somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্যপ্রাণী নিধনে যাবজ্জীবন সাজার আইন হচ্ছে / কপি-পেস্ট

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

বণ্যপ্রাণী নিধনের জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে তিন যুগ পর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, 'বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন, ২০১০' এর একটি খসড়া জমা দিয়েছে বন অধিদপ্তর। তার পর্যালোচনা চলছে।

১৯৭৪ সালে প্রণীত হয় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন। এ আইনে সর্বনিম্ন পাঁচশ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ন্যূনতম ছয় মাস থেকে দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সাতটি অধ্যায়, ২৪টি অনুচ্ছেদ ও ৪৯টি সংজ্ঞাসহ নানা বিষয় সংযোজন-পরিমার্জনের কথা বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অপরূপ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার, ধরা ও হত্যা নিষিদ্ধ হলেও প্রস্তাবিত আইনে কৃষি ফসলের জন্য হুমকি এমন নয়টি প্রাণীকে (পাতিকাক, দাঁড়কাক, ৫ প্রজাতির ইঁদুর, ২ প্রজাতির চিকা) 'ভারমিন' আখ্যা দিয়ে প্রস্তাবিত আইনের তাদের মারার সুযোগ রাখা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৪ সালের আইনের আলোকে ১৯৮০ সাল থেকে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বংশবৃদ্ধি, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে রক্ষিত বন তথা জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও গেইম রিজার্ভ ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়।

এ যাবৎ ঘোষিত ১৯টি রক্ষিত বনের আওতায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৩ হেক্টর বনভূমিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

১৯৯৮ সালের জুন মাসে এক নির্বাহী আদেশে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য যে কোনো ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী শিকার, ধরা বা হত্যার জন্য বড় ধরনের কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক (প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) তপন কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককে বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অবহেলা ও অজ্ঞতার কারণে এবং কম পরিশ্রমে বেশি উপার্জনের নেশায় এক শ্রেণীর মানুষ যথেচ্ছভাবে বন্যপ্রাণী শিকারে মেতেছে। যার কারণে অনেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অধিকাংশ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

ইতিমধ্যে গণ্ডার, বুনো মহিষ, বরসিঙ্গা, নীলগাই, বনছাগলসহ অনেক বন্যপ্রাণী হারিয়ে গেছে এ দেশ থেকে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন এর রেড ডাটা বুক ২০০০ -এ ৮ প্রজাতির উভচর, ৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪১ প্রজাতির পাখি ও ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ অনেক বন্যপ্রাণীকে বিপদাপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতের পাশাপাশি তা আরো যুগোপযোগী করতে সরকারকে বিভিন্ন সময় তাগিদ দিয়েছে পরিবেশ ও বণ্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ও বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও প্রটোকলের সঙ্গে বিদ্যমান আইনটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিদ্যমান আইনে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তি খুবই কম।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কনভেনশন অন ইন্টারন্যশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জার্ড স্পেসিস অব ওয়াইল্ড ফওনা এ্যাণ্ড ফ্লোরা (সিআটিইএস), কনজারভেশন অন মাইগ্রেটরি স্পেসিস অব ওয়াইল্ড এনিম্যালস (সিএমএস) এবং রামসার কনভেনশন স্বাক্ষর করেছে। এসব আন্তর্জাতিক বিধিতে অনেক উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী ধরা, মারা, আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তপন কুমার বলেন, "আন্তর্জাতিক বিধানের সঙ্গে দেশের বিদ্যমান আইনটি যুগোপযোগী ও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সিআইটিএস সচিবালয় থেকেও আইনটিকে সংশোধন ও যুগোপযোগী করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়।"

"আইন সংশোধন না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেতে বঞ্চিত হতে পারে বাংলাদেশ", বলেন তিনি।

প্রস্তাবিত আইনটির বিভিন্ন দিক দেখে অধ্যাপক আনোয়ারুল বলেন, "তিনযুগ পরে হলেও পরিপূর্ণ একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন পাবো বলে আশা করছি। সফলতা পেতে সরকারের আন্তরিক মনোভাবের পাশাপাশি আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। "

প্রস্তাবিত আইনে যা আছে

বিদ্যমান আইনে ৩টি অধ্যায়ে ৪৮টি অনুচ্ছেদ আছে। প্রস্তাবিত আইনে রয়েছে ১০টি অধ্যায়ে ৭২ টি অনুচ্ছেদ।

বন্যপ্রাণীর তালিকায় সামুদ্রিক প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, কড়ি, সাপ, ডলফিন, তিমি, বাঘ, বাদুড়, হাঙরসহ ১৪ প্রজাতির ব্যাঙ, ১০৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৭৮ প্রজাতির পাখি, ৯৬ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন অনুসারে বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা কিংবা ধরা যাবে না। তবে আইনের শর্ত মেনে বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ডের অনুমতিক্রমে তার বিধানও রাখা হয়েছে। ব্যবসা, বাণিজ্য বা জীবিকা হিসেবে বন্যপ্রাণী কেনা-বেচা করা যাবে না এবং বৈধ অনুমোদনপত্র ছাড়া স্মারক হিসেবে বা মাংসের জন্য বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করা যাবে না। তবে কিছু বন্যপ্রাণীর লালন-পালনের সুযোগ রাখা হয়েছে আইনে।

কৃষি ফসলের জন্য ক্ষতিকর বন্যপ্রাণীকে 'ভারমিন' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এসব প্রাণী কৃষি ফসলের জন্য হুমকি হয়ে উঠলে তাদের মারার বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে তা ছিলো না।

শাস্তির বিধান

আইন লঙ্ঘনে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে ২ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত।

বিদ্যমান আইনে জরিমানা সর্বনিম্ন পাঁচশ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা এবং ন্যূনতম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড।

প্রস্তাবিত আইনে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক (চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্টস) পদাধিকার বলে চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ারডেন-এর দায়িত্ব পালন করবেন। বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ডের কার্যপরিধি সুষ্পষ্ট করার পাশাপাশি বিরল ও বিপদাপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও আইনে নুতন ধারা সংযোজিত হয়েছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×