somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার গ্রাম আমার স্কুল আমার আনন্দ।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই সেই স্কুল। যেখানে কেটেছে আমার দুরন্ত শৈশবের বেশির ভাগ সময়। স্কুল বন্ধ থাকলেও কাপড় পেঁচিয়ে বল বানিয়ে অথবা জাম্বুরা কে বল বানিয়ে কত অসংখ্যবার খেলেছি এই স্কুল মাঠে। শুধু ফুটবল কেন ? কত খেলা যে খেলেছি, দাড়িয়াবান্ধা, বৌছি, কাবাডি রাজার খবর কত খেলা যার কোন শেষ নেই। আমি যখনই স্কুলের মাঠে পা দিলাম সাথে সাথে মনে হল সারা স্কুল প্রাঙ্গন যেন আমায় স্বাগত জানালো। ফিক করে হেসে উঠলো মাঠের দূর্বাঘাস গুলি। সেই আম গাছ দুটি তেমনই আছে, বাঁকা চোরা।

আমি ঘুরে ঘুরে আমার শৈশবকে খুঁজতে লাগলাম। কোথাও পেলাম, কোথাও পেলাম না। আমি স্কুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে যেন অতীতে চলে গেলাম। ----------এইতো রইস স্যার বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন , -কলা ইংরেজী কী, তার বানান বল? কখনও বা জিজ্ঞাসা করছেন কুমির ইংরেজী কি, বানান বল? কখনও বা জিজ্ঞাসা করছেন একটা মুরগির দুইটা পা তবে আটটি মুরগীর কয়টি পা। কেউ কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে থাকে, কেউবা ভুল বলছে, আর আমি হাত তুলি। স্যার অত্যান্ত খুশি হয়ে আমাকে দেখিয়ে বলেন --বলতো বাবা, এদের কোন কথা মনে থাকে না, তুই একদিন জজ হবি।-- সেই থেকে মনে বীজ বপন করা হয়ে গেছে আমি বড় হয়ে জয়েজ (ছোট বেলায় আমি জজ্‌ উচ্চারন করতে পারতাম না, কেউ জিজ্ঞাসা করলেই বলতাম আমি বড় হয়ে জয়েজ হব।)হব।


একদিন স্যার আবিষ্কার করলেন আমি ABCD চিনি না লিখতেও পারিনা। সেদিন তার মুখটা রাগে আগুনের মত জ্বলছিল। আমাকে ক্লাশের বাইরে বারান্দায় নিয়ে এসে বসিয়ে বলেছিলেন --এখানে বসে বসে লিখ ABCD বড় হাতের ও ছোট হাতের লিখে শিখে তারপর বাড়ি যাবে। সেদিন সন্ধ্যার সময় সেই স্যারের হাত ধরে বাড়িতে এসেছি। তার আগে অবশ্যই অক্ষর চিনেছি।

আজ এই স্কুলে স্যারের মেয়ে মমতাজ শিক্ষিকা। আমি তাকে সালাম দিলাম। তিনি আমাকে স্কুল ঘুরে দেখার অনুমতি দিলেন। আমি স্কুলের বাচ্চাগুলিকে দেখলাম। তাদের পড়াশুনার অবস্থা দেখলাম। জিজ্ঞাস করবার আগেই শিক্ষিকা মমতাজ বললেন, বাচ্চাগুলির খাতা পেন্সিল কেনার পয়সা নেই। বইতো সরকার দেয় কিন্তু পেন্সিল খাতাতো ওদের জোগাড় করতে হয়। এদের পেটেই ভাত নেই তার আবার খাতা পেন্সিল। তবে এই বাচ্চাদের মধ্যে আছে কিছু অসম্ভব মেধবী । প্রতি বছর একজন না একজন বৃত্তি পায়। খুব ভাল লাগলো স্কুলের কথা শুনে। বার বারই মনে হলো বাড়িতে যাবার সময় প্রতিবার বাচ্চাদের দেখাই এই দেখ আমার স্কুল, অথচ কোনদিন নেমে দেখিনা আমার সেই আনন্দধাম। এই স্কুলে পড়েছি বলেই তো আমি ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে পেরেছি তাই তো আমি আজ এই পর্যন্ত এসে পৌঁছিয়েছি।


