অপরিণত বয়সের আবেগ, অতি আধুনিকতা, অপসংস্কৃতির প্রভাব, পারিবারিক বন্ধনে ফাঁক-ফোকর, এমনকি বখাটেদের উৎপাত এসব কারনে কিশোরী ও তরুনীদের আতœহত্যার প্রবনতা বাড়ছে। আতœহননের এই ধারায় হতাশা ও বিষন্নতাকেই মূল কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা। প্রেমে ব্যর্থতা, অল্প বয়সে বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনের অশান্তি , স্বপ্নভঙ্গ, ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ সঙ্গীর প্রতারণা একটি তরুনীর জীবন ঢেকে দিচ্ছে আতœহননের কাল পর্দায়। গত ৫দিনে রাজধানীতে সংঘটিত চারটি আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকমহল।
গত শুক্রবার সবুজবাগ থানাধীন ১২৫/ এ দণি মাদারটেকের বাসার তৃতীয় তলার ফ্যাটে ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী মানিয়া সুলতানা প্রভা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে। প্রভা ছিল একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। প্রেমিক ফাহাদের সঙ্গে গোপনে বিয়ের কথা জানাজানি হলে উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এ কারনে মানসিক যন্ত্রনা থেকে সে আতœহত্যা করে বলে পুলিশ জানায়। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন ২০০৮ সালে ফাহাদ ও প্রভা গোপনে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পরেই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায় দুই পরিবারের মধ্যে। প্রভা কিংবা ফাহাদ কারো পরিবারই এ বিয়ে মেনে নেয়নি। কিছুদিন এ ব্যাপারে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার পর অবশেষে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্বান্ত হয়। গত বছর ৩০ জুন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে হতাশায় ভুগছিল প্রভা।
প্রভার বাবা হাজী রফিকুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রভা গোপনে বিয়ে করলেও পরে আমরা তা মেনে নিই । কিন্তু ওর স্বামী ফাহাদ যেমন প্রভাকে অবিশ্বাস করত আবার প্রভাও ফাহাদকে সন্দেহ করত। দু’জন দুজনকে সন্দেহ করার পর প্রভার অনুরোধেই দুই পরিবারের অভিবাবকদের সম্মতিতে বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর প্রভার মধ্যে বিষন্নতা দেখা দেয়। ভালো পাত্রের সাথে আর বিয়ে হবে কিনা তা নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে।
প্রভার জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার ২৪ ঘন্টা পার হতে না হতেই গত শনিবার রাতে ৫২/বি হাজারীবাগের বাসায় ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নাবিলা রহমান সুপ্রা (১৮)। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে। মেধাবী ছাত্রী এবং চাপা স্বভাবের সুপ্রার আতœহত্যার কারণ সম্পর্কে কিছুই প্রকাশ করছেনা তার পরিবার। নিহতের পিতার নাম মুজিবুর রহমান। ১ ভাই ১ বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।
এর আগে গত বুধবার রমনার ৩২, সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী অনামিকা বৈরাগী ওরফে পাপড়ি (১৪) গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে। সে ছিল নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবা বলেছেন, পহেলা বৈশাখে ঘুরতে না দেয়ায় অভিমান করে সে আতœহত্যা করে। গত মঙ্গলবার সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকার একটি বাসায় একইভাবে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ফারহা নাজ রুহী। একই বিশ্বদ্যিালয়ের শাখাওয়াত নামে এক শিক্ষাথীর সাথে সে গত কয়েকমাস ধরে লিভ টুগেদার করে আসছিল । শাখাওয়াত পুলিশকে জানিয়েছে , সামান্য ব্যাপারে অভিমান করেই রুহী আতœহনন করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, শাখাওয়াত এর আগেও এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল যা রুহী জানত না। পারস্পরিক অবিশ্বাস থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩ এপ্রিল খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ার বাসায় বিষপানে আতœহত্যা করে দণি বনশ্রী মডেল স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে কুলসুম ইলোরা (১৪)। বখাটে রেজাউলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সে আতœহত্যা করে। এর আগে শ্যামলীতে বখাটেদের অত্যাচারে বিষপানে আতœহত্যা করে পিংকি নামে অরেক ছাত্রী। এসব ঘটনায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে তোলপাড় চলে। গত কয়েক দিনে কিশোরী ও তরুনীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.কামাল উদ্দিন আতœহত্যার প্রবণতা প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের মধ্যে যখন বিষন্নতা ও হতাশা দেখা দেয় তখনই আতœহত্যার চিন্তা মাথায় আসে। বিভিন্ন কারনেই হতাশা দেখা দিতে পারে। বখাটেদের অত্যাচারে তরুনীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আবার প্রেমঘটিত কারনেও হতাশা থেকে আতœহত্যার চিন্তা আসতে পারে। এটা রোধ করা অবশ্য কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনিসহ সকলকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ড. কামাল উদ্দিনের মতে, প্রথমে যেটা দরকার তা হল, মা-বাবার সঙ্গে মেয়ের একটা পরিস্কার সম্পর্ক থাকতে হবে। মেয়ে কোথায়, কখন, কিভাবে, কার সাথে এবং কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছে মা-বাবা যেন তা মেয়ের মুখ থেকেই জানতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষনা ইনষ্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, টিনএজদের মধ্যে আবেগ বেশি থাকে। বুদ্ধি থাকে কম। তিনি বলেন, অবাধ স্বাধীনতা, অবাধ মেলামেশা, মুঠো ফোন এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে ভীনদেশী অপসংস্কৃতি দেখে আমাদের এ বয়সী ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হতে চলেছে। আমাদের দেশে ও পাশ্চাত্যের মত বিয়ে না করেও এক সঙ্গে থাকার রেওয়াজ চালু হয়েছে। তরুন তরুনীদের পছন্দমত অবাধ মেলামেশা ও বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক থাকার কারনে পরিবারের মধ্যে ভাংগন ধরেছে। গ্রামে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আছে বলেই সেখানে এ ধরনের ঘটনা কম। তিনি বলেন, ধমীয় রীতি নীতিতে তরুনীদের আগ্রহ কমে গেছে। কমবয়সী ছেলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। যতটা সম্ভব তাদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। এজন্য অভিবাবক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়াকে ভ’মিকা পালন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, যে বয়সের মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সে বয়সটি একটি ইমোশনাল ষ্টেজ। রোমান্টিসিজম,ফিজিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল কারনে তারা অপোজিশন সেক্্র এর দিকে ঝুকে পড়েছে। যা আমাদের সমাজ এ্যাকসেপ্ট করেনা। ছেলে মেয়েরা সেতুবন্ধন করলেও তাদের মধ্যে রয়েছে আতœবিশ্বাসের অভাব। রয়েছে মূল্যবোধ ও নীতিবোধের অভাব। সেক্্র এডুকেশনের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকাও একটি কারণ। তিনি বলেন, উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের কোন ঘটনায় বাব-মা শেয়ার না করে উল্টো তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। যেমন সন্তানের প্রেমের কথা জানাজানি হলে বাবা –মা মেয়েকে সহজভাবে না বুঝিয়ে তাকে ঘরে আটকে রাখে কিংবা বিভিন্নভাবে কটুক্তি করে । এতে তার মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার কারনে তার মাথায় আতœহত্যার চিন্তা আসতে পারে। ডক্টর মোকাদ্দেম বলেন, এটা রোধ করতে হলে পারিবারিক গাইড লাইন, সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। সেক্্র এডুকেশন অবশ্যই বাধ্যতাামূলক করা উচিত। এজন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে।
আলোচিত ব্লগ
স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি
কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন
সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক
যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।
সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।
১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!
এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার
চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন