের মত । দুটো সবুজ প্রজাপতি আবার চোখে পড়ে উড়ছে এলোমেলো । তাকিয়ে ভাবে ও কি হ্যা করে দেবে দীপুকে ! হঠাৎ একটা হলুদ প্রজাপতি , সবুজ দুটোর চেয়ে বড় আর উজ্জল রঙের জানালার প্রায় কাছে চলে আসে তার । লীনা কি জানত হলুদ সংকেত হয়ে এমন সময়ে এটার আবির্ভাব হবে এ সময়ে !
দীপুর দিকে তাকিয়ে বলে , ' না দীপু আজ আসবো না বিকেলে , আসা হবে না ।'
দীপু নাস্তা শেষ করে , লীনা চা খেতে খেতে দেখে দীপুকে আজ কেমন বাচ্চা ছেলের মত লাগছে , চোখে মুখে খুশী যেন উপচে পড়ছে ।

দীপুর চা খাওয়া শেষ হতে উঠতে চায় লীনা । ওর কেবলই মনে হয় চারিপাশে কৌতুহলী চোখ জোড়ায় জোড়ায় ওদের দেখছে ।
বলে , ' উঠতে হবে দীপু , চল '।
কলম ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে গিয়ে দীপুর নোটখাতা ঢুকিয়ে নেয় নিজেরটা ভেবে । দীপু তার নোট খাতার কথা ইংগিত করতে লজ্জা পেয়ে যায় লীনা । তাড়াতাড়ি বের করে দিতে গিয়ে কলমটাও দিয়ে দিতে উদ্যৎ হয় । দীপু বলে , ' শোন মেয়ে তুমি জানই না কি কাছে রাখতে হয় আর কি দিতে হয় । তোমার নিজের জিনিস চিনে নিতে ভুল করো না '।
তারপর বলে , ' এই নোট খাতাটা এখন থেকে আমার কাছে অনেক দামী , এটাতে তোমার লেখা প্রথম চিঠি আছে দুর্বোধ্য ভাষায় । সে ভাষা আমি ছাড়া পৃথিবীর কারো দ্বারা উদ্ধার করা সম্ভব না '।

আর দাড়ায় না লীনা , জোরে জোরে পা ফেলে বেরিয়ে আসে ক্যান্টিন থেকে । আরো জোরে পা ফেলে সে পালাতে চায় , পালাতে চায় একজোড়া সকাতর মিনতিভরা চোখের মায়া থেকে । নিজের কাছ থেকেও পালাবার উপায় খোঁজে মরিয়া হয়ে ।

চলবে ......
পরের অধ্যায় Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৩
১৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×