ডাস্টবিন শৌচাগারও ইজারা নিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা!
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর বাজারের ডাস্টবিনের জায়গা পরিত্যক্ত দেখিয়ে ইজারা নিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন। একইভাবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাজারের একমাত্র শৌচাগারটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে উপজেলা বাজার বণিক সমিতির নেতাদের দেওয়া অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আলফাডাঙ্গা বাজার বণিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুজ্জামান চাকলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনায়েতের নামে বাজারের ডাস্টবিনের জায়গাটি (প্রায় আধা শতাংশ) পরিত্যক্ত দেখিয়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জেনেছি, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৈয়েবুর রহমান ওরফে জুয়েল বাজারের শৌচাগারের জায়গাটি (প্রায় এক শতাংশ) ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি ব্যর্থ হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ইজারা নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।’ আরিফুজ্জামান চাকলাদার জানান, এনায়েত হোসেন অন্য এক লোকের মাধ্যমে ডাস্টবিনের ইজারা নেওয়া জায়গায় পাথর রেখেছেন। ফলে নির্দিষ্ট ওই জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা যায় না।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারটিতে প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ছয়-আট হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা বাজারে আসেন। প্রতিদিন বাজারে প্রচুর পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা জমা হয়। দুই মাস আগে বাজারের ময়লা ফেলার একমাত্র ডাস্টবিনের স্থানটি ইজারা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র ময়লা ফেলছেন। এতে বাজারের পরিবেশ নষ্ট হতে বসেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ময়লা পানি ও আবর্জনায় ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাজারে একটিমাত্র শৌচাগার রয়েছে। সেটিও ইজারা দেওয়া হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের দুর্ভোগে পড়তে হবে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন দাবি করেন, ‘আমি বাজারের কিছু জায়গা ইজারা নিয়েছি। কিন্তু সেটা ফাঁকা ছিল। ওখানে কোনো ডাস্টবিন ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি মিজান ও সম্পাদক জুয়েল বাথরুমের জায়গা ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর জন্য ব্যাবসায়ীরা আপত্তি জানাতে পারে। কিন্তু আমার ইজারা নেওয়া জায়গার ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।’
শৌচাগারের জায়গা ইজারা নেওয়ার জন্য আবেদন করার কথা স্বীকার করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৈয়েবুর রহমান ওরফে জুয়েল বলেন, ‘আগের ইউএনও খালিদ পারভেজ ডাস্টবিনের জায়গা ইজারা দিয়ে গেছেন। তাই আমরা শৌচাগারের জায়গাটি ইজারা চেয়েছি। তা ছাড়া শৌচাগারটি অত্যন্ত অপরিষ্কার থাকে। এলাকার চাল ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় বাথরুম চাইছেন না। আমরা ইউএনওর কাছে আবেদন করেছি। দেওয়া না দেওয়া তাঁর এখতিয়ার।’
কিন্তু বরকত আলী নামে এক চাল ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর আগে বাজার কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ওখানে বাথরুম বানিয়েছে। আমরা চাল ব্যবসায়ীরা কখনোই চাই না, এখান থেকে বাথরুম সরানো হোক। কিছু লোক বাথরুম ভেঙে জায়গা লিজ নিতে চাইছে, তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ আলফাডাঙ্গার ইউএনও এ এস এম ফেরদৌস জানান, নতুন শৌচাগার নির্মাণের পর যদি জায়গা অবশিষ্ট থাকে, তা ইজারা দেওয়া যেতে পারে।