somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক মতাদর্শ

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তাধারাটি অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেন ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করেন। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত "মানসী" কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার তথ্যপ্রমাণ ও পরবর্তীকালের বিভিন্ন বিবরণী থেকে জানা যায় যে রবীন্দ্রনাথ গদর ষড়যন্ত্রের কথা শুধু জানতেনই না, বরং এই ষড়যন্ত্রে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি মাসাতাকি ও প্রাক্তন প্রিমিয়ার ওকুমা শিগেনোবুর সাহায্যও প্রার্থনা করেছিলেন। অন্যদিকে ১৯২৫ সালের একটি প্রবন্ধে স্বদেশী আন্দোলনকে "চরকা-সংস্কৃতি" বলে বিদ্রুপ করে রবীন্দ্রনাথ কঠোর ভাষায় তার বিরোধিতা করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাঁর চোখে ছিল "আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলির রাজনৈতিক উপসর্গ"। এই কারণে বৈকল্পিক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি বৃহত্তর জনসাধারণের স্বনির্ভরতা ও বৌদ্ধিক উন্নতির প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। ভারতবাসীকে অন্ধ বিপ্লবের পন্থা ত্যাগ করে সত্যকারের উপযোগমূলক শিক্ষার পন্থাটিকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
এই ধরনের মতবাদ অনেককেই বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ১৯১৬ সালের শেষ দিকে সানফ্রানসিকোর একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল ভারতীয় চরমপন্থী রবীন্দ্রনাথকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ভূমিকা অবশ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা "চিত্ত যেথা ভয়শূন্য" ও গান "একলা চলো রে" রাজনৈতিক রচনা হিসেবে জনমানসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। "একলা চলো রে" গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল। গান্ধীজির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। অস্পৃশ্যদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের মধ্যে যে বিরোধের সূত্রপাত হয় তার সমাধানেও রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তাঁর "আমরণ" অনশন প্রত্যাহার করে নেন।

রবীন্দ্রনাথের "তোতাকাহিনী" গল্পের উপজীব্য একটি খাঁচায় আবদ্ধ পাখি। পাখিটিকে প্রতিদিন বলপূর্বক পুঁথির শুকনো পাতা খাওয়ানো হত। শেষ পর্যন্ত পাখিটি মারা যায়। এই গল্পে লেখক বিদ্রুপ করেন বিদ্যালয়ের মুখস্তসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থাকেই। ১৯১৭ সালের ১১ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা ভ্রমণের সময় এই সব চিন্তাধারণার ফলস্রুতিতে রবীন্দ্রনাথ এক নতুন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা করেন। শান্তিনিকেতনে তাঁর আশ্রমটিকে দেশ ও ভূগোলের গণ্ডীর বাইরে ভারত ও বিশ্বকে এক সূত্রে বাঁধার এক বিশ্ব পাঠকেন্দ্রে পরিণত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। বিশ্বভারতী নামাঙ্কিত তাঁর এই বিদ্যালয়ের শিলান্যাস হয় ১৯১৮ সালের ২২ অক্টোবর। ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয় এই বিদ্যালয়ের। এই বিদ্যালয়ে সনাতন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্রহ্মচর্য ও গুরুপ্রথা-র পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই বিদ্যালয়ের জন্য অর্থসংগ্রহ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি ঢেলে দেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালনে। শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবেও অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতেন তিনি। সকালে ছাত্রদের ক্লাস নিতেন এবং বিকেল ও সন্ধ্যায় তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা করতেন। ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×