somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: তবলা।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জন্মান্ধ। তাই পৃথিবীর মেঘ ভরা আকাশ, পূর্ণিমার চাঁদ, বৃষ্টির জল, নৌকা, জোনাকি, ধান ক্ষেত, তাল গাছ, চড়ই পাখি আরো অনেক কিছু দেখা হয়নি - সুকান্তের। তাই বলে সুকান্তের তেমন একটা আফসোস নেই। মা আর তার ছোট মিষ্টি বোনের চোখ দিয়েই সে দেখে নেয় - এই বিশ্বকে। তাদের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে শুনে যায়, যেন সে নিজে দেখতে পায়। বিকেলে ঘরের কোণে ছোট জানলার শিক ধরে; সে শুনতে পায়, তার বন্ধুরা হৈ হৈ করে, স্কুল থেকে ফিরে আসছে। অবশ্য খেলার সময় তার বন্ধু আশরাফ, সোহেল, রাজেশ, মাসুদ, মামুন এসে তাকে নিয়ে যায় এবং সে তখন তারা স্কুলে কি কি শিখল জিজ্ঞেস করে। সবাই তাকে অনেক পছন্দ করে। অন্ধ বলে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করে না। তারা খেলে। আর সে মাঠের পাশে ফেলে রাখা ভাঙ্গা রিকশার উপর বসে তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতো। মাঝে মাঝে যেন চোখ দু'টো কিছু দেখতে চায়!

সুকান্ত ভালো তবলা বাজায়। তার পরের বাসায় থাকেন যতীন কাকু। যতীন কাকুর একটি মেয়ে। বয়স তিন বছর। ছেলে নেই। বিয়ের অনেক বছর পরে একমাত্র মেয়েটি জন্মেছে। মনে হয় আর ছেলেমেয়ে হবে না। তাই যতীন কাকু সুকান্তকে ছেলের মত আদর করত। ছোটবেলা থেকে। সুকান্তও সময় পেলে মাকে বলে চলে আসত কাকুর কাছে। উনি ছোট একটা গানের দলে তবলা বাজাতো। এই এলাকার যে কোন বিয়ে, জন্মদিন, উৎসব হোক উনি আসতেন। তবলা বাজাতেন। প্রচার ছিল বেশ।

তবলাটা শিখেছে এখান থেকে। যখনই তবলার আওয়াজ হতো, ছুটে চলে যেত। কাকুর কোলে বসে তবলায় টুং-টাং করতো, তাই দেখে কাকু তাকে আস্তে আস্তে শিখিয়েছে তবলায় কি করে তাল দিতে হয়। যেদিন থেকে তবলা পেল সেদিন থেকে সুকান্তের জীবনে কিছুটা তাল ফিরে এসেছে, ছন্দ পেয়েছে এবং সে এটা নিয়েই থাকতে চায়। হাতের আঙ্গুলগুলো যেন তবলায় ঝড় তুলত। ভুলে যেত তার না দেখার কষ্ট। এই তবলার বোলের মাঝে সে দেখতে পেত - তার পৃথিবী।

বেশ কিছুদিন ধরে যতীন কাকুর শরীরটা খারাপ। তাই আজ বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে সুকান্ত দেখতে এসেছে। সুকান্তকে দেখে বিছনায় শুয়ে কাকু জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে? এতদিন আসিছ নি কেন?’
‘না, মানে... তবলার শব্দ শুনতে পাইনি তো? তাই ভাবলাম তুমি কোন অনুষ্ঠানে তবলা বাজাতে গেছো’ - মাথা চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দেয় সুকান্ত।
বিছানার এক পাশে চুপকরে বসে পড়ে সুকান্ত। বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। কাকী এসে আমাদের একবার দেখে চলে গেল। কাকুর টাইফয়েড হয়েছে। তাই ঘর থেকে একদম বের হতে পারছে না।
`তবলা বাজাতে পারবি না?' - কাকু আঁধ-ভাঙ্গা গলায় জানতে চাচ্ছে।
সুকান্ত কিছু বলার আগে, বন্ধুরা উৎল্লাসে লাফিয়ে বলে উঠে, `হ্যা, কাকু পারবে। সুকান্ত তো আমাদের স্কুলের ক্রিয়া প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠানে প্রতি বছর তবলা বাজায়।'
আমরা এসে তাকে নিয়ে যাই। মেয়েরা গান গায় আর আমাদের সুকান্ত সে কি তবলা বাজায়!!
কাকু, তুমি জানো না তো? আমাদের হেড মাস্টার বলেছে, সুকান্ত দারুন বাজায়।
যতীন কাকুর বুকটা যেন ভরে গেল! সুকান্তও বিছনার পাশে বসে লজ্জা পাচ্ছিল।
কাকু যেন, একটা দীর্ঘ প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বেশ, বেশ। ভালো হলো।
‘শোন, একটু পরে পার্টির লোক আসবে। তোরা সুকান্তকে নিয়ে চলে যাবি। ওখানে একটা গানের অনুষ্ঠান হবে। আমার বদলে আজ সুকান্ত তবলা বাজাবে।’
শুনে, বন্ধুরা হাত তালি দিয়ে হৈ হৈ করে উঠল। সুকান্তর কেন জানি ভয় করছিল?
যে কাকু তাকে তবলা শিখিয়েছে, তাঁর জায়গায় বাজাতে হবে?

অনুষ্ঠান ভালোই হয়েছে। শেষ হতে হতে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সবাই সুকান্তর বেশ প্রশংসা করল। অনুষ্ঠান ভালো হওয়ায় বন্ধুদের নিয়ে সুকান্ত হাসি-খুশিতে বাড়ি ফিরছিল। একটু মজাও করছিল। মাঝে মাঝে সুকান্ত কাউকে না ধরেই রাস্তায় হাঁটছিল। ব্যাপারটা বন্ধুরা বুঝতে পারছিল না। কারণ রাস্তাটা সুকান্তর পরিচিত রাস্তা নয়।

রাস্তার শেষ প্রান্তে বসে, একটি লোক রড কাঁটছিল। তারা গান করতে করতে কখন যে ঐ লোকটির কাছে চলে এসেছে, খেয়ালই করতে পারে নি। সুকান্তর পা, রাস্তার পাশে থাকা বালুতে বাঁধা পেয়ে; পড়ে যায় রড কাঁটার মেশিনটার ওপরে। হাতদু‘টো লম্বা হয়ে মেশিনটাকে ম্পর্শ করে।

মা, মা .. ..গো, আমার তবলা - বলে চিৎকার করে উঠে সুকান্ত।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×