somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা খুন শব যাবে শ্মশানে। কপালের সিঁদুর মুছে যাবে।

২১ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিহত গৌতম ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহাম্মদ হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা
রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা খুন
শব যাবে শ্মশানে। কপালের সিঁদুর মুছে যাবে।

শব যাবে শ্মশানে। কপালের সিঁদুর মুছে যাবে। ভাঙবে সফেদ শাঁখা। নিহত পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম রায়ের ছোট্ট এই মেয়েটি কি এত সব বোঝে? তবু মায়ের হাতে পরা শাঁখায় তার ছোট্ট হাতটি তাৎক্ষণিক শোকের পরের পরিস্থিতিকেই তো সামনে তুলে ধরে

ঢাকা মহানগর পুলিশের বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম কুমার রায় (৪২) খুন হয়েছেন। গত সোমবার মধ্যরাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ধোলাইখাল এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক জানান, কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান জানান, এসআই গৌতম পুরান ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহাম্মদ হোসেন হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ ডাকাত শহীদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে।
কাউন্সিলর আহাম্মদ হত্যা মামলায় পরে পুলিশ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। নাজিমের দেওয়া তথ্য যাচাই করতে গোয়েন্দা পুলিশ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শাহ আলমকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এসআই খুনের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গৌতম রায় কাজ শেষে বংশাল থানা থেকে তাঁর বন্ধুর গাড়িতে করে পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার র্যাংকিন স্ট্রিটের বাসায় ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধু আজম। গাড়িটি ৫২/৪ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পৌঁছালে গৌতম আরেক বন্ধু শামীমের দোকানের সামনে থামেন। এরপর তাঁরা তিন বন্ধু মিলে হেঁটে অন্তত ৩০ গজ সামনে এগিয়ে যান। এ সময় সরদার রোডের গলি থেকে তিন যুবক বের হলে মহিউদ্দিন মার্কেটের সামনে গৌতম তাদের থামার সংকেত দিয়ে এক যুবকের শরীরে তল্লাশি চালান। এরপর অপরজনের শরীরে তল্লাশি চালাতে গেলে দুজন রিভলবার দিয়ে গৌতমকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। গৌতমের পেছনে থাকা বন্ধু মোটর পার্টস ও হোটেল ব্যবসায়ী শামীমের ডান হাতে গুলি লাগে। অন্য বন্ধু আজম আহত হননি। রক্তাক্ত অবস্থায় উপ-পরিদর্শক গৌতম রায় ও শামীমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে গৌতমকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আজমকে সূত্রাপুর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শামীম জানান, বংশাল থানার এসআই (সেকেন্ড অফিসার) গৌতম রায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। লালমোহন স্ট্রিটে নিয়ামুল মোটর নামে তাঁর মোটর পার্টসের দোকান আছে। সোমবার রাত পৌনে দুইটার দিকে গৌতম তাঁর বন্ধু আজমকে ফোন করে বংশাল থানা থেকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে আসতে বলেন। ছাই রঙের জিপ নিয়ে আজম থানায় যান। ১৫-২০ মিনিট পর এসআই গৌতম ওই গাড়ি চালিয়ে শামীমের দোকানের সামনে আসেন। দোকানের পাশেই শামীমের বাসা।
শামীম জানান, গৌতম তাঁকে বলেন, ‘ভাই, আসেন, একটু হাঁটুম।’ এরপর গৌতম রায়ের সঙ্গে তিনিও হাঁটতে থাকেন। এ সময় পাশের সরদার গলি দিয়ে তিন যুবক বের হয়। গৌতম তাদের তল্লাশি করতে গেলে এ খুনের ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীদের দুটি গুলি গৌতমের পিঠে ও কোমরের পেছনে লাগে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া আরেকটি গুলি শামীমের ডান হাতে লাগে। এরপর গৌতমকে টহল পুলিশের ভ্যানে ও তাঁকে তাঁর জিপে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। খুনিদের বয়স ১৮-২০ বছর হবে। তাদের পরনে কালো পোশাক ছিল।
বংশাল থানার ওসি মান্নান জানান, বংশাল থানায় যোগ দেওয়ার আগে গৌতম কেরানীগঞ্জ, সূত্রাপুর ও চকবাজারে অপারেশন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাত তিনটার পর গৌতমের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাঁর স্ত্রী ডলি রানী রায়, দুই সন্তান গৌরব রায় (১৫) ও অদিতি রায়সহ (৮) স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে হাসপাতালে যান। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ চিহ্ন শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে। সকালে মহানগর পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তা সহকর্মীর লাশ একনজর দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন। সহকর্মীকে হারিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য কাঁদতে থাকেন।
স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার ও মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক গৌতমের লাশ দেখতে হাসপাতালে যান। স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁর খুনিদের খুঁজে বের করা হবে।
নিহত গৌতমের স্ত্রী ডলি রানী হাসপাতালে অস্ফুট কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কেমনে বাঁচব, তোমরা আমাকেও মেরে ফেলো।’ অন্যরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার পর ময়নাতদন্ত শেষে গৌতমের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রাখা হয়। ময়নাতদন্তে তাঁর শরীরে একটি গুলি পাওয়া গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, র‌্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার লাশ দেখতে যান। ১০ মিনিট পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক হাসপাতালে যান। তাঁরা তাঁর শোকার্ত স্ত্রীকে সমবেদনা ও সান্ত্বনা দেন। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামিরাও ধরা পড়বে। এর আগের প্রতিটি ঘটনায় আসামি ধরা পড়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
হাসপাতালে পুলিশ কমিশনার শহীদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গৌতমের সঙ্গেও অস্ত্র ছিল। কেন তিনি অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেননি, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
গৌতমের ভাই তিলক রায় জানান, ১৯৯১ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ভোরের কাগজ পত্রিকায় গৌরীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। বেলা একটার পর ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগ থেকে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্রাপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, এসআই জাহাঙ্গীর কবির খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে কয়েকজন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। থানার ছয়টি দলের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রহস্য উদ্ঘাটনে অভিযানে নেমেছে। পুলিশ কমিশনার সরাসরি মামলাটি তদারক করছেন।
গৌতমের বড় ছেলে গৌরব রায় গাজীপুরের প্রি-মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। অদিতি লক্ষ্মীবাজারের একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
২০০০ সালের ২৮ অক্টোবর মতিঝিলে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে সার্জেন্ট পারভেজ আহাদ খুন হন। ২০০২ সালে আগারগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসীরা পুুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কনকউজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করে। ২০০৩ সালে মালিবাগের একটি আবাসিক হোটেলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দুই কর্মকর্তা খুন হন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের আসাদগেটে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) নজরুল ইসলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×