somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ (১ম পর্ব)

১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের পরিচয়
আল্লাহ্ প্রদত্ত ধর্মীয় বিধানকে মানুষের ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে সমাজ জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা (ঝবপঁষধৎরংস)। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ধর্মকে পরিত্যাগ করাই এর লক্ষ্য। ধর্মনিরপেক্ষতা (ঝবপঁষধৎরংস) মানব রচিত একটি জীবন দর্শন বা বিধান। এ জীবন দর্শনে বিশ্ব স্রষ্টার বিধান ও আদেশ-নিষেধ প্রত্যাখান করে মানব রচিত জীবনাচার পালন করাই এর উদ্দেশ্য। তবে ব্যক্তি জীবনে কেউ যদি আস্তিক বা আল্লাহতে বিশ্বাসী হয় তাহলে সে তার ব্যক্তি জীবনে ধর্মের কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র তৎসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে স্রষ্টার আইন বা ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকবে না। এ ক্ষেত্রে সমাজ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি যাবতীয় ব্যবস্থাপনা আল্লাহ ও ধর্মের কতৃত্ব মুক্ত বা স্বাধীন রাখার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ ব্যক্তিজীবনে কেউ ধর্মের মূলনীতি মানলে মানতেও পারে কিংবা না মানলেও রাষ্ট্রের কিছু করার নেই। তাদের মতে আল্লাহ এ বিশ্বটা শুধু সৃষ্টি করেছেন, বড়জোর তিনি এ জগতের নিয়ম-কানুন রচয়িতা। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে উন্নতি, শান্তি ও প্রগতির জন্য আল্লাহ্ বা রাসূলের কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা গোটা সমাজ জীবনকেই আল্লাহ এবং ধর্মের অনাবশ্যক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখাকে আদর্শ বলে মনে করে। তাদের মতে ধর্ম নিতান্তই একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। দু‘ বা ততোধিক মানুষের সকল প্রকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণে ধর্মকে অনধিকার প্রবেশ করতে দেয়া চলে না। কেননা সমাজ জীবনে ধর্মের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রগতি বিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার পরিচায়ক। আর রাষ্ট্রের মূলনীতির ক্ষেত্রে স্রষ্টার নির্দেশ থাকলেও অবস্থা ও পরিবেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তা মানা সম্ভব নয়। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের এ ধারনার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এখানে প্রশ্ন হলো, কোন দলিলের ভিত্তিতে তারা আল্লাহর ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত এলাকায় সীমাবদ্ধ করেন ? আল্লাহ কি কোথাও এ বিষয় কোন ইংগিত দিয়েছেন ? কোন নবীর কাছে এ বিষয় কোন ওহী নাযিল হয়েছে কি ? বরং আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, “তবে কি তারা আল্লাহর দীন ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করে? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু ইচ্ছা বা অনিচ্ছাক্রমে সবাই তাঁর হুকুমের আনুগত্য করেছে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (ইমরান-৮৩)। অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব-জাহান ও বিশ্ব-জাহানের মধ্যে যা কিছু আছে সবার দীন ও জীবন বিধানই হচ্ছে এ ইসলাম। এখন এ বিশ্ব-জাহানের মধ্যে অবস্থান করে তোমরা ইসলাম ছাড়া আর কোন্ জীবন বিধানের অনুসন্ধান করছো? এর পরেও যদি কেউ অন্য কিছু গ্রহণ করে তাহলে সে পথ ভ্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ্ পাক বলেন, “অতএব সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি রইলো? (সত্যকে ছেড়ে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ? (ইউনুছ-৩২)। এ আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, এমন কিছু বিভ্রান্তকারী ব্যক্তি বা দল আছে যারা লোকদেরকে সঠিক ইসলামের পথ থেকে টেনে নিয়ে ভুল পথের দিকে ফিরিযে দেয়। আল্লাহ যদি নিজে তাঁর আনুগত্যের দাবীকে মানুষের ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করে না থাকেন তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের নির্দেশেই যদি আল্লাহর হুকুমকে মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে উচ্ছেদ করা হয় তাহলে এটা কি কুফরী নয়? কোন মুসলমানের পক্ষে এধরনের নীতিমালা গ্রহণ করা কি বৈধ হতে পারে? কুরআনের ঘোষণা “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সঃ) কোন বিষয় নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে (ভিন্ন) কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-কে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।” (আহযাব-৩৬)।“আর যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-কে অমান্য করে এবং তাঁর নির্দিষ্ট সীমাসমূহ অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন, তন্মধ্যে সে সদা অবস্থ্ান করবে এবং তার জন্যে লাঞ্চণাপ্রদ শাস্তি রয়েছে।” (আন-নিসা-১৪)। এ থেকে সহজেই বুঝা যায় যে,ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ মুসলমানদের জন্যে ঈমান-আকীদাহ্ ধ্বংসকারী এক আত্মঘাতী ভ্রান্ত মতবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের প্রকার ভেদ
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদেরকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা চলে। এক শ্রেণীর পরিচয় খুব স্পষ্ট। তারা ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে প্রচার করে বটে, কিন্তু তাদের অনেকেরই ব্যক্তি জীবনে ধর্মের কোন গন্ধও পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে তারা ধর্মকে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় জিনিস বলে মনে করে, কিন্তু সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক সুবিধা ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনের তাকিদে ধর্মকে মৌখিক স্বীকৃতি দান করে মাত্র। দ্বিতীয় প্রকার তারা নামায, রোযা, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ, যিকির ইত্যাদি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে আদায় করে, কিন্তু সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলামী বিধানকে মেনে চলার কোন তাকিদই অনুভব করে না। আল্লাহর কিতাবকে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ না করে যারা শুধু ইসলামের কতিপয় অনুষ্ঠান নিয়েই সন্তুষ্ট, তাদের প্রতি কুরআন যে কঠোর সতর্ক বাণী উচ্ছারণ করেছে, তা যে কোন সত্যিকার মুসলমানের অন্তরকেই কাঁপিয়ে তুলবার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ পাক বলেন, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর ও কিছু অংশ অবিশ্বাস কর ? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে লাঞ্চনা ও অপমান ব্যতীত কিছুই নেই। আর পরকালে তাদেরকে ভয়ংকর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে বিষয়ে অমনোযোগী নন।” (বাকারাহ্-৮৫)।“আর যারা বলে আমরা কিছু বিশ্বাস করি আর কিছু প্রত্যাখ্যান করি এবং তারা এ মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করতে ইচ্ছা করে, প্রকৃতপক্ষে ওরাই অবিশ্বাসী, এবং আমি এ ধরনের অবিশ্বাসীদের জন্যে অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।” (নিসা-১৫০,১৫১)। ফলাফল যদি এই হয় তাহলে, কোন মুসলমানের পক্ষে কি ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ গ্রহণ করা উচিত?

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×