আমি ক্লাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম বাচ্চাদের জির্ণ পোশাক। কি জানি কি মনে হল। বাচ্চাদের বললাম কাল দর্জি আসবে সবাই স্কুলে উপস্থিত থাকবে তোমাদের জামা বানাবার জন্য মাপ নেয়া হবে। স্কুলের হেড মিস্ট্রেসকে বললাম আমি স্কুলের বাচ্চাদের সবাইকে কয়েকটি করে খাতা ও কলম দিতে চাই। এটা আমি প্রতি বছর বছরের প্রথমেই দিয়ে দেব। আর ওদেরকে প্রতি একবছর পর পর স্কুলে পরে আসবার জন্য একসেট করে জামা দিতে চাই। হেড মিস্ট্রেস বললেন স্কুলের গভর্নিং বর্ডির অনুমতি নিতে হবে। স্কুলের গভর্নিং বর্ডির মেম্বাররা আমার একসময়ের এই স্কুলের স্কুল ফ্রেন্ড। ওদের বলতেই ওরা উৎসাহ দিল।
স্কুলের গভর্নিং বর্ডির মেম্বার বাচ্চাদের পোষাক দিচ্ছে।

এরপর থেকে এইবার মিলে দুইবার হল দর্জি এসে বাচ্চাদের মাপ নিয়ে যায় । বাচ্চাদের যেদিন জামা ও পেন্সিল খাতা দেয়া হয় সেদিন স্কুলে শুধু বাচ্চারা নয় বাচ্চাদের সাথে সাথে বাচ্চাদের বাবা মায়েরাও উপস্থিত থাকে। সবাই হাসি মুখে বসে থাকে স্কুল মাঠের একপাশে। ছাত্র-ছাত্রীরা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ায়, ওরা জাতীয় সঙ্গীত গায়, প্যারেট করে, জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করে ওয়াদা পাঠ করে। আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনি।



এক এক করে নাম ধরে ডেকে ডেকে তাদের হাতে জ়ামা ও খাতা পেন্সিল তুলে দেয়া হয়। ওরা তা নিয়ে ওদের নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। সব শেষে স্কুলে উপস্থিত প্রতিটি বাচ্চাকে ও আভিভাবককে খোরমা দেয়া হয়। কি যে আনন্দ এসে ভর করে আমাদের শরীরে ও মনে তা ভাষায় প্রকাশের মত নয়। এখন ঐ স্কুলের সামনে রাস্তায় আমার গাড়ি দাঁড়ালেই বাচ্চাগুলি দৌড়ে আসে। কেউ কেউ চোখের পলকে কোথায় চলে যায়,আবার মুহুর্তেই ফিরে আসে হাতে একটি বিস্কিটের ঠোঙ্গা বা একটি পেয়ারা বা একটি কাঁচা আম নিয়ে বলে-- স্যার খান। আমি হা হা করে হাসি। সেই হাসিতে যোগদেয় আমার বাচ্চারা। ----কি যে বলিস, আমি আবার তোদের ক্লাশ নিলাম কবে যে স্যার বলিস। ওরা লজ্জা পায় না। সপ্রতিভ ভাবেই বলে ----তবে কি বলবো, আমাদের আপা বলে দিয়েছে স্যার বলতে। --আমি বলি চাচা বল। যদিও একই স্কুলের ছাত্র বড় ভাই হই, কিন্তু এই পিচ্চিরা এত ছোট যে ভাই ভাবতে আমারই কেমন যেন লাগে আমি ওদের কাছে চাচা ডাকটাই শুনতে চাই।

এখানে বলে রাখি আমরা আট ভাই বোন। প্রত্যেকেই এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রী। আমরা আট ভাই বোনই স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আমি যখন আমার এই পরিকল্পনার কথা তাদের জানালাম তখন ওরা বলল --তুমি একা কেন?আমরা আছি তোমার সাথে।

এটা আমাদের স্কুল। আমাদের এই স্কুলকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা দিন দিন বাড়ছে আর তা বাস্তবায়িত করতে আমরা আট ভাইবোনই সচেষ্ট।
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×