somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিএনজির জানালা গলিয়ে

২১ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ চঞ্চল গতিতে সিএনজিটা ছুটে যাচ্ছে। দেখে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের কথা মনে হলো আমার। যেন সিএনজিটা কোন রেসের মধ্যবর্তীকালীন সময়ে আছে। সামনের সিএনজি স্টেশনে গিয়ে সিএনজি নিতে হবে বলে রেসে একটু এগিয়ে থাকতে চাইছে। আমি সিএনজিটার ঠিক পেছনে, বাইকে। যথারীতি জ্যামে পড়েছি। তাই এদিক সেদিক তাকিয়ে মানুষ দেখে সময় কাটানোর চেষ্টা করছি।
মানুষের মুখ আমাকে বরাবরই আকর্ষন করে। এত কোটি কোটি মানুষ চারদিকে, এই পৃথিবীতে। সবারই দুটি করে চোখ, কান, একটি করে নাক, মুখ আছে কিন্তু সবাই দেখতে কী রকম অন্যরকম! শার্লক হোমস না হয়েও মুখ দেখেই মানুষের কত কিছু বলে দেওয়া যায়! সেই মুখগুলো আমাকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে। আমার আগের অফিসে আমি মন খারাপ থাকলে নীচে নেমে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতাম। কত মানুষ আসছে যাচ্ছে। কেউ হন হন করে, কেউ হালকা চালে। কেউবা দাড়িয়ে ফোন কানে। কারও জন্যে কেউ বা অপেক্ষা করছে। এদের মধ্যে কারও বা একটু চমৎকার হাসি দেখে মন ভালো হয়ে যেত। আমি অফিসে ওঠার লিফটের জন্য বাটন চাপতাম।

আমি দাড়িয়ে আছি সিএনজিটার পেছনে। সিএনজির পেছনের অংশ সাধারণত অর্ধস্বচ্ছ এক ধরনের পলিথিন দিয়ে আটকানো থাকে। কিন্তু এই সিএনজিটার পলিথিনটা মনে হয় ছিড়ে গেছে। তাই চালক খুব যত্নের সঙ্গে পুরোটাই ছিড়ে ফেলেছে। ধন্যবাদ তাকে। তার ফাঁক গলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা ফর্সা সুন্দর হাত। সিটের উপরের অংশে হালকা চালে রাখা। একদম ধবধবে ফর্সা না। সোনালী। কিন্তু জামার সঙ্গে কন্ট্রাস্টটা করেছে মারাত্মক। টিয়া এবং সবুজের মাঝামাঝি রংয়ের ফ্লোরাল প্রিন্ট, সঙ্গে লাল বংয়ের চিকন বর্ডার (হলিক্রস স্কুলের মেয়েদের জামায় যেমন লালচে বর্ডার থাকে তারচেয়েও চিকন) । অদ্ভুত সুন্দর লাগছে হাতটা। আমি জাস্ট প্রেমে পড়ে গেলাম ফ্লোরাল প্রিন্টটার, চিকন লালচে বর্ডারটার তার তার সঙ্গে থাকা হাতটার। আহা এই হাতের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার শুধু মনে হলো এই অসাধারণ হাতটার জন্য আমি আমার সব ছেড়ে ছুড়ে দিতে পারি। শুধু হাতটা। হাতের সঙ্গে থাকা মানুষ আমার প্রয়োজন নেই। এই হাতটা আমি যখন মন চাইবে দেখব, একটু ছুয়ে দেব। অথবা কেউ যদি আমার বর্তমান এই অবস্থাটা ফ্রিজ করে রাখার প্রস্তাব দেয়, সিএনজিটাও আর আগাবে না, আমিও সিএনজিটা থেকে সামনে যেতে পারব না, এভাবেই অনন্তকাল কাটবে, আমি থেকে যেতাম। হাতটা একটু নড়ে উঠল। ওহে মেয়ে তুমি পেছনে তাকিও না। আমি তোমাকে দেখতে চাই না। তোমার হাতটাই শুধু আমাকে মন ভরে দেখতে দাও। কিন্তু মেয়েদের সেন্স! এমনিতে কেউ সিএনজির ভেতর বসে এত কষ্ট করে পেছনের ফাঁকা দিয়ে তাকায় না। কিন্তু উনি তাকালেন। তাকানোর জন্য উনাকে কসরত করতে হলো। হাতটা ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। কেন তাকালেন??? কেন? কেন? আমি উনাকে দেখতে চাইনি। আমি শুধু উনার হাতটা দেখতে চাইছিলাম। উনি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালেন।
আমার যে কি হলো। হেলমেটটা খুললাম। মাথাটা একটু সামনে এগিয়ে বললাম, আপনার হাতটা খুব সুন্দর। উনি খুব অবাক হলেন। আবার বলতে হলো আমাকে কথাটা। উনি বুঝতে পেরে সুন্দর একটা হাসি দিলেন। আমি বললাম আপনি হাতটা যেভাবে রেখেছিলেন আগে সেভাবেই রাখবেন?
উনি আমার অনুরোধটা শুনলেন। হাতটা ঠিক আগের মতোই রাখলেন। আমার যাওয়ার কথা ছিল শাহীনবাগ। মেয়েটাকে যখন সিএনজি নামিয়ে দিলো তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে।

*টীকা: সেদিনই আমি প্রথম আবিষ্কার করলাম রাস্তা ফাঁকা থাকলে সিএনজি সাধারণত ৬০ কিলোমিটার বেগে চলে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×